বিশেষ প্রতিবেদক:
ক্ষমতার লোভ ও নেতৃত্ব সহ্য করতে না পেরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধীচক্র ও বিপদগামী একটি গ্রুপ পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে। নিহত মুহিবুল্লাহর পরিবার ও স্থানীয় রোহিঙ্গা নেতারা এমনটি দাবি করছেন। এদিকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখনও কোন মামলা হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ মৃতদেহ কক্সবাজার জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মুনীর উল গীয়াস জানান, নিহতের ভাই হাবিবুল্লাহর কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর পুলিশী প্রহরায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। সেখানে নামাজে জানাজা শেষে মুহিবুল্লাহকে দাফন করা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পর প্রতিটি ক্যাম্পে আইনশৃংখলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের কাজ শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করলে মামলা রুজু করা হবে। আমরা এখনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ না পেলেও আমাদের পুলিশী কর্মতপরতার মাধ্যমে হামলাকারিদের ধরতে অভিযান চলছে।’
নিহত মুহিবুল্লাহর ভাই হাবিব উল্লাহ দাবি করছে ক্ষমতার লোভ ও নেতৃত্ব সহ্য করতে না পেওে মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধিচক্র ও সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ মাস্টার আব্দুর রহিম, মুর্শিদ, লালুর নেতৃত্বাধীন ২০/২৫ জন মিলে আমার ভাইকে হত্যা করেছে। হত্যাকারিরা আল ইয়াকিনের সদস্য বলে দাবি তার।
হাবিব উল্লাহ জানান, বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উখিয়া কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ক্যাম্পে এশার নামাজ শেষ করে তার পরিচালিত সংগঠন 'আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) এর অফিসে অবস্থানকালে ২০/২৫ জনের একটি বন্দুকধারী দল তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। ওই অফিসে কর্মরত অন্যান্যদের মারধর করে ছেড়ে দিলেও মুহিবুল্লাহর বুকে ৫ রাউন্ড গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। এরমধ্যে ৩টি গুলি মুহিবুল্লাহর বুকে লেগে মৃত্যু হয় তার।
নিহত মুহিবুল্লাহ চাচাত ভাই নুরুল আমিন জানান, ওই দিন ঘটনার সময় সংগঠন রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিচ এন্ড হিউম্যান রাইট অফিসে উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা। কেউ সংবাদ শুনছিলেন, কেউ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করছিলেন। এইসময় বন্দুকধারীরা অফিসে ঢুকে অন্তত ৫ রাউন্ড গুলি করে মুহিব উল্লাহর বুকে। এসময় উপস্থিত অন্যান্য রোহিঙ্গাদেরর মারধর করা হয়। গুলির শব্দ শুনে অফিসে ছুটে এসে এসব দেখতে পেয়ে আতকে উঠি।
রোহিঙ্গাদের শীর্ষ পর্যায়ের আরেক নেতা মো: জোবাইর বলেন, ‘১২ লাখ রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলার মানুষটি হারিয়ে আমরা নির্বাক। মুহিবুল্লাহ শুধু আমাদের নেতা ছিলেন না, ছিলেন আমাদের অভিভাবক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির অধিকার আদায় ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কে কথা বলে আসছিলেন। হয়তো তার উপর ক্ষুব্ধ হয় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধী সন্ত্রাসীরা। এই ক্ষোভে তাকে গুলি করে হত্যা করছে।’
রোহিঙ্গা নেতা সৈয়দ উল্লাহ জানান, ‘রোহিঙ্গাদের প্রিয়মনি মুহিবুল্লাহ নেই বিশ্বাস করতে পারছি না। তাকে গুলি করে হত্যার খবর শোনে আতংকে আছি। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আসার পর থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা ক্যাম্পে আসলে তিনি প্রথম সারিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাকে হত্যাকান্ডের পর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আরও একদাপে পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
প্রসঙ্গ, বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা মুহিবুল্লাহর নিজ অফিসে ৫ রাউন্ড গুলি করে। এসময় ৩ রাউন্ড গুলি তার বুকে লাগে। এতে সে ঘটনাস্থলে পড়ে যায়। খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ‘এমএসএফ’ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। পরে উখিয়া থানা পুলিশকে মৃতদেহটি হস্তান্তর করে। সে আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইট নামক ক্যাম্প ভিত্তিক সংগঠনটির চেয়ারম্যান ছিলেন। মুহিবুল্লাহকে হত্যার পর সংগঠনটির অন্য সদস্যদের মধ্যেও বিরাজ করছে আতংক।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.