মাইন উদ্দিন শাহেদ:
চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারার বগাচতর খাল। এই খালটি পাশের লামার পাহাড় থেকে বেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কূল ঘেষে সমুদ্র উপকূলে নেমেছে। এক সময়ের প্রবাহমান এ খালটির আগের যৌবন নেই। এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এই খালেই ডুলাহাজারা-২ ও ডুলাহাজারা-৪ নামের দুইটি বালু মহাল রয়েছে।
কয়েকবছর ধরে এ মহালগুলোর ইজারাদাররা আহরণ নয়, একেবারে খাল ও আশপাশের পাহাড় কেটে ও মাটি খুঁড়ে বালু তুলে নিয়ে গেছে। এখন এই খালে বালু নেই বললেই চলে। তারপরও কোটি টাকায় জেলা প্রশাসন থেকে মহালগুলো ইজারা নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এর পেছনের উদ্দেশ্য হলো, এই মহালের ইজারার কাগজ ব্যবহার করে পাশের সংরক্ষিত বনভূমি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে বালু ও মাটি লুট করা। একই অবস্থা জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, ঈদগাঁও, সদর, রামু ও উখিয়ার অন্তত আরও ২০টি মহালের। কোথাও ইজারার শর্ত মানা হচ্ছে না।পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ প্রায় সময় অবৈধভাবে বালু তোলার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও মামলা ঢুকে দিয়েও তা রোধ করতে পারছে না।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৯ উপজেলায় ৩৮টি বালু মহাল রয়েছে। প্রতিবছর বাংলা সনে মহালগুলো ইজারা দেওয়া হয়। এ বছরও আগামী ১৪২৯ সনের ইজারা দেওয়ার জন্যে গত বুধবার জেলা বালু মহাল মূল্যায়ন কমিটির সভা হয়েছে। এ ছাড়া এসব মহালের বাইরে মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদী এবং পাহাড়ি ছড়া ও ঝিরি থেকে অন্তত ৫০টি স্পট থেকে প্রভাবশালীরা অবাধে বালু লুট করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞ চলছে সবচেয়ে বেশি চকরিয়ায়। এ উপজেলায় রয়েছে ১৫ টি বালু মহাল। পাহাড় থেকে নেমে আসা খাল ও ছড়ার এ মহালগুলোতে বালু উত্তোলনের নামে পাহাড় নিধন ও জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা হচ্ছে।
ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহল এলাকার দাঙ্গারবিল নামের একটি বিল থেকে প্রায় ৩০ ফুট গভীর করে মাটি ও বালু লুট করা হয়েছে। এই বালু লুটের কারণে এলাকার লোকজনের জমি ও বাড়ি ঘরের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কও হুমকির মুখে পড়েছে। এরমধ্যে পার্কটির নিরাপত্তা দেওয়াল হেলে পড়েছে। পার্ক কর্তৃপক্ষ বারবার বাধা দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার ছেলে, চকরিয়া উপজেলার এক শীর্ষ নেতার ভাই, কয়েকজন জনপ্রতিনিধি, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের হাতেই মহালগুলোর ইজারা রয়েছে। তাঁরা এলাকাভিত্তিক সিন্ডিকেট করে বালু তুলছে। এতে বাঁধা দেওয়ার কেউ নেই।
বন বিভাগের দাবি, জেলা বালু মহাল কমিটির ১ নং খাস খতিয়ানের জায়গায় থেকে বালু তোলার জন্যে ইজারা দেওয়া হলেও ইজারাদাররা বনবিভাগের এলাকায় ঢুকে বালু তুলছে। যা মহাল আইনে বেআইনী। কারণ সংরক্ষিত বন থেকে বালু উত্তোলনের কোনো বিধান নেই।
কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী প্রধান ইব্রাহীম খলীল মামুন বলেন, চকরিয়ার ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী ও খুটাখালী এলাকার পাহাড়ি এলাকায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বালু তোলা হচ্ছে। এতে এসব এলাকার সমৃদ্ধ সংরক্ষিত বন উজাড়ের পাশাপাশি পাহাড় ধ্বংস হয়ে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
রামু, ঈঁদগাও ও চকরিয়ায় বনভূমির কয়েকটি এলাকা থেকে বালু তোলার কথা জানিয়ে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ড. প্রান্তোষ চন্দ্র রায় জানান,‘এসব ধ্বংসযজ্ঞ দেখলে মনে হবে কোনো ভিন গ্রহে এসে পড়েছি। এ অবস্থা চলে থাকলে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে।’
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আনোয়ার হোসেন সরকার জানান, সংরক্ষিত বনের আশপাশের ১০-১২টি বালু মহাল ইজারা প্রদানে আপত্তি জানিয়ে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ বলেন, বন বিভাগের আপত্তির বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। কেউ ইজারা শর্ত না মানলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.