বার্তা পরিবেশক:
কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদ ইউনিয়নের হাঁসের দীঘি এলাকায় এক ব্যক্তির দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ভোগদখলে থাকা জমি ও বসত বাড়ী সংঘবদ্ধ চক্র কর্তৃক হামলা চালিয়ে জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে।এ ঘটনায় গত ১৮ জুন প্রধান অভিযুক্ত দখলদার মোহাম্মদ ইসমাঈলসহ ১৩ জনকে আসামী করে ঈদগাঁও থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ভূক্তভোগী নেয়ামত উল্লাহ’র স্ত্রী নাহিদা ইসরাত দিবা।নিয়ামত উল্লাহ ইসলামাবাদ ইউনিয়নের হাঁসের দিঘী এলাকার মৃত মোহাম্মদ শফিউল্লাহ’র ছেলে।
আসামীরা হল, ঈদগাঁও ইউনিয়নের জাগির পাড়ার মৃত মো. শফির ছেলে মোহাম্মদ ইসমাঈল ওরফে বার্মাইয়া ইসমাঈল, ইসলামাবাদ ইউনিয়নের খোদাইবাড়ী এলাকার আমির হামজার ছেলে শাহাব উদ্দিন, একই ইউনিয়নের বোয়ালখালী এরকার ওমর মিয়ার ছেলে মো. ইব্রাহিম, ভোলাইয়া মৌলভীর ছেলে শামশুল আলম, খোদাইবাড়ী এলাকার মৃত নুরুল হক ফকিরের ছেলে সোনা মিয়া, মৃত জাফর আলম কোম্পানীর ছেলে শাহ নেওয়াজ শাহীন, মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে হুমায়ুন পারভেজ লিটন, মৃত আনু সওদাগর ওরফে বাইট্টা আনুর ছেলে নুরুল হুদা, চট্টগ্রামের রাইজান উপজেলার গহিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা বর্তমানে ইসলামাবাদের ইউছুপেরখীল এলাকায় বসবাসকারি মৃত আনোয়ার খানের ছেলে জাহেদুল ইসলাম খান, ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ওয়াহেদের পাড়ার মৃত সোলতান আহমদের ছেলে মো, সেলিম উল্লাহ ওয়াহেদী, ঈদগাঁও ইউনিয়নের জাগির পাড়ার মোহাম্মদ ইসমাঈলের ছেলে মো. নওশাদ, ইসলামাবাদ ইউনিয়নের খোদাইবাড়ী এলাকার মৃত নুরুল হক ফকিরের ছেলে মো. বাবুইয়া ও অলিয়াবাদ এলাকার মো. মমতাজ ওরফে নুন মমতাজের ছেলে আবু তাহের সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জন।
ভূক্তভোগী নিয়ামত উল্লাহ বলেন, কক্সবাজার সদরের ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ঈদগাঁও মৌজার হাঁসের দিঘী এলাকায় আরএস-১৯৭৬ দাগের এবং আরএস-১৩৫৪ নম্বর খতিয়ানভূক্ত ৫.৩৯ একর জায়গা ১৯৬৪/১৯৬৫ সালের ৭৮৫ নম্বর সার্টিফিকেট মামলার অনুকূলে ১৭৫ টাকায় নিলামে খরিদ করেন জালালাবাদ ইউনিয়নের তৈয়ব উল্লাহ ফরাজী নামের এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পর ছেলে মমতাজুল হক ফরাজীর নামে ৩৭/১৯৯৮ ইং মামলা মূলে ৪.৪০ একর জায়গা বিএস খতিয়ানে নথিভূক্ত হয়। যার বিএস দাগ-১৯৭৬ ও বিএস-১/৩১৫১ নম্বর খতিয়ান।
এরই মধ্যে বিগত ২০০৫ সালে বিএস-১৯৭৬ দাগের ৫.৩৯ একর জমির মধ্যে মমতাজুল হক ফরাজীর নামে বিএস খতিয়ান বহির্ভূত থাকা ৯৯ শতক অকৃষি খাস জমি মৌখিকভাবে ভোগদখলের জন্য বুঝিয়ে দেন নিয়ামত উল্লাহকে। এরপর নিয়ামত উল্লাহ ভোগদখলে নেয়া উক্ত জমিতে ফলজ, বনজ ও ভেষজ গাছের বাগান এবং বিভিন্ন গাছপালার নার্সারী গড়ে তোলার পাশাপাশি বসত বাড়ী নির্মাণ করেন। পরিবার নিয়ে উক্ত জমিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন।
অন্যদিকে বিগত ২০০৬ সালে ব্যাংক ঋণের কারণে বিশেষ প্রয়োজন দেখা দেয়ায় মোহাম্মদ ইসমাঈলের নিকট ১৬০ শতক পুকুর শ্রেণির জমি রেজিস্ট্রি মূলে বিক্রয় করেন তৈয়ব ঊল্লাহ ফরাজী। যা বিগত ১৯৯৮ সালে মমতাজুল হক ফরাজীর নামের ঈদগাঁও মৌজার বিএস-১৯৭৬ দাগের বিএস খতিয়ানে নথিভূক্ত হওয়া ৪.৪০ একর জমিরই অংশ-বিশেষ। উল্লেখিত জমি নিয়ামত উল্লাহ’র জমির লাগোয়া হওয়ায় লোভের বশীভূত হয়ে মোহাম্মদ ইসমাঈল এখন জবরদখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
ভূক্তভোগী নিয়ামত অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে জমির উচ্চমূল্য হওয়ায় দীর্ঘদিন তার জায়গা ও বসত বাড়ী দখলের জন্য ইসমাঈল নানা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ১৫ জুন রাতে নিয়ামত উল্লাহ পারিবারিক বিশেষ কাজে কক্সবাজার শহরে অবস্থান করছিলেন। রাতের খাবার খেয়ে তার স্ত্রী ও সন্তানরা ঘুমিয়ে পড়েন। পাশের কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন নিয়ামতের চাচা ছৈয়দ আলম।
