আবদুল আজিজ:
ভারী বর্ষণে কক্সবাজারে শিশু সহ ৬জন রোহিঙ্গা সহ পৃথক ঘটনায় ৮জন নিহত হয়েছে। এসময় আহত হয়েছে অন্তত আরও ৫জন। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প, টেকনাফ ও মহেশখালীতে পৃথক এ ঘটনা ঘটে। সকাল থেকে ভারী বর্ষণে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমদ কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ভারী বর্ষণে দুপুর ১টারদিকে উখিয়ায় রোহিঙ্গা বালুখালী ১০নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে শিশুসহ এই পর্যন্ত ৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এঘটনায় আরও ২জন রোহিঙ্গা আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন, উখিয়ার বালুখালী ১০নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জি-৩৭ ব্লকের নুর মোহাম্মদের মেয়ে নুর নাহার (৩০), শাহা আলমের ছেলে শফিউল আলম (১২), জি-৩৮ ব্লকের ইউসুফের স্ত্রী দিল বাহার (২৪) ও তাদের ২সন্তান আব্দুর রহমান (৪) ও আয়েশা ছিদ্দিকা (২)। এসময় আহতরা হলেন, শাহ আলমের মেয়ে নুর ফাতেমা (১৪) ও জানে আলম (৮)।
[caption id="attachment_28673" align="alignright" width="300"] টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ে পাহাড় ধস[/caption]
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নয়ন কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, উখিয়ার বালুখালী ১০নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে নিহত ৫জন ছাড়াও একই এলাকার ৮নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভারী বর্ষণে আরও এক রোহিঙ্গা শিশু পানিতে ভেসে গেছে। তবে তার পরিচয় শনাক্ত জানা যায়নি। ভারী বর্ষণে পাহাড় ধ্বসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শতাধিক ঝুপড়ি ঘর নষ্ট হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-৫, বালুখালী ১ নং ক্যাম্প, টেকনাফের ২৬ নং ক্যাম্প, জামতলী ক্যাম্প, হাকিমপাড়া, ২৪ নং ক্যাম্প, ২৭ নং ক্যাম্প ও মধুছড়াসহ অনেক ক্যাম্প। টানা বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢলে এসব বসতির রোহিঙ্গারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
টেকনাফ উপজেলার নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) মোঃ পারভেজ চৌধুরী কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, অতি-বৃষ্টির ফলে পাহাড় ধসে রকিম আলী (৬৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মনিরঘোনা এলাকায় এঘটনা ঘটে। সে ওই এলাকার মৃত আলী আহমদের পুত্র।
তিনি আরও জানান, সকালে ভারী বর্ষণের সময় পাহাড়ের পাশে তার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন নিহত রকিম আলী। এসময় হঠাৎ উপর থেকে পাহাড় ভেঙে তার বাড়ি উপর পড়লে রকিম আলী প্রথমে গুরুতর আহত হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে আহত রকিম আলী কে উদ্ধার করে বালুখালি তুর্কি হাসপাতালে নিলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। উপজেলা প্রশাসন থেকে মৃত্যু ব্যক্তির পরিবারকে সহায়তা সহ পাহাড়ে বসবাসরত মানুষদের সরিয়ে নেয়ার কাজ করছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুর রহমান কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, সকাল থেকে ভারী বর্ষণে মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের সিপাহীপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে পড়ে মোর্শেদা বেগম (১৭) নামে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও দুইজন। মৃত মোর্শেদা বেগম ওই এলাকার আনসার হোসেনের মেয়ে।
[caption id="attachment_28674" align="alignleft" width="250"] মহেশখালী ছোট মহেশখালীর সিপাহীপাড়া এলাকায় পাহাড় ধস-ছবি কক্সবাজার ভয়েস[/caption]
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো: আব্দুর রহমান কক্সবাজার ভয়েসকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় কক্সবাজার জেলায় ১৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামীকাল ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল সমুহে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, মঙ্গলবার ভোর সকাল থেকে সারাদিন টানা ভারী বৃষ্টিতে কক্সবাজার জেলার শতাধিক নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, রামু, পেকুয়া, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার শহরতলীর বাজারঘাটা, কলাতলী, চরপাড়া, কাঙ্গালী পাড়া, সমিতি পাড়া, নাজিরারটেক, সদর উপজেলার খুরুশকুল, চৌফলদন্ডী, পিএমখালী, পোকখালী, মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, ঘটিভাঙ্গা, পেকুয়া উপজেলার মগনামা, উজানটিয়া, চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরি, কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং, আলী আকবর ডেইল ও তাবলারচর এলাকাসহ পাশবর্তী এলাকার অন্তত ৭০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। একই সাথে সাগরের জ্বলোচ্ছ্বাস ও পাহাড়ী ঢলে এক হাজার একরেরও বেশি চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে পানের বরজ ও ধান সহ বিভিন্ন সবজির ফসল।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.