আবদুল আজিজ:
আজ ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সনের এই দিনে কক্সবাজার জেলা সহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জনপদে নেমে আসে মহা প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়। সেই ঝড়ে লন্ড ভন্ড হয়ে যায় উপকূলের কাছাকাছি শত শত বছরের গড়ে উঠা সভ্যতা। শুধু তাই নয় ওইদিন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে নিমিষেই। সেই সাথে গৃহ পালিত পশু, মৎস্য সহায় সম্পদ সহ মাথা গুজানোর ঠাই ঠুকুও হারায় হাজার হাজার পরিবার। রাস্তাঘাট, বনজ সম্পদ সহ নানা সেক্টরে ঘটে ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতি। যা ঘুর্ণিঝড়ের পর আজ ৩১ বছর সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও ক্ষতিগ্রস্তরা পুষিয়ে উঠতে পারেনি।
১৯৯১ সালের সেই দিনের স্মৃতিতে আজো কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকার লোকজনের মাঝে নেমে আসে স্বজনহারা বেদনার শোক। চোখের পর্দায় ভেসে উঠে ওই দিনের স্মৃতি। কিন্তু সেই স্মৃতির বেদনায় উপকূলবাসী শুধু শুধুই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আর সেই দিনের পূর্বকার স্মৃতি আর স্বজন ও সহায় সম্পত্তি হারানোর কথা।
সেই প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে স্বজন হারানো এমনই একজন মাবিয়া খাতুন। বয়স সত্তরের উপরে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মাবিয়া খাতুন এখন মৃত্যু শয্যায়। প্রায় ২ বছর ধরে অসুস্থ হয়ে চলাফেরা করতে পারেন না। পারেন না কথা বলতে। তবে ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে বেচে যাওয়া মাবিয়া খাতুনের ২ মেয়ে ছেনুয়ারা বেগম ও শাকেরা বেগম জানান, প্রলয়ংকারী সেই ভয়াল ঝড়ে পরিবারের ১৪ জন স্বজনকে হারিয়েছেন। সেই সাথে হারিয়েছেন ঘরবাড়ি, গৃহপালিত পশু সহ মূল্যবান সম্পদ। কোন উপায়ন্তর না দেখে শহরের সমিতি পাড়া এলাকায় বসতি শুরু করে।
মাবিয়া খাতুনের মত একই এলাকার আমেনা খাতুন (৬০)। ঘুর্ণিঝড়ে ৬ ছেলে-মেয়ে হারিয়ে এখন প্রায় নিঃস্থ। দু’মেয়ে নিয়ে কোন রকমের সংসার তার। সেই ভয়ংকর দিনের কথা মনে পড়লেই দিশেহারা হয়ে পড়েন আমেনা খাতুন। একই অবস্থায় দিন কোন রকম দিন পার করছেন মোতাহেরা বেগম। মোতাহেরা বেগমেরও একইভাবে ৩ সন্তান ভেসে যায় সাগরের নুনা জলে। স্বামী দুদু আলমকে নিয়ে সেই ভয়াল স্মৃতি বুকে ধারন করে বেচে আছেন এখনো।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন- ‘কক্সবাজার জেলায় কোন বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ বলা যাবেনা। কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, পেকুয়া সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ গুলো ইতিমধ্যে মেরামতের কাজ শেষ করেছি। আমরা প্রতিনিয়ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা গুলো আমরা পরিদর্শন করেছি। বর্ষায় যে অংশ দিয়ে পানি প্রভাহিত হবে সে অংশ গুলো মেরামতের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
১৯৯১ সনের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ে সর্বাধিত আঘাত হানে কক্সবাজার ও পুরো চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে। কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া মহেশখালী, টেকনাফ উখিয়া ও কক্সবাজার সদর। চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, সন্দ্বীপের বিস্তীর্ণ উপকুলীয় গ্রামগুলো প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ে লন্ড ভন্ড হয়ে যায়। ওইদিন উপকূলের হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। ক্ষতি হয়েছে হাজার কোটি টাকার দীর্ঘ দিনের সঞ্চিত ও রক্ষিত সহায় সম্পত্তি সহ ঘরবাড়ী। উপকুলীয় বেল্টের ভেঁড়িবাধ ভেঙ্গে গিয়ে নেমে আসা পানি ও ধমকা হাওয়ায় সব কয়টি কাঁচা, পাকা, ঘরবাড়ী ভেঙ্গে যায়। ভেসে যায় গৃহপালিত পশু, মৎস্য ও বনজ সম্পদ। ওই দিনে পুরো কক্সবাজার সহ চট্টগ্রামে তখন নেমে আসে হাহাকার ও চরম দূর্ভিক্ষ অবস্থা। বিগত ৩১ বছরে এ অঞ্চলের লোকজনের নিরাপত্তার বিষয়টি যেমন রয়ে গেছে চরম উপেক্ষিত, তেমনি গোটা উপকূলীয় অঞ্চল এখনও রয়েছে অরক্ষিত অবস্থায়।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.