এম. আজিজ রাসেল:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বলেছেন, আমি কক্সবাজারের সন্তান। শহরের কস্তুরাঘাট এলাকায় আমার বেড়ে উঠা। কিন্তু বেশিদিন এখানে থাকতে পারিনি। ওইসময় মেয়েদের পড়ালেখা করা অনেক কঠিন ছিল। আগে মৌলবাদীর আখড়া ছিল এখানে। সামাজিক পরিবেশ অনুকূলে ছিল না। অনেক কুসংস্কার ছিল।৷ তবু সব বাঁধা মাড়িয়ে চট্টগ্রামের খাস্তগীর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার জন্য পাড়ি জমায়। আমি চট্টগ্রামে পড়েও সংকোচ বোধ করিনি। কারণ এখানকার মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে চলাফেরা করেছে। সেসময় পারিবারিক চাপও ছিল অনেক। সামাজিক কারণে পরিবার আমাদের পুরোপুরি ছেড়ে দেননি। তবে পরিবার সবসময় বলতেন পজেটিভ হতে হবে। মামা-চাচাদের ভয় ও লজ্জায় একটাও প্রেম করতে পারিনি। তবুও দুঃখ নেই। আমার লক্ষ্য ছিল বড় হওয়ার। সাগরের ঢেউগুলোও যেন বলতো বড় হও, বড় হও। অবশেষে সকলের দোয়ায় অনেক বড় হয়েছি।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারী) সকালে মোটেল উপেলের জারা কনভেনশন হলে 'আমরা-৯৩ কক্সবাজার'র ২য় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শৈশবের স্মৃতিচারণ করে কৌতূহল নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারের মানুষের মন সমুদ্রের ন্যায় বিশাল। এখানে আগের মতো নেই কোন কিছু। সবকিছু বদলে গেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর বঙ্গবন্ধুর সোনার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তবে সোনার দেশ গঠনে দরকার সোনার মানুষের। তাই স্বাধীন দেশে ছেলেমেয়েদের সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে মেয়েদের সুশিক্ষিত করে তুলতে হবে। পড়াশোনা করলে ইয়াবাসহ সকল অপরাধ থেকে দুরে থাকবে সন্তানেরা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য কবি আদিল চৌধুরী ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আমিন আল পারভেজ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, বন্ধুত্বের বন্ধন চিরদিন। আমরা প্রচন্ড ব্যস্ত থাকি। এখানে এসে সবার উচ্ছ্বাস দেখে অতীতের কথা মনে পড়ে যায়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অপরাধের ছোবল থেকে নিরাপদ রাখতে হবে। তাই তাদের সুশিক্ষায় গড়ে তুলতে হবে। সমাজের খারাপের স্পর্শ থেকে তাদের বিরত রাখতে হবে। আমরা আপনাদের সেবক। সেবা করে যাবো। এ জন্য দরকার সবার আন্তরিক সহযোগিতা।
জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, আজকে প্রাণের এই স্ফূরণ সবাইকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। আজকে সবাই মন বাড়িয়ে কাছে এসেছে। এখনো সবার মাঝে তারুণ্য খেলে যাচ্ছে। মানব জীবনের সবচেয়ে পরম দায়িত্ব হলো এটাকে যাপন করা। এই যাপিত জীবন উপভোগ্য ও আনন্দময় হলেই জীবনের সার্থকতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন জীবনই প্রত্যাশা করেছিলেন।
'আমরা-৯৩ কক্সবাজার' এর আহবায়ক আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জাহেদুল আনোয়ার, সদস্য সচিব জেহাদ হাসান সম্রাট, যুগ্ম আহবায়ক যথাক্রমে এস,এম জাফর আলম রিটু, মো. গিয়াস উদ্দিন, মো. তমজিদুল আলম, আবুল কালাম ও চট্টগ্রামের বন্ধু শিপন চৌধুরী।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নুরুল আমিন হেলালী ও তাহসিনা জেসী।
এর সকালে '৯৩ বন্ধুত্বের বন্ধন...হৃদয়ে স্পন্দন' শ্লোগানকে ধারণ করে বের করা হয় বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা। পরে জাতীয় সংগীত, বেলুন ও শান্তির পায়রা বেলুন উড়িয়ে 'আমরা-৯৩ কক্সবাজার'-২১ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অতিথিরা। উদ্বোধন শেষে স্কুলের ন্যায় অনুষ্ঠিত হয় অ্যাসম্বেলী ক্লাস। এতে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীর ন্যায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় 'আমরা-৯৩ কক্সবাজার' এর বন্ধুরা।
'আমরা-৯৩ কক্সবাজার'র ২য় পুনর্মিলনী উপলক্ষে দিনব্যাপী বন্ধুরা মেতেছিল আড্ডা ও সেল্ফীবাজিতে। এসময় সবার সামনে ভেসে উঠে স্কুল জীবনের নানা স্মৃতি। অনেকেই এসময় আবেগময় হয়ে উঠে। কর্মব্যস্ততা ভুলে দিনটিতে সবাই জীবনের নানা সুখ-দুঃখ নিয়ে বিশদ আলোকপাত করতে দেখা যায়। এসময় ভেদাভেদ ভুলে সবার কণ্ঠে একই ধ্বনিতে উচ্চারিত হয় অকৃত্রিম বন্ধুত্বের জয়গান। বিকালে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আকর্ষণীয় র্যাফেল ড্র শেষে আগামীর সমৃদ্ধির প্রত্যাশায় বৃহৎ এই মহামিলন মেলার সমাপ্তি ঘটে।এবারের বিশাল আয়োজনে দেশের নানা প্রান্তের প্রায় ২ হাজার এসএসসি-৯৩ ব্যাচের বন্ধুরা অংশ নেন বলে জানান আয়োজকেরা।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.