লোকমান হাকিম:
কক্সবাজার শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নাজিরারটেক। এখানে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহৎ শুটকি পল্লী। এ পল্লীর যেদিকে চোখে যায় হরেক রকমের মাছ। ভাদ্র থেকে জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত তুমুল ব্যস্ততায় দিন পার করেন ব্যবসায়ী-শ্রমিকরা। সাগর থেকে আহরণকৃত ২০ ধরনের মাছ রোদে শুকিয়ে শুটকি তৈরী করেন তারা। এই প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত লক্ষাধিক মানুষ।
# কক্সবাজারের শুটকি উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার মেট্রিক টন
# প্রতি বছর বিদেশে ৪০০ কোটি টাকার শুটকি রপ্তানি হচ্ছে
# গড়ে উঠেছে ১০টি অর্গানিক শুটকি উৎপাদন কেন্দ্র
জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, নাজিরারটেকসহ নয় উপজেলার ৩৫টি মহালে চলতি মৌসুমে শুটকি উৎপাদনের টার্গেট ধরা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। যা গত বছর ছিল ২৫ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। দেশের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ৪শ কোটি টাকার শুটকি রপ্তানি হচ্ছে।
শুটকিপল্লী এলাকা কাজ ঘুরে দেখা যায়, সাগর থেকে আহরণকৃত লইট্যা, ছুরি, লাক্ষ্যা, চামিলা, ফাইস্যাসহ হরেক রকমের মাছ বাঁশের তৈরী মাচায় ঝুলানো কিংবা বিছিয়ে দিতে ব্যস্ত সময় পারছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। তবে তপ্ত রোদে ঘাম ঝরানোর উৎসবে নারীরাই এগিয়ে। অনেকের এটাই জীবনের একমাত্র অবলম্বন। তবে মালিক পক্ষের মজুরির টাকায় সংসার চলে না তাদের।
[caption id="attachment_37635" align="alignright" width="300"] কক্সবাজারের নাজিরারটেক শুটকি মহালে শুটকি উৎপাদনে ব্যস্ত জেলেরা।[/caption]
শ্রমিক ছকিনা বেগম কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সওদাগরদের (মালিক) নির্দেশনা মেনে কাজ করি। দৈনিক ৩৫০ টাকা বেতন দেয়। আয়ের চেয়ে খরচ বেশি। এ টাকায় সংসার চলে না।’
মরজিনা আক্তার নামের আরেক শ্রমিক কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘সাগর থেকে আহরণকৃত মাছ বেছে পার্থক্য করি। তারপর রোদে শুকাই, এবাবে দিন যাচ্ছে। সংসারে তিন সন্তান রয়েছে। দু’জন স্কুলে পড়ে, খরচ নিয়ে টানাপোড়নে আছি।’
শ্রমিক মোহাম্মদ আরাফাত কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত কাজ করি। ৩০০ টাকা মজুরি দেয়। যারা কাজ বেশি জানে তারা ৫শ থেকে কেউ ৬শ টাকা পর্যন্ত পায়।’
নুরুল কাদের জানান, ‘শহরের বাইরে থেকে এসে কাজ করছি। ভাড়া বাসা নিয়ে থাকি। ৪০০ টাকায় খরচ পোষায় না।’
চাহিদা বাড়ছে অর্গানিক শুটকির:
কক্সবাজারে সনাতন পদ্ধতির পাশাপাশি গড়ে উঠেছে ১০টি অর্গানিক শুটকি উৎপাদন কেন্দ্র। দাম একটু বেশি হলেও পর্যটকদের কাছে চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে এই শুটকির।
[caption id="attachment_37634" align="alignleft" width="300"] কক্সবাজারের নাজিরারটেক শুটকি মহালে শুটকি উৎপাদনে ব্যস্ত জেলেরা।[/caption]
শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ দেখতে যাওয়া পর্যটক জান্নাত আরা জানান, ‘আমরা ঢাকা থেকে পরিবার-পরিজন কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। শুনেছি নাজিরারটেকে নির্ভেজাল শুটকি পাওয়া যায়। পাশাপাশি এখানকার জীবনমান লক্ষ্য করলাম। এটি নতুন অভিজ্ঞতা।’
নাজিরারটেক মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ জানান, ‘২০১৯-২০ সালে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৭০ লক্ষ টাকার অর্গানিক শুটকি উৎপাদন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১ কোটি টাকার শুটকি বিক্রির আশা করছি।’
ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ বাদশা কক্সবাজার ভয়েককে বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির কারণে মাছ নষ্ট হওয়ায় লোকসানে পড়ি। এ বছর পরিবেশ-প্রতিবেশ সব ভাল। আশা করছি ক্ষতি পুষিয়ে উঠব। সড়ক উন্নয়নে যোগাযোগ সহজ হয়েছে।’
ব্যবসায়ী নাজেম উদ্দীন কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘১৫ থেকে ২০ হাজার শ্রমিক এখানে কাজ করেন। চলতি মৌসুমে সাগরে মাছ কম, তাই দামও বেশি। বাজার মূল্য পেলে আশা করছি লাভ হবে। এ পর্যন্ত এক কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম খালেকুজ্জামান কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘স্বাস্থ্যসম্মত শুটকি উৎপাদনে মৎস্য বিভাগ জোর দিচ্ছে। গুনগতমান ঠিক রাখতে মনিটর জোরদার করেছি। শ্রমিক-উৎপাদকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এখানকার উৎপাদিত শুটকি মধ্যপ্রাচ্য, চীন, হংকং ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, কক্সবাজারে উৎপাদিত শুটকির মানোন্নয়নে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহায়তা করছে। ভবিষ্যতে অর্গানিক শুটকির বিপ্লব ঘটবে বলে প্রত্যাশা করছেন উৎপাদনকরা।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.