প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
দেশের উন্নয়নে অভ্যন্তরীণ উৎসগুলো থেকে প্রয়োজনীয় সম্পদ সংগ্রহ করা, আর এর জন্য ভ্যাটের মতো পরোক্ষ করের উপর নির্ভরতা না বাড়িয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের বাইরে অবৈধ অর্থ পাচার বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন অধিকার ভিত্তিক নাগরিক সমাজ। আজ সুশীল সমাজ, শ্রমিক ও কৃষক সংগঠনের নেটওয়ার্ক ইক্যুইটিবডি আয়োজিত ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহে অবৈধ অর্থ পাচার রোধকে অগ্রাধিকার দিতে হবে’ র্শীষক সংবাদ সম্মেলনে দেশে অবৈধ অর্থ পাচার, কালো টাকার দৌরাত্ম এবং ঋণ খেলাপী বৃদ্ধির প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন ইক্যুইটিবিডির রেজাউল করিম চৌধুরী।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ট্রাস্টের আহসানুল করিম। অন্যান্যের মধ্যে এতে আরও বক্তব্য রাখেন ইক্যুইটিবিডির সৈয়দ আমিনুল হক ও ফেরদৌস আরা রুমী, ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের উন্নয়ন শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম, কেয়ার বাংলাদেশের আমানুর রহমান এবং সিএসআরএল’র প্রদীপ কুমার রায়।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে মো. আহসানুল করিম বলেন, সরকার ২০২০-২১ অর্থ বছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, আর এই ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাপকভাবে নির্ভর করছে কর আদায়, বিশেষত ভ্যাটের মতো পরোক্ষ কর এবং ব্যাংক ঋণের উপর। অথচ সরকার অবৈধ অর্থ পাচার বন্ধ করাটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, যেখান থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় সম্ভব এবং ব্যাংক ঋণ ও পরোক্ষ করের উপর নির্ভরতা হ্রাস করা যায়। ওয়াশিংটন ভিত্তিক গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই)-মার্ক ২০২০ এর প্রতিবেদন অনুসারে ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল সময়কালে বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি, ঘুষ, অবৈধ বাণিজ্যিক লেনদেন এবং কর ফাঁকি দিয়ে মোট ৪ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে, গড়ে প্রতি বছর পাচারের পরিমাণ প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের দুইগুণ বা স্বাস্থ্য খাতের জন্য দুই বছরের বাজেটেরও বেশি। এই অর্থ পাচার রোধ করা গেলে উন্নয়ন কর্মসূচিতে বিনিয়োগের জন্য অতিরিক্ত রাজস্ব হিসেবে সরকার প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকার আয় করতে পারতো।
মূল প্রবন্ধ থেকে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ তুলে ধরা হয়, সেগুলো হলো: (১) দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, কালো টাকা উপার্জন এবং অবৈধ অর্থ পাচার রোধে সরকারকে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে, (২) পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশের সাথে আন্ত:সরকার চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। যেমন সুইজারল্যান্ডের সাথে চুক্তি, যাতে সেদেশের ব্যাংকে বাংলাদেশী এবং বাংলাদেশে থাকা বিদেশীরা কী পরিমাণ অর্থ সে দেশে পাচার করেছে সে তথ্য সরকার পেতে পারে, এবং পাচার হওয়া অর্থ সরকার ফিরিয়ে আনতে পারে, (৩) এক্ষেত্রে ভারত সরকারের নেওয়া নেওয়া পদক্ষেপ, যেমন ডিমোনিটাইজেশন বা অবৈধ অর্থ বাজেয়াপ্ত করার মতো উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে, ((৪) অর্থ লুট ও অর্থ পাচার এবং পানামা পেপার কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, দুনীতি আর অবৈধ অর্থ পাচার বন্ধে সরকারের উদ্যোগ তেমন একটা চোখে পড়ছে না। সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও প্রকৌশলীসহ রাষ্ট্রের সকল খাতেই পুঁজিবাদের একটি দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছে।
আমানুর রহমান বলেন, ব্যাংক লেনদেনের বিষয়ে সরকারের প্রচুর আইন কানুন আছে, কিন্তু সেগুলো ধনীদের উপর খুব কমই প্রয়োগ করা হয়।
তিনি ই-কমার্সে ১০০% বিদেশী বিনিয়োগ অনুমোদন দেওয়ার সাম্প্রতিক সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন।
সৈয়দ আমিনুল হক বলেন, শেয়ারবাজারে বা সম্পত্তি ক্রয়ে (জমি / ফ্ল্যাট) কালো টাকা বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া উচিত হবে না। ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, কর প্রদান পদ্ধতি সহজ করতে হবে যাতে সেটা নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং নারী ক্ষমতায়নে সহায়ক হয়।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, দরিদ্র গার্মেন্ট শ্রমিক আর প্রবাসী শ্রমিকদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মূদ্রা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতার চেতনা এবং সম্পদ পুনর্বণ্টন সম্পর্কিত ন্যায় বিচারের বিরোধী।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.