“ রাত আনুমানিক ২ টার দিকে মোহাম্মদ ইসমাঈলের নেতৃত্বে একদল দূর্বৃত্ত তার বাড়ীতে হামলে পড়ে। দূর্বৃত্তরা আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে নিয়ামতের বসত ভিটার বিভিন্ন গাছের চারা কর্তন, বাড়ীর দরজা-জানালা ভেঙ্গে অনাধিকার প্রবেশ করে। এসময় বাধা দিলে নারীসহ পরিবারের সদস্যদের উপর দূর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে মারধর করে। এক পর্যায়ে দূর্বৃত্তরা বাড়ীর আসবাবপত্র তছনছ করার পাশাপাশি আলমিরা ভেঙ্গে ৫ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার, মূল্যবান নথিপত্র ও আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এসময় দূর্বৃত্তরা শিশুসহ পরিবারের সদস্যদের বাড়ী থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে দেয়। ”
ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অভিযোগে বলেন, “ দূর্বত্তদের হামলার খবরটি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে অবহিত করা হলে ঈদগাঁও থানার এসআই মো. শামীম ও এসআই মো. মিরাজের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এতে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্য দূর্বৃত্তরা পালিয়ে গেলেও মোহাম্মদ ইসমাঈল দখলকৃত বাড়ীর ভিতরেই অবস্থান করেন। এক পর্যায়ে দখলদার ইসমাঈলকেও বের করে পুলিশ ঘরটি তালাবদ্ধ করে। পরে উভয়পক্ষকে পরদিন স্ব-স্ব দলিল ও কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসার পরামর্শ দিয়ে তালাবদ্ধ ঘরের চাবি স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুর শুক্কুরের কাছে জমা দেন। এতে রাতে গভীর আঁধারে ৩ শিশু সন্তানসহ নিয়ামত উল্লাহ স্ত্রী নাহিদা ইসরাত দিবা খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করেন। ”
“ এ ঘটনার আধা-ঘন্টা পর পুলিশ মোবাইল ফোনে অজ্ঞাত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তালাবদ্ধ ঘরের চাবিটি স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছ থেকে পুনরায় অবৈধ দখলদার মোহাম্মদ ইসমাঈলের হাতে তুলে দেন। এতে পুলিশের যোগসাজশে ইসমাঈল বাড়ীসহ বসত ভিটাটি আবারো দখলে নেয়। ”
এব্যাপারে ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুর শুক্কুর বলেন, ঘটনার দিন রাতে ঈদগাঁও থানা পুলিশের এসআই শামীমের মোবাইল ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এসময় নিয়ামত উল্লাহ’র দখলকৃত তালাবদ্ধ ঘরের চাবি তার নিকট তুলে দেন। এক পর্যায়ে আধা-ঘন্টা পর পুলিশ তার কাছ থেকে চাবি নিয়ে যায়। এরপর কি ঘটেছে তার জানা নেই।
নিয়ামত উল্লাহ জানান, ঘটনার ব্যাপারে গত ১৬ জুন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। পরে গত ১৮ জুন তার স্ত্রী নাহিদা ইসরাত দিবা বাদী হয়ে প্রধান দখলদার মোহাম্মদ ইসমাঈলসহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জনকে আসামী করে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর থেকে অবৈধ দখলদার চাঁদাবাজী ও বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় আসামী করাসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকী দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ভূক্তভোগী এ ব্যক্তির।তবে ঘটনার ব্যাপারে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করেন তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই মো. শামীম।শামীম বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে মামলা নথিভূক্ত করা হবে।
এব্যাপারে অভিযুক্ত ইসমাইল জানান, আমি বিদেশী ছিলাম। নিয়ামত উল্লাহকে আমি পাহারাদার হিসাবে রেখেছিলাম। কিন্তু, এখন দেখছি উল্টো আমার জমির মালিকানা দাবি করছে সে।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.