ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে নতুন করে ঘোষণা দেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ ধারা অনুযায়ী, এনবিআরের কয়েকটি শর্ত মেনে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ কর ও জরিমানা দিয়ে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করা যাবে। এই নিয়ম সব সময়ের জন্যই প্রযোজ্য।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মজিদ বলেন, বিশ্বের সব দেশেই অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার আইন আছে। বাংলাদেশেও এ আইন আছে। সেই আইনের শর্ত মেনে জরিমানা ও কর দিয়ে টাকা সাদা করতে হয়। এই সুযোগ যে কেউ নিতে পারে। মাঝেমধ্যে বাজেটে এর বাইরে বিশেষ সুযোগ দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। তবে এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হলে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা হয়। যারা নিয়মিত কর দেন তারাও কর দিতে অনুৎসাহিত হন।
ডেডলাইন ৩০ জুন
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আরও বলেন, যখনই বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়, তখনই তিনটি বিশেষ সুযোগ পান কালো টাকার মালিকরা। প্রথমত, কোনও জরিমানা দিতে হয় না। দ্বিতীয়ত, কম আয়কর দিয়েই টাকা সাদা করা যায়। গতবার মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তৃতীয়ত- অপ্রদর্শিত অর্থ নিয়ে সরকারের কোনও সংস্থা পরে আর কোনও প্রশ্ন করে না।
তিনি উল্লেখ করেন, এবার যেহেতু বাজেটে এ নিয়ে কোনও কথা হয়নি, সেহেতু কালো টাকার মালিকরা তিনটি সুবিধা এবার পাবেন না। অর্থাৎ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত যে কেউ তিনটি সুবিধাসহ অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করতে পারবেন।
উৎস জানতে চাইতে পারবে সরকার
এদিকে আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ ধারা অনুযায়ী এলাকাভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে ফ্ল্যাট কিনে কালো টাকা সাদা করা যাবে। তবে অপ্রকাশিত আয়ের মাধ্যমে এলাকা এবং সম্পত্তির অবস্থানের ওপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর প্রদানের মাধ্যমে বাড়ি, জমি, ভবন বা ফ্ল্যাট কেনার যে সুযোগ, তা বিদ্যমান থাকবে। কিন্তু সরকারি সংস্থা তহবিলের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারবে।
এক্ষেত্রে এনবিআর শর্ত অনুযায়ী, অপরাধ কার্যক্রমের মাধ্যমে এবং অবৈধ উৎস থেকে অর্জিত অর্থ সাদা করা যাবে না। শিল্পখাতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগও থাকছে।
প্রসঙ্গত, গতবছর অর্থ আইন-২০২০ এর মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ বিষয়ে দুটি ধারা সংযোজন করা হয়। যাতে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত অপ্রদর্শিত জমি ও ফ্ল্যাট বর্গমিটার প্রতি এবং অপ্রদর্শিত টাকা, সঞ্চয়পত্র এবং যে কোনও সিকিউরিটিজ ১০ শতাংশ কর দিয়ে প্রদর্শন করলে কোনও কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করবে না।
অন্যদিকে একই হারে কর দিয়ে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ করেও টাকা সাদা করা যাবে। কিন্তু এ দুটি ধারা অর্থবিল ২০২১-এ রাখা হয়নি। তবে আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ ধারা অনুযায়ী, প্রযোজ্য করের সঙ্গে ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যাবে।
এর বাইরে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করলে ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করা যাবে এবং বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ডের বন্ডে ১০ শতাংশ কর দিয়ে বিনিয়োগ করা যাবে।
প্রসঙ্গত, গতবছর অর্থমন্ত্রী বাজেটে ঢালাওভাবে টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় তীব্র সমালোচনা হয়েছিল। যে কারণে এসব সুযোগ আগামীতে থাকছে কিনা এ বিষয়ে আরও ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা অভিমত রয়েছে। কেউ বলছেন, এ সুযোগ থাকা উচিত নয়, আবার কেউ বলছেন সুযোগ রাখা উচিত। তাই এ মুহূর্তে কিছু বলছি না। আরও কিছু দিন ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত দেবো, এ সুযোগ রাখা হবে কী হবে না।’
শুক্রবার (৪ জুন) বিকালে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব তথ্য জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে সব তথ্য আসেনি। অপ্রদর্শিত অর্থ মূলধারায় ফিরিয়ে আনার যে সুযোগ আমরা দিয়েছিলাম, সেই সুযোগ কতজন নিলো, সে সম্পর্কে আমার কাছে শতভাগ তথ্য এসে পৌঁছায়নি।’
উল্লেখ্য, উৎস সম্পর্কে কোনও জিজ্ঞাসা ছাড়াই চলতি অর্থবছরে সরকার কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দিয়েছিল, ২০২১-২২ অর্থবছরে সেটা থাকছে কিনা সে সম্পর্কে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী কিছুই বলেননি।
টাকা সাদা করার রেকর্ড
জানা গেছে, কালো টাকা বৈধকরণের সুযোগে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে প্রায় ১৪ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা সাদা করার রেকর্ড হয়েছে, এই মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হবে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত করদাতাদের সম্পত্তির প্রতি বর্গফুটের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে কর প্রদানের মাধ্যমে বাড়ি, জমি, ভবন বা ফ্ল্যাটসহ যেকোনও প্রকারের অপ্রকাশিত সম্পত্তি প্রকাশ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। অনেকেই ১০ শতাংশ কর প্রদান করে অপ্রকাশিত নগদ, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য কোনও সুরক্ষা সম্পত্তি প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছিল। কমপক্ষে এক বছরের জন্য বিনিয়োগ মূল্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর প্রদান করে এবং তাদের ট্যাক্স রিটার্নে বিনিয়োগ দেখানোর মাধ্যমে জনগণকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ১০ মাসে অপ্রকাশিত সম্পদের ওপরে ১৪ হাজার ৪৫৯ দশমিক চার কোটি টাকা বৈধ করা হয়েছে। এই সময়ে ১০ হাজার ৪০৪ জন লোক সম্পদ বৈধ করার জন্য মোট এক হাজার ৪৪৫ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা কর দিয়েছেন।
তথ্য অনুসারে, ১৯৭১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অপ্রকাশিত আয়ের প্রায় ৩০ হাজার ৮২৪ কোটি টাকার হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে, যা থেকে প্রায় তিন হাজার ৯০০ কোটি টাকা কর আদায় হয়েছে।
এদিকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থের ঘোষণা নতুন বাজেটে না দেওয়াতে সাধুবাদ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পাশাপাশি সৎ করদাতাদের প্রতি বৈষম্যমূলক ও অসাংবিধানিক এই সুবিধা যেন অন্য কোনও উপায়ে আয়কর অধ্যাদেশে রাখা না হয় সে বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সংস্থাটি।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.