ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
‘২০১২ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বিজিবি সদস্যসহ সামরিক বেসামরিকসহ ১৯ জন নিখোঁজ হন। এর মধ্যে বিজিবির নায়েক মিজানুর রহমানের লাশ চার দিন পর ফেরত দিলেও লুট করা বিজিবির ১১ অস্ত্র আজও ফেরত দেয়নি মিয়ানমার সেনাবাহিনী। যদিও অনেক ফ্ল্যাগ মিটিং হয়েছে, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ১০ বছরেও সেসব অস্ত্র ফেরত পায়নি বিজিবি।’
সেই লুট করা অস্ত্র ফেরত পাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছিল কিনা, জানতে চাওয়া হয় মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ বলেন, ‘এমন অনেক ঘটনা আছে, যেগুলো অনেক পুরনো দিনের। এসব ঘটনা নিয়ে সমাধান আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তবে হঠাৎ করে সমাধান হয় না।’
গতকাল মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দফতরের শহীদ ক্যাপ্টেন আশরাফ হলে সংবাদ সম্মেলন করেন বিজিবি মহাপরিচালক। গত ২৩ থেকে ২৭ নভেম্বর পাঁচ দিনব্যাপী বিজিবি-বিজিপি সীমান্ত সম্মেলন শেষ দেশে ফিরে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান তিনি।
এ সময় বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস ও ট্রেনিং) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এম এম খায়রুল কবির, কক্সবাজারের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজম উস সাকিব, পরিচালক (অপস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়েজুর রহমানসহ স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
করোনা মহামারির জন্য দুই বছর ১০ মাস পর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে বিজিপি-বিজিবির অষ্টম সীমান্ত সম্মেলন হয়। এ সময় দুই দেশের মধ্যকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সম্মেলনে ১২টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সীমান্তে বিজিবির নায়েক খুন, অস্ত্র লুটের ঘটনার সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের কোনও সংযোগ ছিল কি না, জানতে চাইলে বিজিবি প্রধান বলেন, ‘সীমান্তে মাদক, বিচ্ছিন্নতাবাদী অপতৎপরতা রোধসহ সবকিছুর ব্যাপারে আমাদের নীতি জিরো টলারেন্স। আমাদের অবস্থান সব সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে। শুধু আরসা বা আরএসও-এর মতো দুই একটি নামেই আমরা সীমাবদ্ধ যেন না থাকি। আমরা এদের কোনও কার্যক্রম সহ্য করবো না। সে জন্য আমরা সবসময় সাবধান আছি। ঘুমঘুম সীমান্তের কোনারপাড়ায় আমাদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক ছয়টি পোস্ট রয়েছে। সারা দিন মিলে এক প্লাটুন বিজিবি ডিউটিতে রয়েছে। যাতে কোনও অপরাধী ও অবৈধ অনুপ্রবেশ না ঘটে।’
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন থেকে ইতিবাচক বলা হলেও সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় নিয়ে যখন আলোচনা হয়, তখন যে বলে সে গুরুত্ব সহকারে বলে। আর যিনি বিষয়টি শুনছেন, তিনিও কেমনভাবে নিচ্ছেন, সেটি বোঝা যায়। আমরা যেসব বিষয় বলেছি, তারা প্রতিটি জায়গায় অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে শুনেছেন। এসব গ্রহণ করায় আমরা ইতিবাচক মনোভাব দেখতে পেয়েছি এবং তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’
মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ বলেছেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। বিভিন্নভাবে তাদের আলোচনায় বারবার সেখানে (রাখাইনে) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেছে তারা। সেখানে তাদের যে মিস ফায়ার চলেছে, সেটা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে বলে জানিয়েছে তারা। বিজিপির দাবি, এটা করে তারা সেখানে মানবিক বিপর্যয় রোধ করার চেষ্টা করছে। আগের তুলনায় রাখাইনের পরিস্থিতি ভালো। এটা রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার জন্য ইতিবাচক।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের বলা হয়েছে বাংলাদেশ অস্থায়ীভাবে তাদের শেল্টার দিয়েছেন শুধু মানবিক কারণে। এ বিষয়গুলো বলার পরে তারা এটা গ্রহণ করে আলোচনা করে কাজ করার কথা বলেছেন। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও কাজ করছে। আমরা আশা করতেই পারি তাদের কার্যক্রম চলমান আছে।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়টা একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া উল্লেখ করে বিজিবি প্রধান বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে তারা এ বিষয়টা নিয়ে কাজ করছে। এই দেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, এমন ভিডিও আমরা তাদের দেখিয়েছি। যুব জনগোষ্ঠীকে টেকনিক্যাল শিক্ষা দিয়ে ম্যানপাওয়ারে রূপান্তর করছি। যাতে তারা নিজেদের আবাসে ফিরে যাওয়ার পর নিজেদের চালিয়ে নিতে পারে।’
এ ছাড়া মাদক ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স রয়েছে উল্লেখ করে বিবিজির মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা মাদক কারবারিদের শনাক্ত করতে পারবো। মাদকের ফ্যাক্টরির ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ধ্বংস করার জন্য বলেছি। আমাদের দৃঢ় অবস্থান সব সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে। সবগুলোর বিরুদ্ধেই জিরো টলারেন্স রয়েছে। এরা যেন আমাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য মিয়ানমার সীমান্তে ছয়টি পোস্টে এক প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন আছে, যেন সন্ত্রাসীরা পাসিং বা অন্যান্য অপরাধ না করতে পারে।’
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.