ভয়েস প্রতিবেদক:
নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের দেশ থেকে পালিয়ে আসার প্রায় পাঁচ বছর পরেও তাদের আশ্রয়দানকারী কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠী এখনো ঝুঁকির মুখে আছে। এ জন্য তাদের অব্যাহত সহায়তা প্রয়োজন। কক্সবাজার–জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ও তার অংশীদার সংস্থাগুলোর সাম্প্রতিকতম রিফিউজি ইনফ্লাক্স ইমার্জেন্সি ভালনারেবিলিটি এসেসমেন্টের তথ্যে এই চিত্র উঠে আসে।
২০২১ সালে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ড ও বন্যাসহ বড় ধরনের বিপদের কারণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ঝুঁকির মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় ৯ লক্ষ শরণার্থীর ৯৫ শতাংশই বর্তমানে মানবিক সহায়তার ওপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ পরিবারই জীবিকার জন্য দিনমজুরীর কাজের ওপর নির্ভর করে। কোভিড-১৯ লকডাউনের পর থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় ধীরগতির কারণে এই পরিবারগুলোরও ঝুঁকির মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ৫২ শতাংশ বর্তমানে মাঝারি থেকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, যা ২০১৯ সালে ছিল ৪১ শতাংশ।
কক্সবাজারে WFP-এর সিনিয়র ইমার্জেন্সি কোঅর্ডিনেটর শিলা গ্রুডেম বলেন, “ইউক্রেন সংকট আমাদেরকে ভালোভাবে মনে করে দেয় যে, কেউ স্বেচ্ছায় শরণার্থী হয় না। এই বছরটিতে মানবিক সহায়তার প্রয়োজন অত্যন্ত বেশী, তাই আমরা আশা করি, বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়টি থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনযোগ সরে যাবে না। কারণ, তারা বর্তমানে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে আছে এবং বন্যার প্রভাব ও তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে আরও দুর্দশায় নিমজ্জিত হতে পারে।”
৮২ শতাংশ শরণার্থী পরিবার ও ৫৯ শতাংশ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পরিবারের কাছে খাবারের সংস্থান এখনো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিতভাবে খাদ্য সহায়তা পাওয়া যাবে কিনা, সে ব্যাপারে এই মানুষগুলো শঙ্কিত। খাবারের মতো সবচেয়ে অপরিহার্য প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে উভয় জনগোষ্ঠীতে বেশিরভাগ পরিবার বর্তমানে ঋণগ্রস্ত। এটি চিন্তার বিষয়, কারণ নতুন করে কোনো ধাক্কা কিংবা মানসিক চাপের মতো ঘটনা ঘটলে তখন তা সামলানোর মতো পর্যাপ্ত সক্ষমতা এই পরিবারগুলোর থাকবে না।
২০২১ সালে কক্সবাজারে প্রায় ৯ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে WFP-এর পক্ষ থেকে প্রতিমাসে অর্থ-ভিত্তিক খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয় ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত WFP-এর খুচরা বিক্রির দোকানগুলোতে ফ্রেশ ফুড কর্নারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমানে সকল শরণার্থী “ই-ভাউচার” নামে পরিচিত তাদের মাসিক প্রাপ্য অধিকার ব্যবহার করে আউটলেটগুলো থেকে তাজা ফল, শাকসবজি, জীবিত মুরগী ও মাছ কিনতে পারে। এই সহায়তার ফলে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যার মাধ্যমে কক্সবাজারের স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রতিমাসে প্রায় ৯৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা যুক্ত হচ্ছে।
এ ছাড়াও, ২০২১ সালে WFP-এর পক্ষ থেকে কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলোর ৪ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষকে অব্যাহতভাবে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। কাজের বিনিময়ে অর্থ সংক্রান্ত প্রকল্প, জীবিকা বিষয়ক অনুদান ও ব্যবসায়িক দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে WFP-এর পক্ষ থেকে সরাসরি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করা হয়।
শিলা গ্রুডেম আরও বলেন, “২০২২ সালে রোহিঙ্গা পরিবার ও তাদেরকে আশ্রয়দানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠী, যারা প্রায় পাঁচ বছর আগে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে তাদেরকে স্বাগত জানিয়েছিলো, তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দিতে আমরা সকল দাতাগোষ্ঠীর অব্যাহত সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। অনুদানের ক্ষেত্রে যেকোনো কমতির ফলে শরণার্থীদের খাদ্য নিরাপত্তা সরাসরি হুমকির সম্মুখীন হবে যা জনগোষ্ঠীগুলোর জন্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার পথকে আরও কঠিন করে তুলবে।”
জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ২০২০ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী সংস্থা। আমরা বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানবিক সংস্থা যা জরুরি অবস্থায় মানুষের জীবন রক্ষা করছে এবং খাদ্য সহায়তার মাধ্যমে সংঘাত, দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধারকৃত মানুষের জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি বয়ে আনছে।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.