তুষার আবদুল্লাহ:
মানুষের মাঝে অসহিষ্ণুতা কেবল ক্ষোভ থেকেই বিচ্ছুরিত হয় না। অহংবোধ ও অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি থেকেও হয়। পাওয়া না পাওয়ার অংক যখন অমীমাংসিত থাকে, প্রাপ্তি যোগ প্রত্যাশিত হয় না কিংবা ক্ষমতা বা শাসনের বেপরোয়া চাপের মধ্যে থাকতে হয়, তখন মুক্তির জন্যে মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে। এটা অসহিষ্ণুতার স্বাভাবিক সূত্র।
দুনিয়ার ইতিহাসের পাতায় পাতায় এই সূত্রের ব্যাখ্যা ও ফলাফল লেখা রয়েছে। ক্ষমতার চুল্লির যে নিজস্ব তাপ, সেটি সব সময় জনগণকে দগ্ধ করে না। বরং দেশে সুশাসনের বায়ু প্রবাহিত রাখে। কিন্তু সেই চুল্লিকে ঘিরে এক প্রকার বাষ্প জমাট বাঁধতে শুরু করে। সেই বাষ্পের উত্তাপ কখনও কখনও মূল চুল্লির তাপকেও দমিয়ে রাখে। ওই বাষ্প হয়ে ওঠে অসহনীয়। এই বাষ্পের উৎস কোথায়?
ক্ষমতার কেন্দ্রকে ব্যবহার করে এই পরজীবী বাষ্প জমাট বাঁধতে থাকে। তারা সুযোগসন্ধানী। ক্ষমতায় যে জ্বালানির চুলোই জ্বলুক, তারা সেখানে সেই লাকড়ি সেজে ভিড়ে যেতে পারে। এবং তারা জ্বলেও ওঠে ভয়াবহভাবে। তাদের জ্বলে ওঠার অগ্নিরূপ থেকে ক্ষমতার চুল্লিও কখনও কখনও ভীত হয়ে ওঠে। কিন্তু এদের বিস্তার ও আগ্রাসী রূপ এমনই যে মূল চুল্লি নিজেই ভুলে যায় সামান্য ফুঁতেই যে এদের নিভিয়ে দেওয়া সম্ভব। এই ভুলে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে, তারা ক্ষমতার অহং মাত্রা এত উচ্চে তুলে ফেলে যে তখন দশ দিকের আর কাউকেই তারা সইতে পারে না। ক্ষমতার চারপাশে এমন বাষ্পকুণ্ড সেই আদিকাল থেকেই জ্বলছে নিভছে। সমস্যা হলো যখন বাষ্পকুণ্ডুর মধ্যে বিভাজন ও সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে তখন ক্ষমতার চুল্লি তো বটেই, জনমানুষের জীবনও অসহনীয় হয়ে ওঠে।
ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতার বাইরে থাকে, লড়াইরত থাকে ক্ষমতায় যাওয়ার, তখন তাদের চারপাশে শ্রমিক পিপীলিকাদের ভিড় থাকে। তারা সংগ্রাম চালিয়ে যায় দলকে ক্ষমতায় নিতে। সাধারণ কর্মী, নেতারা তো প্রকাশ্যে থাকেই, প্রজাতন্ত্রের একটি অংশেরও মৌন সংযোগ থাকে এই প্রক্রিয়ায়। কিন্তু দলটি যখন ক্ষমতার মৌচাক-এ পৌঁছে যায়, তখন দৃশ্যপট বদলে যায়।
তখন কোথা থেকে সুযোগসন্ধানী মৌমাছিরা এসে জড়ো হয়। মৌচাকের মৌ আহরণকারী ও পাহারাদার যেন তারাই। অতীতের সংগ্রামীদের সেখানে ঠাঁই হয় না। সুযোগসন্ধানীদের বচন, শরীর সবই তেলচিটচিটে। তাই তারা জ্বলে বেশি। আগুনের ভয়াবহতা দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে দূরে ঠেলে রাখে, আর ক্ষমতার কেন্দ্রকে দেখায় আলেয়া।
খুব অতীতের কথা বাদ রাখি। স্বৈরাচার পতনের পর থেকে, প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতার স্বাদ নিতে দেখেছি। ক্ষমতা থেকে দূরে থাকার সময়েও দেখার সুযোগ হয়েছে কাছ থেকে। কীভাবে সংগ্রামী নেতাকর্মীদের দূরে সরে যেতে হয়। বঞ্চিত হতে হয় প্রজাতন্ত্রের মৌন সমর্থকদের। ক্ষমতা হারানোর কারণ হয়ে ওঠে কারা, ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর মৌসুমি বা সুযোগসন্ধানীরা কোন আকাশে উড়ে বা কোন অরণ্যে হারায়, সবই তো দেখা। তাই ক্ষমতার কাছে দূরের মানুষদের উষ্মা, অসহিষ্ণুতায় বিচলিত হই না। এটাই যে স্বাভাবিক সূত্র।
আজ ২১ আগস্ট। ঘটনার ভয়াবহতা দেখেছি। মাঠের সংবাদকর্মী ছিলাম। বীভৎস সেই গোধূলিলগ্নে দেখেছি আওয়ামী অন্তপ্রাণ নেতারা কীভাবে গ্রেনেড হামলা থেকে নিজেদের জীবন বাজি রেখে তাদের প্রিয় নেতাকে রক্ষা করেছেন। হাসপাতালের করিডোরের মেঝেতে কতজনই তো আমার সামনেই চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকা না থাকা দুই সময়েই তাঁর সফরসঙ্গী হয়েছি বিভিন্ন সমাবেশে। যাদের চোখে ভালোবাসা ছিল দল ও নেতৃত্বের প্রতি, সেই মুখগুলো দুর্লভ। কেউ অভিমানে সরে গেছে, কেউ সুযোগসন্ধানী বা মৌসুমি আওয়ামী লীগারদের সঙ্গে পেরে ওঠেনি। এখন চারদিকে লোভের আগুন। যে আগুনে ভস্ম হচ্ছে রাজনীতির সহজফুল।
দেশের সহজ মানুষেরা রাজনীতির সহজফুলের ঘ্রাণ নিতে চায় বুক ভরে। সেই ফুলের আবাদ হোক দেশজুড়ে।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.