ধর্ম ডেস্ক:
অনেককে লক্ষ্য করি সন্তুষ্টিতেইযে, বাবা দিবস বা মা দিবস আসলেই তারা বাবা-মার খোঁজ খবর নেন, শুভেচ্ছা জানান। অথচ বাবা-মাকে ভালোবাসার জন্য নিদৃষ্ট কোন দিন বা সময় থাকতে পারে না। সন্তানের জন্য প্রতিটি দিনই পিতা-মাতা দিবস।
বাবা-মায়ের মাধ্যমে মানুষের এ পৃথিবীতে আগমন। অতএব পিতা-মাতার তুল্য হিতৈষী, পরম শ্রদ্ধাভাজন গুরু আর কেউ নেই। পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালন যে কত গুরুত্বপূর্ণ, তার প্রমাণ মানব জীবনের অখণ্ডনীয়-দলীল পবিত্র কোরআন এবং মানব আদর্শের প্রতীক বিশ্বনবী (সা.)-এর হাদিস থেকে প্রমাণিত।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন ‘আর তোমার প্রভু নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারও ইবাদত করবে না। মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করবে। তোমার জীবদ্দশায় যদি তাদের যে কোনো একজন বা উভয়জন বার্ধক্যে উপনীত হন তখন (তাদের কোনো কথায় বা আচরণে বিরক্ত হয়ে) উফ শব্দটিও বলো না। তাদের ধমক দিও না। বরং তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করো। তাদের সামনে দয়াবনত হয়ে বিনয়ের বাহু বিছিয়ে দাও। আর তাদের জন্য এ বলে দোয়া করো, হে প্রভু আপনি তাদের প্রতি দয়া করুন যেমন তারা আমাকে দয়া দিয়ে লালন পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৩-২৪)।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা তিনবার বললেন, তার নাসিকা ধুলোয় ধুসরিত হোক! সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কার ব্যাপারে এসব বদ দোয়া করছেন? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা যে কোনো একজনকে বার্ধক্যে উপনীত অবস্থায় পেল তবুও সে (তাদের খেদমত করে) জান্নাতের পথ সুগম করতে পারল না’ (মুসলিম : ২৫৫১)।
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সন্তানের জীবনে মা বাবার প্রভাব সর্বাপেক্ষা বেশি। সন্তান জন্মাবার পূর্ব থেকেই বাবা-মা সার্বিক প্রস্তুতি নেন।
সন্তানকে বড় করে তোলার জন্য তাদের এক শাশ্বত কামনা ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।’ সন্তানের জন্য সার্বিক ক্ষেত্রেই বাবা-মার উৎকন্ঠার শেষ নেই! এজন্যই বাবা-মার প্রতি সন্তানের সীমাহীন কর্তব্য। তাদের ঋণ শোধের নয়। তাদের পূর্ণ সন্তুষ্টির দিকে সর্বদা মনোযোগ দিতে হবে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি’ (সুরা আন কাবুত, আয়াত: ৮)।
হাদিসে রয়েছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে খোদার সন্তুষ্টি এবং পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে খোদার অসন্তুষ্টি নিহিত’ (তিরমিজি)।
এমনকি পিতা-মাতা বিধর্মী হলেও তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার বজায় রাখতে হবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলেন, কুরাইশদের সঙ্গে সন্ধির দিনে আমার মা মুশরিক অবস্থায় আমার কাছে এলেন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেসা করলাম, আমি কি তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করব? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, সদ্ব্যবহার কর, (বোখারি)।
এ কারণেই হাদিসে এসেছে, হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)কে জিজ্ঞাসা করলেন, সন্তানের ওপর পিতা-মাতার হক কী? উত্তরে বিশ্বনবী (সা.) বললেন, তারা উভয়েই তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম। অর্থাৎ যারা পিতামাতার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে, তারা সফলকাম। আর যারা তাদের অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে তাদের জন্য লাঞ্ছনা।
তাই আসুন, আমরা আমাদের পিতামাতার সেবায় নিয়োজিত হই আর তাদের জন্য সব সময় দোয়া করি। তাদের জীবদ্দশায় যেমন দোয়া করব, তেমনি তাদের মৃত্যুর পরও দোয়া অব্যাহত রাখব। আর যাদের পিতামাতা জীবীত আছেন তারা তাদের পিতামাতার সেবাযত্নের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি।
আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের শিক্ষা অনুসারে জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট, ই-মেইল- masumon83@yahoo.com
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.