ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
মোহাম্মদ মোজাফফর হোসেন (৬৫)। গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় ছোট্ট একটি পান-সিগারেটের দোকানই তার আয়-রোজগারের অবলম্বন। সে দোকানে ভর করেই চলে ছয় সদস্যের সংসার। তার ওপর শরীরে বাসা বেঁধেছে জটিল রোগ। হার্ট ও কিডনির সমস্যায় ভুগছেন অনেকদিন। ডাক্তার দেখাতে মাঝেমধ্যেই তাকে ঢাকা-গাজীপুর রুটে চলাচল করতে হয়। দুদিন আগেও গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ঢাকা রুটে তিনি বাসভাড়া দিতেন ৫০ টাকা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর বাসের কন্ট্রাক্টর এখন ৮০ টাকা ভাড়া দাবি করছেন। কোনোমতে ১০ টাকা বাড়তি ভাড়া দিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছেন। ফেরার পথেও তাকে গুণতে হবে বর্ধিত ভাড়া। এদিন স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় আসায় যাতায়াতে তাকে ভাড়া বাবদ বাড়তি গুণতে হবে অন্তত ৪০ টাকা।
রোববার (৭ আগস্ট) গাজীপুর থেকে রাজধানীর ফার্মগেটে নেমেই বাড়তি ভাড়া নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন মোজাফফর হোসেন।
এই যাত্রী জাগো নিউজকে বলেন, এই রুটে ভাড়া ৫০ টাকা, এখন ৮০ টাকা চাচ্ছে। কোনোভাবে ৬০ টাকা দিয়ে মানিয়েছি। আমরা সীমিত আয়ের মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্যও আগের চেয়ে খারাপ। আয়-রোজগার কমে গেছে। কিন্তু সবখানে খরচ বাড়ছে। এভাবে তো আমাদের মতো মানুষের টিকে থাকাই দায়।
এদিন সকাল থেকে সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, শুধু মোজাফফর হোসেনই নন, নিম্নআয়ের প্রায় সব মানুষের মুখেই এখন একই কথা। এ মানুষগুলোর আয়ের তুলনায় ব্যয় বাড়ছেই। গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি তাদের জন্য ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে। প্রতিদিনের জীবনযাপনে এই বাড়তি খরচ সমন্বয়ের কোনো উপায় না দেখে চোখেমুখে অন্ধকার তাদের।
মিরপুর-৬০ ফিট এলাকার ক্ষুদ্র দোকানি হামিদুর রহমান। দোকানের মালামাল কিনতে তাকে প্রায় সময়ই যেতে হয় পুরান ঢাকার চকবাজারে। এ পথে যাতায়াতে তাকেও এখন গুণতে হবে বাড়তি ভাড়া। এ নিয়ে কপালে ভাঁজ হামিদুরের। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, তেলের দাম বাড়লেও তাতে পরিবহন মালিকদের মাথা ব্যথা নেই। তাদের কিছু যায়-আসেও না। তারা প্রতিবাদও করে না। কারণ, তারা তো সাধারণ যাত্রীদের পকেট কাটতেই থাকবে।
কিশোরগঞ্জ থেকে চাকরির খোঁজে ঢাকায় এসেছেন রফিকুল ইসলাম। আসার পথে বাড়তি ভাড়া নিয়ে তাকেও পড়তে হয়েছে বিপাকে। তার কথায়, ‘হুট কইরা বাসের ভাড়া বাড়াই ফেলছে। তেলের দাম বাড়তি, বাসে কন্ট্রাক্টররা যাত্রীদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে ঝামেলা করছে। কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসতে ২৭০ টাকা ভাড়া নিয়েছে। কিন্তু এ রুটে ভাড়া তো আরও কম। বেকার হয়ে ঘুরছি, আয়-রোজগার নেই। গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আমাদের জন্য কষ্টের হবে।
কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই গত শুক্রবার (৫ আগস্ট) দিনগত রাত ১২টার পর ডিজেল, পেট্রল, কেরোসিন ও অকটেনের দাম বাড়িয়েছে সরকার। প্রতি লিটার ডিজেলে ৩৪ টাকা, কেরোসিনে ৩৪ টাকা, অকটেনে ৪৬ টাকা, পেট্রলে বাড়ানো হয়েছে ৪৪ টাকা।
ভোক্তাপর্যায়ে আগে খুচরামূল্য ছিল প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা ও পেট্রল ৮৬ টাকা। বর্ধিত দামে বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও পেট্রল ১৩০ টাকা।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (৬ আগস্ট) গণপরিবহনে ভাড়া বাড়িয়ে সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। যেখানে মহানগরে প্রতি কিলোমিটারে বাস ও মিনিবাসে ভাড়া ৩৫ পয়সা এবং দূরপাল্লা বাসে কিলোমিটারে ৪০ পয়সা বাড়িয়েছে সরকার। বর্ধিত ভাড়া অনুযায়ী, মহানগরে প্রতি কিলোমিটারে বাসে ২ টাকা ৫০ পয়সা, মিনিবাসে ২ টাকা ৪০ পয়সা ভাড়া দিতে হচ্ছে। দূরপাল্লার বাসে কিলোমিটারপ্রতি যাত্রীদের ভাড়া গুণতে হচ্ছে ২ টাকা ২০ পয়সা।
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.