মাওলানা আবদুল জাব্বার:
বিশ্ব জাহানের অধিপতি আল্লাহতায়ালাকে কাছে পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো মানবসেবা। মানুষের সেবার মাধ্যমে অতি সহজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। এ প্রসঙ্গে একটি বিখ্যাত হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ওই হাদিসের সারমর্ম হলো ‘অসুস্থ মানুষের সেবা, ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো, পিপাসার্তকে পানীয় দেওয়ার অর্থ হলো খোদ আল্লাহর সেবা করা, আল্লাহকে পানীয় দেওয়া, আল্লাহকে খাওয়ানো।’ এই হাদিসের আলোকে ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, ‘সর্বাবস্থায় আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো মানবসেবা।’ এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যরত থাকে ততক্ষণ আল্লাহ তাকে সাহায্য করতে থাকেন।’ সহিহ্ মুসলিম
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা পৃথিবীতে আছে তাদের দয়া করো, তাহলে আকাশের মালিক (আল্লাহ) তোমাকে দয়া করবেন।’ মিশকাত
সর্বপ্রকার সেবাকাজের সর্বোত্তম আদর্শ ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্তের অধিকারী হলেন নবী মুহাম্মদ (সা.)। যে বৃদ্ধা নবীজিকে গালিগালাজ করেছে তার বোঝা রাহমাতুল্লিল আলামিন বহন করে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন, ফারুকে আজম হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) কে দেখা যায়, গমের বস্তা কাঁধে বহন করে অভাবীর ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন। এমন অসংখ্য নজির মুসলমানের মধ্যে বিরাজমান। ইসলামে বলা হয়েছে, আর্ত-দুঃখীর সেবায় যথাসম্ভব নিজেকে নিয়োজিত করতে। এ বিষয়ে নবী করিম (সা.) জানিয়ে দিয়ে গেছেন কীভাবে জীবনে চলতে হবে। হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেছেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জীবনে কখনো কোনো সাহায্যপ্রার্থীকে না বলেননি। মানবসেবাকে তিনি নিজের জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। নবী করিম (সা.) তার মহৎ কার্যক্রমের মাধ্যমে সেই সময় আরব সমাজের সর্বস্তরের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন।
নবী করিম (সা.) ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে একটি সংগঠন করে আর্তমানবতার সেবা, অসহায়দের সাহায্য-সহযোগিতা করে আরবের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। রাসুলের এই মানবসেবামূলক কাজ বিধর্মীদের কাছেও প্রশংসনীয় ছিল। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তার পরিবারের সদস্যরা নিজে না খেয়ে গরিব-দুঃখীকে খাবার দিয়েছেন। অন্যকে সাহায্য করার জন্য নিজের প্রয়োজনকে ত্যাগ করেছিলেন।
বিভিন্নভাবে মানুষ একে অন্যের পাশে দাঁড়াতে পারে। যেমন, বিশেষ তহবিল গঠন করে দেশের দানবীর ও শুভাকাক্সক্ষীদের কাছ থেকে জাকাত, ওশর, ফেতরা, কোরবানির চামড়া ও ত্রাণসামগ্রী কিংবা আপৎকালীন ব্যয় বাবদ অর্থ আদায় করে বিশেষ তহবিলে গঠন করে সহায়তা করা। ব্যক্তিকে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিরক্ষর লোকদের অক্ষরজ্ঞান ও সহিহ্-শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত, জরুরি মাসায়েল শেখার ব্যবস্থা করা যায়।
গ্রাম-গঞ্জের মানুষের সবসময় কাজ থাকে না। তাই এমন একটি সময় বেছে নিয়ে কোনো মসজিদে মাসব্যাপী এ ধরনের বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা যায়। নিজেদের মধ্য থেকে অভিজ্ঞ কোনো দায়িত্বশীল ক্লাস নেবেন অথবা অন্য কোনো উপযুক্ত ব্যক্তিকে দিয়েও ক্লাস নেওয়া যেতে পারে। দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করে অসহায় রোগীদের মধ্যে ফ্রি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা করা যেতে পারে। তাছাড়া রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানোসহ চিকিৎসকরা ফ্রি-ফ্রাইডে ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সহজেই এ কাজ করতে পারেন।
এমনকি বৃক্ষরোপণও একটি উত্তম সেবা, সওয়াবের কাজ। রাস্তার পাশে ও পতিত জমিতে গাছ লাগিয়ে সৃষ্টিকুলের খেদমত করা যায়। আল্লাহর রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যদি কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষরোপণ করে অথবা শস্য জন্মায় অতঃপর তা থেকে কোনো মানুষ, পাখি বা পশু (ফল-ফসল) ভক্ষণ করে তাহলে সেটি তার জন্য সদকাস্বরূপ গণ্য হবে।’
যার মধ্যে মানবতাবোধ আছে সে অবশ্যই অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবে। তার সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসবে সহযোগিতা করবে। আর এটিই মানবতার সেবা। আল্লাহতায়ালা দুস্থ মানবতার সেবায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে নসিহত পেশ করে বলেন ‘তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দীকে আহার্য দান করে। তারা বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।’ সুরা দাহর : ৮-৯
বর্ণিত আয়াতে মহান আল্লাহ অসহায় এতিম-মিসকিন এবং বন্দীদের খাবার দান করাকে মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। অসহায়দের পাশে না দাঁড়ানো, তাদের খোঁজ-খবর না রাখা, তাদের বিপদে এগিয়ে না আসা; এগুলো কোনো মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। বরং মুমিনরা দুস্থ মানবতার সেবায় সদা তৎপর থাকে।
কোরআন-সুন্নাহর আলোকেও এ কথা প্রতীয়মান হয়, ইসলাম দুস্থ মানবতার সেবায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে জোর নির্দেশনা দেয়। শুধু তাই নয়, ধনী ব্যক্তির জন্য গরিব-অসহায় দুস্থ ব্যক্তিদের সহযোগিতা করা কিংবা জাকাত দেওয়াকে আবশ্যক করে দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম মানুষের সেবার জন্য, সমাজের উপকারের জন্য নিজের যথা সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করে। মানুষকে সর্বোচ্চ মানবিকতা, পরহিতৈষণা, সহমর্মিতা ও মহানুভবতার শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম। এ উদ্দেশে আল্লাহ তার নবীকে প্রেরণ করেছেন দয়া ও সহমর্মিতার প্রতীক হিসেবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি আপনাকে সৃষ্টিকুলের জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।’ সুরা আল-আম্বিয়া : ১০৭
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.