এম.এ আজিজ রাসেল:
টানা ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। চলমান এই নিষিদ্ধ সময়ের ২৭ দিন অতিবাহিত হয়েছে। অবশিষ্ট রয়েছে আরও ৩৬ দিন। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলেরা সম্পূর্ণভাবে বেকার হয়ে আছে। ফলে পরিবার—পরিজন চরম অভাবের মধ্যে দিনাতিপাত করছে তারা। অনাহারে—অর্ধাহারে কাটছে তাদের কষ্টের দিন। কেউ কারও খবর নিতে পারছে না। সব মিলে জেলে পল্লীতে বিরাজ করছে নিরব দুর্ভিক্ষ। জেলে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে এই তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরের মাছে প্রজনন রক্ষায় টানা ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। গত ২০ মে থেকে এই নিষিদ্ধ সময় শুরু হয়েছে। শেষ হবে আগামী ২৩ জুলাই। মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার পর এই মাছ পেশার উপর নির্ভরশীল কক্সবাজারের লক্ষাধিক জেলে সম্পূর্ণ বেকার অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে নিবন্ধিত প্রায় সাড়ে ৬৩ হাজার ১৯৩ জন জেলে সরকারি সহায়তা হিসেবে পেয়েছে। সহায়তার মধ্যে রয়েছে ৫৬ কেজি চাল সাথে স্বল্প পরিমাণ অন্যান্য সরঞ্জাম। অন্যদিকে আরও হাজার হাজার জেলে পায়নি সহায়তা। জেলেদের যে পরিমাণ চাল ও সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে তা একটি জেলে পরিবারের জন্য মাত্র ১ মাসের খাবার। অভিযোগ রয়েছে অনেক স্থানে প্রকৃত জেলেরা সহায়তা পায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, কক্সবাজার সদর ও টেকনাফসহ বিভিন্ন এলাকার লক্ষাধিক মানুষ জেলে পেশার সাথে জড়িত। এ নিয়ে চলে তাদের পুরো সংসার। টানা ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ হওয়া তাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে অর্থাভাবে তাদের পরিবারের দিন কাটছে চরম কষ্টে।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় লক্ষাধিক জেলে থাকলেও নিবন্ধিত হয়েছে ৬৩ হাজার ১৯৩ জন। তবে এখনো অনেকে নিবন্ধিত হতে পারেনি। সরকারিভাবে দেওয়া সহায়তায় এক মাস কোন রকম চলা যায়। বাকি দিনগুলো অনাহারে কাটাতে হয় জেলেদের। তাছাড়া মৎস্য ব্যবসার সাথে জড়িত সকলেই এখন কষ্টে দিনাতিপাত করছে।
কক্সবাজার পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডেও জেলে নেজাম উদ্দিন জানান, তিনি জন্মগতভাবে জেলে পেশার সাথে জড়িত। তার সাত সদস্যের পরিবারে তিনি একমাত্র উপার্জক। করোনা মহামারি আর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় তার পরিবার চলছে নিদারুণ কষ্টে। সরকারি—বেসরকারি কোন রকম সাহায্য পাননি তিনি। জেলে কার্ডের আবেদন করেও কপালে জুটেনি।
মাঝেরঘাট এলাকার জেলে জাফর আলম জানান, দীর্ঘদিন দিন ধরে তিনি জেলে পেশার সাথে জড়িত। পরিবারের একমাত্র ভরসা তিনিই। ৬৫দিনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ হওয়াতে তার পরিবারে দুর্দিন নেমে এসেছে। খেয়ে না খেয়ে ২৭ দিনের অতিবাহিত করেছেন। আরও ৩৬ দিনের মতো বাকি আছে কিভাবে পরিবারের খাবার জোগাড় হবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
জানা যায়, কক্সবাজার পৌরসভার ১নং, ২নং, ৪নং, ৫নং ওয়ার্ডের ৪০ শতাংশ মানুষ মৎস্য পেশার সাথে জড়িত। তারা জন্মগতভাবে এই পেশার সাথে জড়িয়ে যায়। অভিজ্ঞতা না থাকায় অন্য কোন পেশায় যাওয়াও তাদের জন্য দুস্কর। তাই সাগরে যাওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।
কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর শাহেনা আক্তার পাখি জানান, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীসহ বিভিন্ন এলাকার জেলেরা এসে কক্সবাজার পৌরসভার ১নং এবং ২নং ওয়ার্ডের বসবাস করছেন। এই দুই এলাকা জেলে পল্লী হিসেবে সমাদৃত। মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হলে সবাই বেকার হয়ে পড়ে। এতে অর্থাভাবে নিরবেই অনাহারে—অর্ধাহারে দিন কাটে তাদের।
মোহাম্মদ আরজু নামে এক জেলের অভিযোগ, মৎস্য পেশায় জড়িত নেই এমন ব্যক্তি সহায়তা কার্ড পেয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে রিকসা চালক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার লোক।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস,এম খালেকুজ্জামান বলেন, জেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৬৩ হাজার ১৯৩ জন। যা গতবছর ছিল ৪৮ হাজার ৩৯৩ জন। বর্তমানে ৮ উপজেলায় ৬৩ হাজার ১৯৩ জনকে ৫৬ কেজি করে চাল ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয়েছে। বর্তমানে নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে ৩৬ দিন রয়েছে। নিবন্ধন তালিকায় কেউ বাদ গেলে তিনি স্ব স্ব মৎস্য অফিসে গিয়ে ফরম পূরণ করার আহবান জানান।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.