ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বা শান্তি চুক্তির ২৪ বছর পূর্তি আজ ২ ডিসেম্বর। ১৯৯৭ সালের এদিন সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) চুক্তি সম্পাদিত হয়। শান্তির বার্তা নিয়ে এই চুক্তি বাস্তবায়ন করা হয়। শান্তিবাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় সরকার তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। ‘শান্তি চুক্তি’ নামে পরিচিত এই চুক্তির পর সাময়িকভাবে পাহাড়ে রক্তের হোলি খেলা, অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ হয়।
পাহাড়ে আঞ্চলিক চারটি দল থাকলেও তারা দুই ভাগে বিভক্ত। চুক্তির পক্ষের সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস এবং চুক্তিবিরোধী প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এখন এক হয়ে কাজ করছে। সুধাসিন্ধু খীসার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) এবং শ্যামল কান্তি চাকমার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফকে (গণতান্ত্রিক) এক হয়ে কাজ করছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
দুই দশক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পর এই চুক্তি সই হয়। সেই সময় গেরিলা বাহিনীর নেতা ও তার সব সদস্যরা অস্ত্র জমা দেয় সরকারের কাছে। চুক্তি পরবর্তী সময়ে পাহাড়ের মানুষের মধ্যে শান্তির বাতাস বইতে শুরু করে। কিন্তু চুক্তির বিরোধিতা করে সন্তু লারমার সংগঠন থেকে বের হয়ে প্রসিত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ গঠিত হয়। ১৯৯৮ সালের ২৬ জুন ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা আত্মপ্রকাশ করে।
২০১০ সালে সন্তু লারমার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে নানা অভিযোগে সুধাসিন্ধু খীসা ও তারিন্দ্র লাল চাকমার (পেলে) নেতৃত্বে জন্ম হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) নামে পাহাড়ে আরেক নতুন সংগঠন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের নভেম্বরে খাগড়াছড়ি জেলায় সাংবাদিক সম্মেলন করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ভেঙে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে নতুন সংগঠন জন্ম নেয়। এ নিয়ে এখন পাহাড়ে চারটি আঞ্চলিক দলের তৎপরতা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক হিসাবে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত পাহাড়ে সংঘাতে প্রাণ হারান ৮০ জন, আহত হন শতাধিক।
কিন্তু চুক্তির এত বছর পর এসেও চুক্তি বাস্তবায়ন না করার জন্য সরকারকে দোষারোপ করতে দেখা যায় জেএসএস’কে। ধারা বাস্তবায়ন নিয়ে চলছে দুই পক্ষের তর্কযুদ্ধ। এই ২৪ বছর জেএসএস চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনে বেশির ভাগ সময় সক্রিয় ছিল। পক্ষান্তরে ইউপিডিএফ সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ, পার্বত্য অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন করে গেছে। অন্যদিকে সরকারকে সঙ্গে থেকে চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলছে জেএসএস (সংস্কার পন্থী) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)।
ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলের সভাপতি শ্যামল কান্তি চাকমা বলেন, ‘প্রসীত খীসার ইউপিডিএফের জন্য আজ পাহাড়ে এত সংঘাত। তারা তখন চুক্তি বিরোধিতা না করলে হয়তো পাহাড়ে আজ চারটি আঞ্চলিক সংগঠন হতো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাহাড়ে রক্তপাত বন্ধ হোক এটা আমরা সব সময় চাই। এর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক, অধিকাংশ ধারা তারা বাস্তবায়ন করেছে। বাকিগুলোও দ্রুত বাস্তবায়ন করুক সেটি আমরা চাই। একই সঙ্গে পাহাড়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ভূমি সমস্যা। ভূমি বিরোধ নিষ্পতি কমিশন কাজ শুরু হয়েছে। ভূমির সমস্যা সমাধান হলে পাহাড়ে পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে যে অবিশ্বাস সেটিও দূর হবে। পাহাড়ে উন্নয়নের জন্য তিন জেলা পরিষদের মাধ্যমে যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে আসছে তাতে যদি দুর্নীতি না হতো পাহাড়ে আরও উন্নয়ন হতো।’
চুক্তির বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) দলের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, ‘পাহাড়ে কোনও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের দল জড়িত ছিল না। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে যাচ্ছি। চুক্তি বাস্তবায়ন হলে যাদের বেশি ক্ষতি হবে তারাই চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা তৈরি করছে। আমরাও চাই পাহাড়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থা থাকুক। সবাই নিরাপদে শান্তিতে বসবাস করুক।’
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা বলেন, ‘আমরাও পাহাড়ের শান্তি চাই। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর কারণে পাহাড়ে সংঘাত বন্ধ হচ্ছে না। যাদের জন্য উন্নয়ন তারা যদি সেটি ভোগ করতে না পারে তাহলে এই উন্নয়ন কীসের এবং কাদের জন্য? আমরা বিভিন্ন সময় দেখতে পাই পর্যটন ও সড়ক উন্নয়নের নামে স্থানীয় সাধারণ মানুষকে বসতঘর ও কৃষি জমি হারাতে হচ্ছে। আমরা এমন উন্নয়ন চাই না।’
সন্তু লারমার নেতৃতাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যমে কোনও বক্তব্য না দেওয়ায় তাদের পক্ষ থেকে কোনও বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
শান্তি চুক্তি প্রসঙ্গে রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘চুক্তির আগে এখানকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা ছিল, তাদের যেকোনও মুহূর্তে এখান থেকে চলে যেতে হবে এবং যেকোনও সময় তাদের ওপর বড় ধরনের হামলা হতে পারে। চুক্তির পরে তাদের মনের ভয় কেটে গেছে। এখন পর্যন্ত কাউকে পার্বত্য এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে হয়নি। চুক্তির পর পাহাড়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ সড়ক, স্কুল-কলেজের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আগে যেসব এলাকা থেকে আসতে চার-পাঁচ দিন লাগতো এখন দিনে দিনেই আসা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাহাড়ে শান্তির জন্য চুক্তি করা হলেও পাহাড়ে এখনও অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ হয়নি। নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে চাঁদাবাজি হচ্ছে পাহাড়ে। অভিযানের মাধ্যমে পাহাড় থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা গেলে পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে।’
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.