ভয়েস নিউজ ডেস্ক :
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে স্থবির বিশ্ব অর্থনীতি। এর প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন দেশের চাকরির বাজারে। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এর বাইরে নন। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি বেকার হয়ে দেশে ফিরেছেন। আবার অনেকে লকডাউনের কারণে বিদেশেই রয়ে গেছেন। আয় নেই, দেশে অর্থ পাঠাতেও পারছেন না। এতে তাদের পরিবারের সঙ্গে দেশও পড়েছে সংকটে। কারণ, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অনেকটাই নির্ভর করে এই প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর। করোনার প্রাদুর্ভাবে চলতি মাসে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে সেই রেমিট্যান্স প্রবাহ।
বাংলাদেশ ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এপ্রিলের প্রথম ২৩ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রায় ৭০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। গত মাসের একই সময় এর পরিমাণ ছিল ১১০ কোটি ডলার। অর্থাৎ চলতি মাসের প্রথম ২৩ দিনে ৪০ কোটি ডলার কম রেমিট্যান্স এসেছে। এর ধারাবাহিকতায় এপ্রিলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। গত মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১২৯ কোটি ডলার, যা ১৫ মাসে সর্বনিম্ন।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান হারানো শুধু তাদের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের সংকটে ফেলছে না, চাপ সৃষ্টি করছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে। সরকারের অনুমান, বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার এক মাসের মধ্যে ১ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মসংস্থান হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ সময়সীমার মধ্যে দেশে ফিরেছেন প্রায় ২ লাখ বেকার প্রবাসী বাংলাদেশি। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সৌদি আরব, কুয়েত, ওমান, বাহরাইন ও মালদ্বীপে বেকার হয়ে পড়েছেন বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি। সেই সঙ্গে করোনার কারণে ইউরোপের দেশগুলোাতেও কর্মসংস্থান হারিয়েছেন অনেক বাংলাদেশি।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রবাসী আয় কমে গেলে দেশের অর্থনীতিতে অনেক ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখে প্রবাসী আয়। গ্রামের মানুষের নন-ফার্ম ইনকামের ৬০ শতাংশ হচ্ছে প্রবাসী আয়। এ আয় কমে গেলে গ্রামের মানুষের আর্থিক আয়ের পতন ঘটবে। এখন করোনার প্রভাবে অনেক প্রবাসী দেশে ফিরে আসবেন। সরকারের উচিত হবে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসনে সহায়তা করা।
আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের প্রধান খাত। এ দুই খাতে আয় কমে গেলে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে আমাদের ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়বে। ক্রয়ক্ষমতা কমবে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ডলারের বিনিময় হার অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।
বিনিময় হার ধরে রাখতে মার্চে স্থানীয় বাজার থেকে ডলার ক্রয় করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় এপ্রিলে দেশে ডলার বিনিময় হার ও পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার ডলার বিক্রির পদক্ষেপ নিয়েছে। এ সময় প্রায় ১৮ কোটি ডলার বাজারে ছেড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া অনেক ব্যাংক ডলারের আন্তঃব্যাংক বিনিময় হারের চেয়ে দেড় থেকে ২ টাকা বেশিতে আমদানির মূল্য পরিশোধ করেছে। বর্তমানে ডলারের আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা।
চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর বিশ্ব অর্থনীতিতে বিপর্যয়ের কারণে গত মাসে দেশে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমেছে যথাক্রমে ১৮ দশমিক ২৯ ও ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ব্যাংকাররা বলছেন, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি বাজারে ডলার বিক্রি বাড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব মাসেই রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। করোনার প্রভাবে মার্চ থেকে প্রবাসী আয় কমতে শুরু করেছে। যদিও জুলাই-মার্চ সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ১ হাজার ৩৭৮ কোটি ডলারে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময় এ অঙ্ক ছিল ১ হাজার ১৮৭ কোটি ডলার।
দেশ চলতি অর্থবছর ২ হাজার কোটি ডলার রেমিট্যান্স আয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে বলে গত মাসে এক অনুষ্ঠানে আশা প্রকাশ করেছিলেন গভর্নর ফজলে কবির। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে ইতিমধ্যেই রেমিট্যান্স প্রবাহ গতি হারিয়েছে।সূত্র:দেশরূপান্তর।
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.