খেলাধুলা ডেস্ক:
চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্ট জিততে হলে ৫১৩ রান করতে হবে; হার এড়াতে পাক্কা দুই দিন ক্রিজ আঁকড়ে পড়ে থাকতে হবে- বাংলাদেশের জন্য দুটো লক্ষ্যই অসম্ভব! শুক্রবার তৃতীয় দিন শেষ সেশনের শেষ আধাঘণ্টায় অসম্ভব সেই লক্ষ্য ছোঁয়ার মিশন শুরু করেছে স্বাগতিক দল। জাকির হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্তর অবিচ্ছিন্ন জুটি শেষ বিকালে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ১২ ওভার ব্যাটিং করে তারা বিনা উইকেটে ৪২ রান জমা করেছেন। শনিবার সকালে এই দুইজন ৪৭১ রান পিছিয়ে থেকে নতুন করে শুরু করবেন।
চতুর্থ ইনিংসে ৫১৩ রান চেজ করার ইতিহাস নেই বাংলাদেশের। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ২১৭ রানই সর্বোচ্চ তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট জিততে কিংবা ড্র করতে হলে তাই ইতিহাস গড়তে হবে। তবে ক্রিকেট তো গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। শান্ত-জাকিররা চতুর্থদিনের শুরুটা ভালো করতে পারলে হয়তো একটা সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে।
লোকেশ রাহুল যখন ইনিংস ঘোষণা করলেন, তখনও প্রায় ১২ ওভার বাকি। প্রথম ইনিংসে এই ১২ ওভারেই বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়েছিল। তৃতীয় দিনের শেষ বিকালে এই আশঙ্কা থাকলেও পরে দেখা গেলো স্বাগতিকদের আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং। প্রথম ইনিংসে গোল্ডেন ডাক মারা শান্ত দারুণ ব্যাটিংয়ে ইনিংসের সূচনা করলেন। তার সঙ্গে দারুণ টেম্পারমেন্টের পরিচয় দিলেন অভিষিক্ত জাকির হাসানও। দিনশেষে পাশমার্ক নিয়ে তারা যখন ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন, তখন স্কোরবোডে বিনা উইকেটে জমা পড়েছে ৪২ রান। নতুন দিনে শান্ত ২৫ ও জাকির ১৭ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামবেন। এমন দারুণ শুরুর পর চতুর্থদিন সকাল বেলায় তাদের দিকেই তাকিয়ে পুরো বাংলাদেশ।
তবে তৃতীয় দিন সকালের দৃশ্যটা ছিল অস্বস্তিকর। প্রথম ইনিংসে তাদের ১৫০ রানে অলআউট করে ছেড়েছে ভারতীয় দল। সফরকারী বোলারদের সামনে বাংলাদেশের ব্যাটাররা অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন। বাংলাদেশ ফলোঅনে পড়লেও প্রথম ইনিংসে ২৫৪ রানের লিড নিয়ে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে আবার ব্যাট করতে নামে। এই ইনিংসেও বাংলাদেশের সামনে রানের পাহাড় গড়ে তারা। ২৫৮ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করলে ভারতের লিড দাঁড়ায় ৫১২। শুভমান গিলের সেঞ্চুরির পর লোকেশ রাহুল ইনিংস ঘোষণার জন্য শুধু চেতেশ্বর পূজারার সেঞ্চুরির অপেক্ষায় ছিলেন। তার সেঞ্চুরি পূরণ হতেই ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন ভারতীয় অধিনায়ক। শুভমান ১১০ রান করে আউট হলেও পূজারা ১০২ রানে অপরাজিত থেকেছেন। সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলির ব্যাট থেকে আসে ২৯ বলে ১৯ রানের অপরাজিত ইনিংস।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগের দিন ৮ উইকেটে ১৩৩ রান নিয়ে দিন শেষ করেছিল স্বাগতিকরা। শুক্রবার সকালে ৫০ মিনিটের মতো ব্যাটিং করে আর মাত্র ১৭ রান যোগ করতে পারেন মিরাজ-এবাদত-খালেদ। ভারতের ৪০৪ রানের জবাবে স্বাগতিক দল অলআউট হয়েছে ১৫০ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের বোলারদের খুব একটা সুযোগ দেয়নি ভারতের টপ অর্ডার।
এই ম্যাচে বাংলাদেশের আরেক প্রতিপক্ষ ছিল ইনজুরি। পিঠের সমস্যায় মাঠে ছিলেন না এবাদত হোসেন। সাকিবতো প্রথম ইনিংসে করতে পেরেছেন মাত্র ১২ ওভার। দ্বিতীয় ইনিংসেও বোলিং করতে পারেননি। কার্যত তিন বোলারকে দিয়েই আক্রমণ পরিচালনা করতে হয়েছে। চতুর্থ বোলার হিসেবে ইয়াসির আলীকে ব্যবহার করেছেন। বাদ যাননি উইকেট কিপার ব্যাটার লিটন দাসও। যদিও কেউই সাফল্য এনে দিতে পারেননি। তবে ইয়াসির উইকেট পেতে পারতেন। আম্পায়ার জোরালো আবেদনে সাড়া না দিলে সাকিব রিভিউ নিয়েছিলেন। ভেতরে ঢোকা বল শুভমান গিলের ব্যাটের ফাঁক গলে পায়ে আঘাত হানে। ইম্প্যাক্ট কোথায় সেটাই হয়তো দেখার ছিল আম্পায়ারের। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার জানান, ডিআরএস অফলাইনে থাকায় পরীক্ষা করতে পারছেন না। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় তাতে ভীষণ হতাশ হতে হয়েছে পুরো দলকে। ওই সময় শুভমান গিলকে ফেরানো গেলে হয়তো ভারতীয় স্কোরবোর্ডে এর প্রভাব পড়তো।
বৃহস্পতিবার লেট অর্ডারের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ভারত প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ করেছে ৪০৪ রান। চেতেশ্বর পূজারা-শ্রেয়াস আইয়ারকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করতে পারলেও অষ্টম উইকেটে কুলদীপ যাদব ও রবীচন্দ্রন অশ্বীনের ৮৭ রানের জুটি বিপদে ফেলে দেয় স্বাগতিকদের। ওই জুটির পর উমেশ যাদবের ১০ বলে ১৫ রানের ইনিংসে ৪০৪ রান তুলে ফেলে সফরকারীরা। অশ্বিনের ব্যাট থেকে ৫৮ ও কুলদীপের ব্যাট থেকে আসে ৪০ রানের ইনিংস। একাধিক জীবন পাওয়া শ্রেয়াস আইয়ার ৮৬ ও চেতশ্বর পূজারা খেলেছেন ৯০ রানের ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত প্রথম ইনিংসে: ১৩৩.৫ ওভারে ৪০৪ (পূজারা ৯০, শ্রেয়াস ৮৬, অশ্বিন ৫৮, কুলদীপ ৪০; মিরাজ ৪/১১২, তাইজুল ৪/১৩৩), দ্বিতীয় ইনিংসে ৬১.৪ ওভারে ২৫৮/২ ডি. (গিল ১১০, পূজারা ১০২*, কোহলি ১৯*; খালেদ ১/৫১, মিরাজ ১/৮২)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে: ৫৫.৫ ওভারে ১৫০ (মুশফিক ২৮, মিরাজ ২৫, লিটন ২৪; কুলদীপ ৫/৪০, সিরাজ ৩/২০) দ্বিতীয় ইনিংসে: ১২ ওভারে ৪২/০ (শান্ত ২৫*, জাকির ১৭*)
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.