শায়খ আহমদ তালেব হামিদ:
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর। যিনি কোরআনে কারিম নাজিল করেছেন তার বান্দার ওপর, যেন তিনি বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারেন। কোরআন মজিদে সব বস্তুর বিশদ বর্ণনা রয়েছে, সেই সঙ্গে রয়েছে হেদায়েত, রহমত ও মুমিন-মুসলমানদের জন্য পথনির্দেশনা।
শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ছিল মহাগ্রন্থ আল কোরআন। তিনি কোরআনের বৈধকে হালাল হিসেবে ও কোরআনের নিষিদ্ধকে হারাম হিসেবে জানতেন এবং কোরআনে কারিমের নির্দেশিত আয়াতগুলোর ওপর আমল করতেন। নবী কারিম (সা.)-এর সাহাবিরা পবিত্র কোরআনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছেন।
শেষ নবীর উম্মত হিসেবে মুসলমানরা কোরআনের অনুসারী জাতি। এটা মুমিন-মুসলমানদের ওপর দয়াময় আল্লাহতায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ। মহাগ্রন্থ আল কোরআন তাদের সরল ও সহজ এবং সঠিক পথের নির্দেশ করে। কোরআন তাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে যায়, ফেতনার সময় কোরআনই মুমিনের আশ্রয়স্থল ও তাদের বিপদে উদ্ধারকারী।
এই ঐশীগ্রন্থ কোরআনে কারিমে রয়েছে পূর্ববর্তীদের ইতিহাস, পরবর্তীদের সংবাদ এবং সব ধরনের সিদ্ধান্তের বিধান, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী, আল কোরআন কোনো অহেতুক বিষয় নয়।
যে ব্যক্তি অহংকারবশত কোরআন মজিদকে ছেড়ে দেয়, আল্লাহতায়ালা তার দাম্ভিকতাকে চূর্ণ করে দেন, আর যে ব্যক্তি কোরআনে কারিমকে বাদ দিয়ে সঠিক পথ খুঁজে, আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করে দেন। আল কোরআন ছেড়ে দিয়ে যে সম্মান অন্বেষণ করে আল্লাহ তাকে অপদস্থ করেন। আর যে আল কোরআনের দ্বারস্থ না হয়ে সাহায্য ও বিজয় কামনা করে সে আল্লাহতায়ালার রোষানলে পতিত হয়।
কোরআনে কারিম হচ্ছে আল্লাহতায়ালার মজবুত রজ্জু, এটিই হচ্ছে সহজ ও সঠিক পথের দিশারি। আল কোরআনের অনুসারী হলে কেউ বিপথগামী ও পথভ্রষ্ট হবে না। আলেমরা কোরআন থেকে কখনোই তৃপ্ত হন না। অর্থাৎ আল কোরআন যতই তারা তেলাওয়াত করেন ততই তাদের কাছে ভালো লাগে। কোরআনের রহস্য ও নিগূঢ় তত্ত্বের কোনো শেষ নেই।
যে আল কোরআনের কথা বলে সে তো সত্যই বলে, আর যিনি কোরআন মোতাবেক ফায়সালা করেন তিনি তো ইনসাফ করেন, আর যে আল কোরআন অনুযায়ী আমল করে সে তো সওয়াব ও প্রতিদান লাভ করে, যে আল কোরআনের দিকে আহ্বান করে সে অবশ্যই সরল ও হেদায়েতের পথে আহ্বান করে। যারা আল কোরআন পাঠ করে ও সেই অনুযায়ী চলে তাদের দায়িত্ব আল্লাহতায়ালা নিয়েছেন যে, তারা দুনিয়াতে পথভ্রষ্ট হবে না এবং পরকালেও বিপদগ্রস্ত হবে না।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর বর্ণনায় এসেছে। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব মহাগ্রন্থ আল কোরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, ইহকাল ও পরকালে সে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ সহিহ্ মুসলিম
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কাছে এমন জিনিস রেখে যাচ্ছি যা তোমরা আঁকড়ে ধরলে কখনোই পদচ্যুত হবে না, আর তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব মহাগ্রন্থ আল কোরআন।’
মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল করে আল্লাহ তার বান্দাদের অনুগ্রহ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানব জাতি! তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এমন বিষয় সমাগত হয়েছে যা হচ্ছে নসিহত এবং অন্তরের সব রোগের আরোগ্যকারী, আর মুমিনদের জন্য কোরআন পথ-প্রদর্শক ও রহমত। হে নবী, আপনি বলে দিন, আল্লাহর এই দান ও রহমতের প্রতি সবারই আনন্দিত হওয়া উচিত, আল কোরআন; (পার্থিব সম্পদ) থেকে বহুগুণে উত্তম, যা তারা সঞ্চয় করছে।’ সুরা ইউনুস : ৫৭-৫৮
