মুহাম্মাদ লুতফেরাব্বী:
পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালনের মাধ্যমে যেভাবে দেহ-মন পবিত্র হয়, তেমনি যথানিয়মে পরিপূর্ণভাবে জাকাত আদায়ের মাধ্যমে মানুষের উপার্জিত সম্পদ পবিত্র হয়। কোরআনে কারিমে অসংখ্যবার নামাজের সঙ্গে জাকাতের আদেশ করা হয়েছে। ধনীদের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশে (৪০ ভাগের এক ভাগ) প্রয়োজনগ্রস্ত মানুষের যে ন্যায্য অধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে ইসলামে- সেটাই জাকাত। ইসলামি শরিয়ত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের মৌলিক যে পাঁচটি অধিকার নিশ্চিত করেছে তা হলো, ‘ধর্ম, জীবন, বংশ, সম্পদ ও বিবেক।’ প্রতিটি মানুষের এই পাঁচটি অধিকারের পূর্ণ সুরক্ষার নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কোরআন-হাদিসে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি পেট পুরে খেয়ে রাতে ঘুমাতে যায়, অথচ তার প্রতিবেশী না খেয়ে আছে- সে মুমিন নয়।’ ইসলাম ভোগবাদী নয়, জীবনমুখী সমাজব্যবস্থার প্রচলন ঘটিয়েছে জাকাত ও সদকার বিধান প্রদানের মাধ্যমে। অবৈধভাবে উপার্জনের মাধ্যম সুদ, ঘুষ, জুয়া ও প্রতারণার সব পথ বন্ধ করে ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে। পবিত্র কোরআনে জাকাত বণ্টনের জন্য যে আটটি খাত নির্ধারণ করা হয়েছে, তা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সুরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘জাকাত তো শুধু ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়ের কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্য, (ইসলামের প্রতি) যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তিতে, ঋণ ভারাক্রান্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারী ও মুসাফিরদের জন্য। এটা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’
জাকাত বণ্টনের খাতসমূহ পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয়, ইসলাম জাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজ থেকে দারিদ্র্য বিমোচনের প্রতি গভীর গুরুত্বারোপ করেছে। কারণ দারিদ্র্য একটি মারাত্মক সমস্যা। এটি রাষ্ট্র, সমাজ ও মানবতার জন্য জটিল ও তীব্র সমস্যা। এর ফলে সমাজে হতাশা ও বঞ্চনার অনুভূতি সৃষ্টি হয়, অপরাধের মাত্রা বাড়ে। ক্ষেত্রবিশেষ দারিদ্র্য মানুষকে কুফরি পর্যন্ত নিয়ে যায়। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ইসলাম এ সমস্যা মোকাবিলার জন্য জাকাতকে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
জাকাতের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও অভাবীদের মাঝে সম্পদের সুষম বণ্টন হয়। এর মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক সুবিচার যেমন প্রতিষ্ঠিত, তেমনি অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতিশীল হয়। জাকাত শুধু দরিদ্র জনগোষ্ঠী নয়; বরং ধনী শ্রেণির জন্যও অনেক কল্যাণ বয়ে আনে। এ জন্য জাকাতকে বলা হয় ধনী-দরিদ্রের মাঝে সেতুবন্ধ রচনাকারী এবং সমাজের রোগ নিরাময়কারী অন্যতম প্রতিষেধক।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে তার জাকাত আদায় করেনি; কেয়ামতের দিন তা বিষধর সাপ হয়ে উপস্থিত হবে এবং তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার উভয় গালে দংশন করবে এবং বলবে, আমিই তোমার সঞ্চিত ধন, আমিই তোমার পুঞ্জীভূত সম্পদ।’ -সহিহ বোখারি
বিশ্ব মানবতা আজ বিভিন্ন বিপর্যয় ও সংকটের মাঝ দিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়সহ বহুমুখী সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফলে ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্য’ মানুষের সবচেয়ে বড় বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় সামর্থ্যবান সবাইকে জাকাত আদায়ে আরও বেশি আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। জাকাত আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও রমজানে যেকোনো আমলের সওয়াব ৭০ গুণ বেশি হওয়ায় এই মাসই সর্বোত্তম সময়।
লেখক : পিএইচডি গবেষক, আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিসর
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.