স্বাস্থ্য ডেস্ক:
আঘাত লেগে দাঁত আংশিক ভেঙে যাওয়া, ভিতরে ঢুকে যাওয়া কিংবা সম্পূর্ণ দাঁত উঠে আসা খুবই প্রচলিত ঘটনা। ডেন্টাল ইমার্জেন্সি কেস হিসেবে আঘাতজনিত দন্ত-দুর্ঘটনার রোগী ডেন্টাল সার্জনগণ প্রায়শই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সাধারণত দাঁতে আঘাতজনিত দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রয়েছে টিউবওয়েল এর হাতলের সাথে আঘাত লাগা, সাইকেল চালানো বা খেলাধুলার সময় পড়ে গিয়ে আঘাত লাগা, মারামারি-সংঘর্ষের সময় আঘাত লাগা, শক্ত কিছু কামড় দিলে যেমন হাড়, ছোলা-বুট, পেয়ারা বা কোন শক্ত ফলের বিচি, ইত্যাদি কারণগুলো ছাড়াও বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনায়ও দাঁত ও চোয়াল পর্যন্ত ভেঙে যেতে বা ফাটল ধরতে পারে। অনেকেই এসময় বুঝতে পারেন না কি করবেন, যার কারণে হয়তো কালক্ষেপণ বা পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকার কারণে আঘাতপ্রাপ্ত দাঁতটির শেষ রক্ষা করা সম্ভব হয়না। এসব ক্ষেত্রে জরুরী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে পড়ে যাওয়া বা ভেঙে যাওয়া দাঁতটিকে রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে।
★কোন দাঁত যদি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আংশিক ভেঙে যায় তবে সেই অংশটি নিয়ে দ্রুত ডেন্টাল সার্জনের শরণাপন্ন হলে অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ চিকিৎসা (লাইট কিউর রেস্টোরেশন) এর মাধ্যমে আগের জায়গায় স্থাপন করা সম্ভব হয়। আর যদি সেটি না করা যায় তবুও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে দাঁতটিকে পুনরায় আগের মতো করা কসমেটিক ডেন্টিস্ট্রির একটি সফল চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত। এতে দাঁত তার আগের সৌন্দর্য ফিরে পায় এবং কার্যক্ষমতা ও বজায় থাকে। ভাঙা দাঁত চিকিৎসা না করিয়ে রেখে দিলে ধীরে ধীরে জিহ্বায় ও মাড়িতে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে যা কিনা মুখের ক্যানসারেও রুপ নিতে পারে ভবিষ্যতে।
★দুর্ঘটনাবশত কোন দাঁত নড়ে গেলেও তা রক্ষা করা সম্ভব।
স্থায়ী দাঁত হলে তার জন্য অতি দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। নড়ে যাওয়া দাঁতে ফাংশনাল স্প্লিন্টিং এর মাধ্যমে আবারো দাঁতটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়।
★ আঘাতের সাথে সাথে অনেক সময় কোন উল্লেখযোগ্য লক্ষণ দেখা না দিলেও বেশ কয়েকমাস বা বছর পর দাঁতটির রং কালচে বা গাঢ় বাদামী হয়ে যেতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে দাঁতের মজ্জার ভাইটালিটি বা জীবন হারিয়ে যাওয়া। এসময় মাড়িতে ইনফেকশন হয়ে ফুলে যাওয়া, পুজ হওয়া এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এ অবস্থা দেখলে দেরি না করে শীঘ্রই ডেন্টাল সার্জনের কাছে যেতে হবে। দাঁতের মৃত মজ্জা অপসারণ করে বিশেষ চিকিৎসার মাধ্যমে একেবারেই নতুনের মতো দাঁত পাওয়া সম্ভব।
★ দাঁত যদি সম্পূর্ণ খুলে চলে আসে তখন দাঁতটিকে বাঁচানোর সুযোগ অনেকটাই রোগীর কিছু দায়িত্বের উপর নির্ভর করে। শিশুরা আঘাত পেলে সেক্ষেত্রে দুধদাঁত হলে কোনো চিকিৎসার দরকার নেই। আঘাতের কারণে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়লে পরিষ্কার তুলা অথবা কাপড় দিয়ে ১০ মিনিটের মতো চেপে ধরে রাখতে হবে। ব্যথা থাকলে চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে পারবে। সংক্রমিত যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কুসুম গরম লবণপানি দিয়ে কুলকুচি করাতে হবে। যদি আঘাতে স্থায়ী দাঁত সম্পূর্ণ খুলে আসে তবে অবশ্যই সেটি গোড়ার দিকে স্পর্শ করা যাবেনা। মাটিতে পড়ে গিয়ে থাকলে কেবল আলতোভাবে পরিস্কার পানিতে এমনভাবে ধুতে হবে যেন দাঁতে লেগে থাকা কোন টিস্যু সরে না যায়। এরপর দাঁতটি পুনরায় দাঁতের সকেটে বসিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
★ সকেটে বসানো সম্ভব না হলে জিহ্বার নিচে, স্যালাইন পানি, ডাবের পানি কিংবা দুধের মধ্যে ভিজিয়ে অতিদ্রুত সম্ভব রোগীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
★ কিছু আঘাত অনেক বেশি মারাত্মক হতে পারে যেমন সড়ক দুর্ঘটনায় দাঁত, চোয়াল, নাক, মুখমন্ডলের হাড় ভেঙে যেতে পারে। রক্ত ক্ষরণ ছাড়াও মাড়ি ফুলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে একজন ওরাল & ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জন এর কাছে যেতে হবে অবশ্যই। কালক্ষেপণ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আঘাতের তীব্রতার উপর নির্ভর করে আধুনিক চিকিৎসার বিভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে।
*কিছু বিশেষ সতর্কতা : এসকল সমস্যায় সরাসরি একজন বিডিএস ডাক্তার দেখাতে হবে , যার বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন আছে। মনে রাখবেন "বিডিএস নয় তো দাঁতের ডাক্তার নয়"। পবিত্র কোরবানির ঈদ সবার ভাল কাটুক, তবে হাড় খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করবেন। ক্যাপ করা বা ফিলিং করা কোন দাঁত দিয়ে শক্ত হাড় কামড় দেবেন না। গোশত দাঁতের ফাঁকে আটকালে সুঁচ বা অন্য অবান্তর বস্তু দিয়ে খোঁচাখুচি করবেন না, বরং ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করুন। অবশ্যই দু'বেলা নিয়মিত ব্রাশ করবেন এবং মাউথওয়াশ ব্যবহার করবেন। সুস্থ দাঁত ও সুন্দর হাসির কামনা।
ডা.আঁখি আক্তার আন্নী
রেজিস্টার্ড ডেন্টাল সার্জন
বিএমডিসি -৯০৭৪
সূত্র:মানবজমিন।
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.