ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
উৎসবের আমেজে শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলি খেলা উপলক্ষে বৈশাখী মেলা। করোনাভাইরাসের কারণে গেল দুই বছর মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। এবারও মেলার আয়োজন নিয়ে ছিল নানা জল্পনা। অবশেষে আজ আবার বসল চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের এ মেলা। এবারের মেলা চলবে তিন দিন। আর ঐতিহ্যবাহী বলি খেলার আসর বসবে সোমবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টায়। এবার বলি খেলা হবে লালদিঘীর পাশে বালু দিয়ে বানানো মঞ্চে।
রোববার (২৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে লালদিঘী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে মাটির তৈজসপত্র, খেলনা আর বাঁশ-বেত, মুড়ি-মুড়কি, গাছের চারা, ফুলঝাড়ু, হাতপাখাসহ নানা ধরনের গৃহস্থালি ও লোকজ বিভিন্ন পণ্য সাজিয়ে বিকিকিনি শুরু করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মেলায় এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এসেছে মাটির তৈরি জিনিসপত্র। মাটির তৈরি ঘর সাজানোর বিভিন্ন ধরনের আসবাব, সৌখিন জিনিসপত্র, শিশুদের খেলনার পুতুল, টাট্টু ঘোড়া নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। কাঠের তৈরি খাট, আলমিরা, আলনাসহ আরও নানা আসবাবপত্র নিয়েও বসেছেন কয়েকজন দোকানি। মেলায় বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আজ সন্ধ্যার পর থেকে মেলায় ভিড় বাড়বে।
আবদুল জব্বারের স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিক্রেতারা এসেছেন। আজ থেকে পুরোদমে বেচা-বিক্রি শুরু হয়েছে।
মাটির তৈরি জিনিস বিক্রি করার জন্য গাজীপুর থেকে মেলায় এসেছেন বিপ্লব পাল। তিনি ফুলের টব, মূর্তি, হাড়ি-পাতিল, কাপ-প্লেট ও ডেকচি নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ১২ বছর ধরে মেলায় দোকান দেই। কিন্তু করোনার কারণে মাঝে দুই বছর মেলা বন্ধ থাকায় আসা হয়নি।তিনি বলেন, সকাল থেকেই বিক্রি শুরু হয়েছে, তবে ক্রেতা কম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা বাড়বে বলে আশা করছি।
আরেক বিক্রেতা মো. ফখরুল ইসলাম এসেছেন কাঠের তৈরি বিভিন্ন জিনিস নিয়ে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৮ লাখ টাকার কাঠের জিনিস নিয়ে মেলায় এসেছি। আশা করছি সবগুলো বিক্রি হয়ে যাবে। সকাল থেকে কিছু ক্রেতা আসছে। বলি খেলার দিন বেচাকেনা বেশি হবে বলে আশা করছি।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন পণ্য মেলায় নিয়ে এসেছেন মনির উদ্দিন। তিনি বলেন, ২০ বছর ধরে মেলায় আসি। গত দুই বছর করোনার কারণে মেলা হয়নি, তাই আসেনি। সকাল থেকে ক্রেতারা আসছে। আশা করি সন্ধ্যার পরে মেলায় ভিড় আরও বাড়বে।
মেলায় আসা আবু নাসির বললেম, দুই বছর পর মেলা হচ্ছে। ছোটবেলা থেকে সারা বছর এই মেলার অপেক্ষায় থাকতাম। গত দুই বছর করোনার কারণে হতে পারেনি। এবার মেলা হচ্ছে, সেজন্য খুব ভালো লাগছে। আমি মেলায় ঘুরতে এসেছি।
বেসরকারি চাকরিজীবী অনিরুদ্ধ ঘোষ ঢাকা পোস্টকে বলেন, গৃহস্থালি কিছু জিনিসপত্র নিলাম। মেলা ঘুরে দেখছি। আরও কিছু জিনিস কেনার ইচ্ছে আছে। তবে এ বছর মেলায় বিক্রেতা কম এসেছে বলে মনে হচ্ছে।
ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে চট্টগ্রাম শহরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার ১৯০৯ সালে এই বলি খেলা অনুষ্ঠান প্রচলন করেন। ১৩১৬ বাংলা ১২ বৈশাখ (১৯০৯) সালে প্রথম এই বলি খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১১০তম আসর পর্যন্ত নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়। বলি খেলা ঘিয়ে কয়েকদিন ধরে উৎসবমুখর মেলার প্রচলন সংযুক্তি চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়। ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় এই বলি খেলা ও মেলার পরিধি ও জনপ্রিয়তা ব্যাপকতা লাভ করে। চট্টগ্রাম পৌরসভা পরে সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মেলা কমিটি প্রতি বছর ১২ বৈশাখ বলি খেলার আয়োজন করে আসছিল। এর মধ্যে করোনার ভয়াবহতায় ২০২০ ও ২০২১ সালে বলি খেলা ও মেলা স্থগিত করা হয়। বলি খেলাকে কেন্দ্র করে লালদিঘীর পাড়সহ আশপাশের এলাকায় বসে মেলা। এবার বলি খেলা ও মেলার ১১৩তম আসর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
রোববার দুপুরের দিকে লালদিঘী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লালদিঘী মোড়ে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরির কাজ করছেন শ্রমিকরা। আর মঞ্চ তৈরির বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন খেলা আয়োজক কমিটি।
মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি ও চসিকের কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, লালদিঘীর মাঠ বন্ধ থাকায় ১২ বৈশাখ অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল সোমবার বিকেল ৩টায় লালদিঘীর পাড়ের গোলচত্বরে সড়কে বলি খেলা অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর মেলার উদ্বোধন করবেন। মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এতে প্রধান অতিথি থাকবেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পিআর) শাহাদাত হুসেইন রাসেল বলেন, আজ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত মহানগরীর লালদীঘি এলাকায় বৈশাখী মেলা চলবে। আর বলি খেলা হবে সোমবার। মেলা চলাকালে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ আগত লোকজনের সমাগমের কারণে মেলা কেন্দ্রিক আশপাশের এলাকা ও লালদীঘি অভিমুখী সব প্রকার যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.