নাজমুল হাসান সাকিব:
সমাজের প্রায় মানুষই নিজেকে অনুসরণীয় হিসেবে পেশ করতে চায়। লোকমুখে শুনতে চায় নিজের নাম, প্রশংসা আকাক্সক্ষা করে সুনাম-সুখ্যাতির। যোগ্যদের ক্ষেত্রে এই আকাক্সক্ষা ঠিক আছে। কিন্তু সমস্যা হলো অযোগ্যদের নিয়ে। যতটুকু না পড়ালেখা ও যোগ্যতা- এর দ্বিগুণ টাইটেল দিয়ে বানিয়েছে নিজের ভিজিটিং কার্ড। এভাবে খ্যাতি ও যশপ্রীতির কবলে মনের নিষ্ঠা ও নিবেদন নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি অবশ্যই পীড়াদায়ক। মুমিন-মুসলমানদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা কাম্য।
যশপ্রীতি অর্থাৎ মানুষের কাছে নিজের সম্মান ও প্রশংসার আকাক্সক্ষা শরিয়তের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়। মহান আল্লাহ পরকালের নিয়ামত লাভকে যশপ্রীতি বর্জনের ওপর নির্ভরশীল ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এই পরকাল আমি তাদের জন্য নির্ধারিত করি, যারা দুনিয়ার বুকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে ও অনর্থ সৃষ্টি করতে চায় না। খোদাভীরুদের জন্য শুভ পরিণাম।’ সুরা আল কাসাস : ৮৩
কোরআনে করিমের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, হজরত ইবরাহিম (আ.) বলেন, ‘(হে আল্লাহ!) আমাকে পরবর্তীদের মধ্যে সত্যভাষী করো।’ সুরা আশ শোয়ারা : ৮৪
হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর এই দোয়া বাহ্যত যশপ্রীতির অন্তর্ভুক্ত মনে হয়। কেননা তিনি দোয়া করেছেন, পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে আমার প্রশংসা ও গুণকীর্তন হোক। কিন্তু আয়াতের ভাষার প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করলে বুঝা যায়, দোয়ার আসল উদ্দেশ্য যশপ্রীতি নয় বরং আল্লাহর কাছে এই দোয়া করা, আমাকে এমন সৎকর্মের তৌফিক দিন, যা আমার আখিরাতের সম্বল হবে। যা দেখে অন্যদের মনে অনুপ্রেরণা জাগবে এবং সৎকাজে মানুষ আমার অনুসরণ করবে।
ইসলামি স্কলারদের অভিমত, এই দোয়ার দ্বারা কোনো যশপ্রীতি উদ্দেশ্য নয়। কোরআনে কারিম ও হাদিসে যে যশপ্রীতি নিষিদ্ধ ও নিন্দনীয় বলা হয়েছে, তার অর্থ পার্থিব জগতে প্রভাব প্রতিষ্ঠা এবং এর দ্বারা মুনাফা অর্জন করা। অনেকের মতে, এর দ্বারা অবৈধ সুবিধা ভোগ করা।
খ্যাতির লালসায় চরিত্র নষ্ট হয়, উদগ্র বাসনায় মানুষ ব্যক্তিত্ব হারায়। তখন সৃষ্টির সেরা মানুষ ইনসান নর্দমার নোংরা কীটের চেয়েও জঘন্য হয়। আরবিতে একে ‘রিয়া’ বলা হয়। ‘রিয়া’ মূলত একনিষ্ঠতার বিপরীত। তাই রিয়াকারীর ইবাদত-বন্দেগি কবুল হয় না, তার সব আমল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। রিয়া কিংবা আত্মপ্রচার তথা যশ ও জৌলুশ কামনা নফসের গোলামির শামিল। খ্যাতির বাসনা দুনিয়ার আসক্তি বাড়িয়ে মানুষকে আখিরাত থেকে বিমুখ করে তোলে। ফলে প্রতিক্ষণে ও সবসময় আখিরাতের চিন্তার পরিবর্তে দুনিয়ার চিন্তা মাথায় কিলবিল করতে থাকে। সদা-সর্বদা দুনিয়া নিয়ে বিভোর থাকে, তার অন্তরে আল্লাহর জন্য প্রেম সৃষ্টি হয় না। রিয়াকারী তার সৎকর্মের ফল দুনিয়াতে পেলেও পেতে পারে; কিন্তু আখিরাতে সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না বলে হাদিসে বলা হয়েছে।
এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘দুটি ক্ষুধার্ত বাঘকে যদি একটি বকরির পালে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে তা এত পরিমাণ ক্ষতি সাধন করতে পারবে না, যে ক্ষতি মানুষকে তাদের দুটি স্বভাব করে থাকে।
ক. ধন-সম্পদের প্রতি অতি ভালোবাসা।
খ. নিজের সুনাম-সুখ্যাতির আশা-আকাক্সক্ষা।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিজের সুনাম-সুখ্যাতির আশা-আকাক্সক্ষা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, দুনিয়াতে সম্মান ও যশপ্রীতি তিন শর্তে বৈধ
১. নিজেকে বড় অন্যকে ছোট এবং হেয় করা যদি উদ্দেশ্য না হয় বরং পরকালীন উপকার লক্ষ্য হয়, মানুষ তার ভক্ত হয়ে সৎকর্মে তার অনুসরণ করবে।
২. মিথ্যা গুণকীর্তন লক্ষ্য না হওয়া চাই। অর্থাৎ যে গুণাবলি নিজের মধ্যে নেই তার ভিত্তিতে মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা কামনা করা।
৩. সুনাম-সুখ্যাতি অর্জনের জন্য যদি গোনাহ অথবা ধর্মের ব্যাপারে শৈথিল্য অবলম্বন করতে না হয়।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.