ইউসুফ আরমান:
সারা দেশ জুড়ে জমির মালিকানা দখল-বেদখলের বিড়ম্বনা অতঃপর দাঙ্গা হাঙ্গামা-খুন সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন বিষফোড়ার যন্ত্রণা মানুষকে দিনেরাতে ঘুমাতে দেয় না, কাজ কর্মে বাধা তৈরি করে, বাংলাদেশের জমির মালিকানা বিরোধের বিষয়টি ঠিক তেমনি। দেশের মোট জনসংখ্যার ৫ ভাগের ২ ভাগ মানুষ জমির মালিকানা বিরোধের বিষফোড়া নিয়ে দিন কাটায়। কারো বিরোধ মেটে তো, অন্য কারো বিরোধ নতুন করে শুরু হয়।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশে ভূমি জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়। আশির দশকের শেষ দিকে এই ভূমি জরিপ কার্যক্রমের সমাপ্তি ও চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকে শুরু হয় সাধারণ মানুষের এক নতুন ভোগান্তি। পৈতৃক সম্পত্তি ও ভিটামাটি নিয়ে জটিলতা। কোনো ধরনের কারণ ছাড়া তথ্য-উপাত্ত সংযোজন না করে সাধারণ মানুষের জমি সরকারের নামে খাস খতিয়ানভুক্ত করা হয়, আবার একজনের জমি অন্যজনের নামে জরিপ করা হয়। এই নিয়ে আদালতে আদালতে মামলা, মানুষের হয়রানির শেষ নেই। বর্তমানে দেশে ভূমি জরিপ সংক্রান্ত ৫ লাখের বেশি মামলা ঝুলে আছে।
কেবল জমির বিরোধ কে কেন্দ্র করে দেশের ৭০ শতাংশ ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়। জমি মালিকানা শনাক্তে সিএস, আরএস, এসএ এবং বিএস খতিয়ান রয়েছে। এসব খতিয়ানের মধ্যে সর্বশেষ করা বিএস ভুলেভরা। একজনের জমি রেকর্ড হয়েছে আরেক জনের নামে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মালিকের নাম ও জমির পরিমাণ ভুল উল্লেখ করা হয়েছে। কোথাও কোথাও আবার জমির দাগ নাম্বারও ভুলভাবে রেকর্ড করা হয়েছে। ফলে খতিয়ানে ভুল থাকায় জমি দখল-বেদখল এবং কেনা-বেচায় নানা রকম জটিলতা দেখা দিয়েছে। জমি মালিকদের অন্তহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে । কিন্তু এসব জটিলতা নিরসনে সরকার ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও পদে পদে রয়েছে বিড়ম্বনা। নানা প্রকার হয়রানিতে দিশাহারা ভূমি মালিকরা। ভুল ঠিক করতে লাখ লাখ রেকর্ড সংশোধনের মামলাও চলমান। তবে এসব মোকদ্দমা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ঝুলে আছে যুগের পর যুগ ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালে। আদালতের হস্তক্ষেপের ক্ষমতা ও কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয়হীনতা বিদ্যমান।
বর্তমান সরকার সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে বর্তমান সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে জনকল্যাণমূলক বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মুজিববর্ষে সাধারণ মানুষের জন্য বিশেষ উপহার হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত। যে সিদ্ধান্তের কারণে দ্রুত নিষ্পত্তি হবে ভূমি জরিপ সংক্রান্ত বিরোধ। ভূমি জরিপ সংক্রান্ত জটিলতায় দেশের সাধারণ মানুষের অর্থ-শ্রম-ভোগান্তির পাশাপাশি মানসিক যন্ত্রণাও লাঘব হবে। জমি দখল নিয়ে মানুষের হয়রানি-ভোগান্তি অতঃপর মারামারি ও খুনের ঘটনাও ঘটে যাচ্ছে। সেহেতু জমির বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি সংক্রান্তে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের কার্যপরিধি বৃদ্ধি করতে হবে।
ভূমি জরিপ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে আন্তরিক হন, তাহলে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ খুব উপকৃত হবে। শুধু যে সাধারণ মানুষের উপকার হবে তা নয়, এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ব্যক্তি, সরকার বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি থেকেও পরিত্রাণ লাভ করবে।
আমাদের প্রত্যাশা, মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার দেশের সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ও ভূমি জরিপ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর করে পৈতৃক সম্পদ নিয়ে ভুক্তভোগী মানুষের কষ্ট লাঘব ত্বরান্বিত করবেন।
ইউসুফ আরমান, কলামিষ্ট ও সাহিত্যিক|
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.