প্রিন্ট এর তারিখঃ অক্টোবর ৪, ২০২৫, ৩:১৫ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ২৩, ২০২১, ১০:১১ পি.এম
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অগ্নিকাণ্ডে বসতবাড়ী পুড়ে যাওয়া স্থানীয়রা অসহায়

দেলোয়ার হোসাইন টিসু, উখিয়া:
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে বসবাসরত কাঁটাতারের বাইরে ও ভেতরে শতাধিক স্থানীয় মানুষের বসতবাড়ী পুড়ে যাওয়ার স্থানীয় সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
২২ মার্চ (সোমবার) দুপুর ২ ঘটিকা নাগাদ বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ৮-ওয়েস্টে অনাকাঙ্ক্ষিত এক অগ্নি দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়,তা পরবর্তীতে ক্যাম্প ৯, ক্যাম্প ১০, ক্যাম্প ১১ সহ মোট চারটি ক্যাম্পের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। জানা যায়, বৃহৎ আকারে আগুন ছড়িয়ে গেলে বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ৮ ও ৯ পার্শ্ববর্তী বসবাসরত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে শিশু, নারী, পুরুষ ও বৃদ্ধ সহ শত শত স্থানীয় নাগরিক।
ক্ষতিগ্রস্ত সৈয়দ করিমের ছেলে মবিনুল ইসলাম (২৫) বলেন, কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে শরণার্থী শিবির গ্যাঁড়া দেওয়ার পর আমাদের ঘরবাড়ি কাঁটাতারের ভিতর পড়ে যায়। হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত অগ্নিকাণ্ডের ফলে সার্টিফিকেট, মূল্যবান কাগজপত্র, স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্র সহ বাড়ির সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই সাথে পুড়ে যাই আমার বড় ভাইয়ের নেওয়া ব্যাংক লোনের চার লক্ষ নগদ টাকা। যা নতুন বাড়ির নির্মাণ কাজের জন্য রাখা হয়েছিল। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ায় প্রাণ বাঁচাতে সবকিছু ছেড়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালিয়ে আসি। এই অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।
তাহেরা বেগম (৩০) নামের এক ঘর পুড়ে যাওয়া ভুক্তভোগীরা জানান, রোহিঙ্গাদের বাড়ি আমাদের বাড়ি প্রায়ই পাশাপাশি হওয়াই আমাদের স্থানীদের বাড়িতে আগুন চলে আসে। নিজের জীবন বাঁচাতে গিয়ে বাড়ির কোন কিছুই সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। মা বাবা ও ছেলেমেয়েদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য কিছু রইল না। সরকারের প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ স্থানীয় বসতবাড়ি থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝে যাতে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব সৃষ্টি করা হয়।
মো: মনু নামের একজন বলেন তিন মেয়ে ও দুই ছেলে ও নাতি-নাতনিসহ ১০ জনের পরিবার আমার। ঘরবাড়ি পুড়ে সবকিছু হারিয়ে কি করবো কোথায় যাবো কি খাব বুঝে উঠতে পারছিনা। রোহিঙ্গারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এনজিও সহযোগিতা করে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি আমাদের স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ যারা রয়েছে তাদের সব সুবিধার আওতাভুক্ত করা।
লায়লা বেগম ও বেলাল দম্পতি বলেন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় একসাথে আগুন লাগাই আমাদের ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে আমরা এখন কোথায় যাব। এই অগ্নিকাণ্ড একটি পরিকল্পিত বলে আমরা মনে করি। এই ঘাতক রোহিঙ্গা গোষ্ঠী থেকে আমাদের আলাদা করে রাখুন না হয় বিষ পান করিয়ে আমাদের মেরে ফেলুন।
বালুখালী ১ নং নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল আবছার চৌধুরী বলেন, সোমবার দুপুর ২টার দিকে ক্যাম্পে আগুন লাগার খবর শুনতে পাই। তাৎক্ষণিক ছুটে এসে দেখি আগুন বৃহৎ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। সরকারের প্রশাসন, দমকল বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় জনগণ ও আগুন নেভানোর কাজে অংশগ্রহণ করে। এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় শতের উপরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করে চেয়ারম্যান ও ইউএনও মহোদয় কে অবহিত এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমরা করব।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন এই অগ্নিকাণ্ডটি পরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে। এতে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি আমার স্থানীয় ৩০০ মত ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। কিভাবে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে তা সঠিকভাবে খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসন ও সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে যাদের বসতভিটা পুড়ে গেছে ২-৩ দিনের মধ্যে তালিকা জমা হলেই আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়দের বাড়ি নির্মাণের অর্থ ও টিন এবং ২ মাসের খাবার প্রদান করা হবে বলে নিশ্চিত করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মোঃ মোহসীন।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.