ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কয়েক দফা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা থেকে পিছিয়ে আসে সরকার। কবে নাগাদ খুলবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। দেশের করোনা সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে শিগগিরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ‘শিক্ষা বিপর্যয়’ দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষাবিদরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।
গৃহবন্দি শিক্ষার্থীদের বাড়ছে ইন্টারনেট আসক্তি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের হাতে এখন রাজ্যের অবসর। অবসর সময় কাটাতে ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে তারা। দিনের বেশির ভাগ সময় ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা টিকটকে মেতে থাকছে। এ ছাড়া পাবজি, ফায়ার প্লেসহ বেশ কিছু গেমসের প্রতি আসক্তি লক্ষ করা গেছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, করোনায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক উপস্থিতির সুযোগ না থাকায় অবসরে একরকম অলস সময় পার করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। একই সঙ্গে অন্যান্য সহপাঠী বা বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ কমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশে স্বাভাবিক অন্যান্য সহ-পাঠ্যক্রমের কাজগুলো করতে পারছেন না।
করোনাকালে ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ইউনিসেফ একটি জরিপ করেছে। সেখানে ২৩৯টি স্কুলের ১ হাজার ২৮১ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক পরিসংখ্যানে বেশ উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৯৪ শতাংশ শিশুর সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট আছে। এদের মধ্যে ৪৯ শতাংশ ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ৩৭ শতাংশ শিশু বাবা-মায়ের ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।
জরিপে ১১ বছরের নিচে ২৫ শতাংশ শিশুকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেখা গেছে। ৬৫ শতাংশ শিশু নিজের পৃথক কক্ষে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। যেখানে তারা ইন্টারনেট ব্যবহারের সর্বোচ্চ সুবিধা পাচ্ছে। নিজের ব্যক্তিগত কক্ষ হওয়ায় ইন্টারনেটের ব্যবহারবিধি নিয়ে তাদের প্রশ্নের সম্মুখীনও হতে হচ্ছে না।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (এনআইএমএইচ) পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারে প্রথম দিকে সেভাবে বিধিনিষেধ থাকে না। পরে যখন সেটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন শিশুকে আর আটকানো যায় না। আসক্তির আরেকটি বড় কারণ হলো, মা-বাবার কাছ থেকে সন্তান সেভাবে সময় পায় না। বাচ্চাদের পড়াশোনার বাইরে বিনোদন ও প্রতিভা বিকাশের সুযোগ তৈরি করে দেওয়াটা সামগ্রিকভাবে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বিচ্ছিন্নভাবে শুধু পরিবারকে দায়িত্ব দিলে তা খুব বেশি ফলপ্রসূ হয় না।”
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সালাহউদ্দিন সেলিম বেশ উৎকণ্ঠা নিয়ে বলেন, “পাবজির মতো কিছু গেম আছে, যার একটা লেভেল পর্যন্ত ফ্রি খেলা যায়। সে গেম এমন পর্যায়ে এসে শেষ হয়, পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য ক্রেডিট নিয়ে খেলতে হয়। ছেলেমেয়েরা অনলাইনে ক্যাশ বা বাবা-মায়ের ক্রেডিট কার্ডের নম্বর দিয়ে প্রয়োজনীয় পয়েন্ট কিনে নেয়। পয়েন্ট কিনে তারা গেমের বড় বড় ধাপ পার হয়। কিছু গেম খেলতে গেলে তাদের চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়। গেমের মাধ্যমে সে ধাপগুলো সে পার হয়। এটা ভয়ানক একধরনের নেশা। আর এই নেশাকে কেন্দ্র করে বিরাট একটা চক্র কাজ করছে।”
এ ছাড়া অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, শিক্ষার্থীদের অনলাইন আসক্তির কারণে তাদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা নষ্ট হচ্ছে। এতে করে ভবিষ্যতে তারা মানসিকভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললে করণীয়
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি উঠলেও আপাতত সরকার তাতে কান দিতে চাইছে না। বরং করোনা সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে নেমে না এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দিয়ে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া উচিত।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, “শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুব তাড়াতাড়ি স্কুলগুলো খুলে দেওয়া দরকার। সবাইকে টিকা দিয়ে স্কুল খুলতে গেলে আরও কয়েক বছর লেগে যাবে। শিক্ষা ও পুরো জাতি ধ্বংসের মধ্যে চলে যাবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং শিক্ষকদের টিকার আওতায় এনে স্কুলগুলো খুলে দেওয়া উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সংক্রমণ কমে যাচ্ছে, তা-ও নয়। বন্ধ রাখলেও যেভাবে শিক্ষার্থীদের ঘরে থাকতে বলা হয়েছে, সেটা হচ্ছে না।”
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষায় যে পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে, তা কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে না। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অনলাইন ক্লাসরুমের বিকল্প হতে পারে না। শিক্ষার বড় অংশ হলো তার ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক দিকগুলো। অনলাইনের মাধ্যমে থিওরিটিক্যাল টপিক পড়ানো সম্ভব হলেও জ্ঞানের সব দিক তার অধীনে আসে না।”
তিনি আরও বলেন, “করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। কবে কমবে বলা যাচ্ছে না। বছরের পর বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা ঠিক হবে না। শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা প্রতিরোধক ভ্যাকসিন দিয়ে ক্লাসরুমে ফেরাতে হবে। তা না হলে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলবে।”
যত দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না হয়, তত দিন অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার সঙ্গে দূরশিক্ষণ চালু করা যেতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, গত বছর ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হলে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
ভয়েস/ জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.