আবদুল আজিজ:
বিদ্যুৎ বিভাগের খুঁটির কারণে কক্সবাজার পৌরসভার ১২৯ কোটি টাকার ড্রেন সংস্কার প্রকল্পের কাজ আটকা পড়েছে। ইতিমধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ ড্রেন সংস্থারের কাজ সম্পন্ন হলেও রাস্তা সংস্কার কাজে এখনো হাত পড়েনি। ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে পৌরবাসি ও সৈকত ভ্রমনে আসা পর্যটকসহ সাধারণ মানুষ। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সমঝোতার মাধ্যমে খুব দ্রুত সময়ে উক্ত প্রকল্পের কাজ সহসা আলোর পথ দেখবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কক্সবাজার পৌরসভার ড্রেন সংস্কার প্রকল্পের জন্য ১২৯ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয় বিশ্বব্যাংক। এ প্রকল্পের কক্সবাজার পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে ৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে ড্রেন ও রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়। পৌর প্রশাসন ও পরিসেবা প্রকল্প (এমজিএসপি) আওতায় প্রকল্পের কাজ করছে ৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কক্সবাজার পৌর শহরের শহীদ স্বরণী, বিমানবন্দর সড়ক, মহাজেরপাড়া, বাহারছড়া গোলসত্ত্বর, বাদশাঘোনা, গোলদীঘিরপাড়া, জেলেপার্ক, কলাতলীসহ বিভিন্ন এলাকার ড্রেনিং ও রাস্তা সংস্কার কাজ শুরু করে পৌর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, উক্ত প্রকল্পের কাজ করার মাঝপথে বাধা হয়ে দাড়ায় কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিভাগের অন্তত আড়াই শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি। বিদ্যুৎ বিভাগ ও পৌর কর্তৃপক্ষের মধ্যে খুঁটি অপসারণ করার অর্থ নিয়ে রশি টানাটানির কারণে প্রকল্পের কাজ থমকে গেছে। ফলে কিছু এলাকায় ড্রেনের কাজ সম্পন্ন হলেও আবার কিছু এলাকায় কোন ধরণের কাজ শেষ না হওয়ায় নালা নর্দমার ময়লা ও কাঁদা পানি রাস্তায় এসে একাকার হয়ে পড়েছে। এতে করে পথচারি, পৌরবাসি ও কক্সবাজার সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা পড়েছে নানা দুর্ভোগে। কক্সবাজার শহরের প্রেসক্লাব মোড়, মহাজেরপাড়া, বাহারছড়া ও কলাতলী এলাকার অলিগতিতে রাস্তায় উঠে এসেছে এসব নোংরা পানি। পানি সরানোর কোন বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় কক্সবাজার প্রেসক্লাবে ঢুকে পড়েছে নোংরা পানি। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ ও পৌর কর্তৃপক্ষের সমঝোতা বৈঠকের মাধ্যমে আগামী এক মাসের মধ্যে বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণের মাধ্যমে ড্রেন সংস্কার কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
উক্ত প্রকল্পে নিয়োজিত সংস্কার কাজের ৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একটি হচ্ছে ‘এসএস ইন্টারন্যাশনাল’। উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার মোফাশ্বের হোসেন কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘আমাদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে বিদ্যুতের খুঁটি থাকায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অল্পের জন্য সংস্কার কাজ আটকে থাকায় নির্ধারিত সময়েও প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।’
কক্সবাজার পৌরসভার উপ-সহকারি প্রকৌশলী টিটন দাশ কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘বিশ্বব্যাংকের ১২৯ কোটি টাকার অর্থায়নে কক্সবাজার পৌরসভার অধীনে ৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে ড্রেন ও রাস্তা সংস্কার যথা নিয়মে শুরু করি। বর্তমানে উক্ত প্রকল্পের ড্রেনের শতকরা ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকী রয়েছে ৩০ শতাংশ কাজ। আর এই ৩০ শতাংশ কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের আড়াই শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি। এসব বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণে বিদ্যুৎ বিভাগ বেশী অর্থ দাবি করায় সংস্কার কাজ আটকে আছে।’
টিটন দাশ বলেন, ‘এমনিতে বিদ্যুৎ বিভাগে জনস্বার্থে আবেদনের প্রেক্ষিতে কোন খুঁটি সরানোর জন্য ৫/৮ হাজার টাকা চার্জ নেয়। কিন্তু, প্রকল্পের খুঁটি সরানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ কয়েক গুন টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চাচ্ছে। এটি প্রকল্পের বাজেটের চেয়ে অস্বাভাবিক। আমরা বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করেছি আমাদের প্রকল্পের সীমাবদ্ধতার মধ্যে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করতে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তা নাহলে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করে বুঝিয়ে দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে’।
কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিতরণ ও উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের গনি কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পৌরসভার ওই প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ করতে হবে। উক্ত প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারের যদি আমাদের সহযোগিতা চাই,তবে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এছাড়াও পৌর কর্তৃপক্ষ যথাযত অর্থ বরাদ্দ দিলে তা আমাদের মাধ্যমে করা সম্ভব। যদি আমরা টেন্ডারের মাধ্যমে করি তাহলে ঢাকা থেকে মালামাল নিয়ে আসা সহ নানা জটিলতায় প্রকল্পের কাজ দেরি হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজার পৌরসভার ‘এমজিএসপি’ প্রকল্পে যেসব বিদ্যুতের খুঁটি পড়েছে তা অপসারণের খরচ যথাযত নয়। এছাড়াও উক্ত প্রকল্পে কতটি খুঁটি পড়েছে আমাদের বোধগম্য নয়। আগামী সপ্তাহে একজন সার্ভেয়ারের মাধ্যমে জরিপ করে প্রকৃত তথ্য জানতে পারব। তবে আনুমানিক ২/৩শত খুঁটি হতে পারে। সম্প্রতি কক্সবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যানসহ পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।’
জানতে চাইলে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান রেখেছে। ইতিমধ্যে পৌর এলাকার ড্রেন সংস্কার প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে কিছু বিদ্যুতের খুঁটির কারণে কাজ আটকে রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে আমাদের সহযোগিতা করবে। তাই, আগামীতে বিদ্যুৎ বিভাগের সহযোগিতা পেলে চলতি মাসের জুন মাসে পুরো কাজের সমাপ্তি হবে বলে আশাবাদি।’
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.