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘আপনার ওপর যে কিতাব অবতীর্ণ করেছি, তা মুসলিমদের জন্য প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ, পথনির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদস্বরূপ।’ সুরা নাহল : ৮৯
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘হে আহলে কিতাব! তোমাদের কাছে রাসুল এসেছে, যে তোমাদের স্পষ্টভাবে (আল্লাহর হুকুম) বলে দিচ্ছেন, যাতে তোমরা বলতে না পারো যে, তোমাদের কাছে কোনো সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী আগমন করেনি। (এখন তো) তোমাদের কাছে সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী এসে গেছে, আর আল্লাহ সব বস্তুর ওপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।’ সুরা মায়িদা : ১৯
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘হে লোক সকল! তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে প্রত্যক্ষ প্রমাণ এসেছে এবং তোমাদের প্রতি সমুজ্জ্বল জ্যোতি অবতীর্ণ করেছি। অতঃপর যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং তাকে সুদৃঢ়রূপে ধারণ করেছে, ফলত তিনি তাদের স্বীয় করুণা ও কল্যাণের দিকে প্রবিষ্ট করাবেন এবং স্বীয় সরল পথ প্রদর্শন করবেন।’ সুরা আন নিসা : ১৭৪-১৭৫
তিনি আরও বলেন, ‘এই কোরআন সর্বশ্রেষ্ঠ পথনির্দেশ করে এবং সৎকর্মপরায়ণ বিশ্বাসীদের সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার। আর যারা পরকাল বিশ্বাস করে না তাদের জন্য আমি প্রস্তুত করে রেখেছি মর্মন্তুদ শাস্তি।’ সুরা বনি ইসরায়েল : ৯-১০
উপরোক্ত বিষয়ে আরও অনেক আয়াত রয়েছে যারা আল কোরআন জেনে-বুঝে মনোযোগের সঙ্গে তেলাওয়াত করে ও সে অনুযায়ী আমল করে তাদের এগুলো জানা রয়েছে।
সালফে সালেহিনদের পদ্ধতি ছিল এমন, তারা কোরআনে কারিমের কোনো আয়াত শিখলে তার অর্থ অনুধাবন ও আমল না করে সামনের দিকে অগ্রসর হতেন না। তারা ইলম ও আমল একত্রে শিখেছেন। যেমনটি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, কাজেই তারা কোরআনের আদেশ ও নিষেধ সংক্রান্ত জ্ঞানার্জন করেছেন এবং সে অনুযায়ী আমল করতে বিনা দ্বিধায় অগ্রগামী হয়েছেন।
আজ আমরা এমন এক সময়ে বসবাস করছি যেখানে নানাবিধ ফেতনা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, বিপদ ও দুর্যোগের ঢেউ একের পর এক আছড়ে পড়ছে, প্রবৃত্তির লালসা তীব্রতর হচ্ছে, অস্পষ্ট ও সন্দেহজনক বিষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিভিন্ন জটিলতা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, অন্যায় ও বিদআতের দিকে আহ্বানকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এমতাবস্থায় এগুলো থেকে মুক্তি পেতে সত্যের ওপর সুদৃঢ় অবিচল থাকতে হবে।
মানসিক প্রশান্তিও তৃপ্তি অর্জন করতে হলে, বাস্তবিক প্রতিদান ও পুরস্কার লাভ এবং শাস্তিথেকে নিরাপত্তা পেতে হলে, সঠিক আকিদার ওপর থাকতে হলে এবং সুনাম ও সুন্দর কর্ম চালিয়ে যেতে হলে, রাজা-প্রজা, জাতি-গোত্র, যুবক-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, আলেম-সাধারণ সব মুসলিমকে যথাযথভাবে পূর্ণ আবেগ ও আন্তরিকতার সঙ্গে আল্লাহর কিতাব আল কোরআন তেলাওয়াত করা, হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা, তার শিক্ষা দেওয়া-নেওয়া ও আমল করা এবং সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে কোরআনে কারিমের পথে ফিরে আসা।
২৯ অক্টোবর মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবা। অনুবাদ করেছেন মুহাম্মদ আতিকুর রহমান।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.