জিকির উল্লাহ জিকু
বিস্ফোরক দ্রব্য, ডাকাতি, হত্যা প্রচেষ্টা ও আইসিটি মামলার আলোচিত আসামী কিশোর গ্যাং লিডার রিফাত উদ্দিন প্রকাশ ফুতাইয়াকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াল মহেশখালীর থানার ওসি প্রনব কুমার চৌধুরী। তাও আবার নিজের বাসায় মিরসরাই।
এনিয়ে মহেশখালীতে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সচেতন মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মহেশখালী থানার একজন সর্বোচ্চ পর্যায়ের শান্তি-শৃঙ্খলা, জান-মালের রক্ষকের সাথে এমন দাগী আসামীর সাথে কী এমন মধুর সম্পর্ক?
জানাযায়, জেল ফেরত রিফাত উদ্দিন প্রকাশ ফুতাইয়ার নামে মহেশখালী থানায় ৪ ফেব্রæয়ারি দায়ের হয় সরকার বিরুধী বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা নং ৬/১৮, ২৫ অক্টোবর ২১ ইং মহেশখালী থানায় ডাকাতি ও হত্যা প্রচেষ্টা মামলা ৩০৫/২১, এবং চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইবুন্যাল আদালতের মামলা ০৪/২১ রয়েছে। তার মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা নং ৬/১৮ মহেশখালী থানায় রুজুকৃত (তৎকালীন এসআই ইমাম হোসেন বাদী) মামলায় প্রায় তিন মাস জেল কেটেছেন। বর্তমানে ওই মামলা কক্সবাজার জেলা আদালত স্পেশাল ট্রাইবুন্যাল-২ এ বিচারাধীন রয়েছে। অপর দুই মামলার আইসিটি মামলাটি মহেশখালী থানায় তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন ওসি তদন্ত (অফিসার ইনচার্জ তদন্ত)। ডাকাতি ও হত্যা প্রচেষ্টা মামলাটি ফুতাইয়াকে সহ তদন্তকর্মকর্তা আদালতে চার্জসীট দাখিল করেছেন বলে জানান বাদী মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন।
[caption id="attachment_52065" align="alignnone" width="374"] গত বছর ডিসেম্বর মাসে সাবেক ইউএনও মাহফুজুর রহমানের সান্নিধ্য পান, তখনও তথ্যানুয়ায়ী জামিনে ছিলেন না রিফাত প্রকাশ ফুতাইয়া।[/caption]
জানতে চাইলে ডাকাতি ও হত্যা প্রচেষ্টা মামলার বাদী মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন বলেন, (সাবেক মহেশখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার) গত বছর অক্টোবরে আমার নিজ মালিকানাধীন ঘোনায় এই রিফাত উদ্দিন প্রকাশ ফুতাইয়া তার কিশোং গ্যাং নিয়ে ঘোনায় আক্রমণ করে ঘোনা ডাকাতি করে। ওইদিন সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বাঁচতে পারলেও বর্তমানে তার কিংশোর গ্যাং নিয়ে অব্যাহত প্রাণনাশের হুমকিতে আছি। এমন একজন দাগী আসামীর সাথে মহেশখালী থানার ওসির সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক দেখে অবাক হয়েছি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ভাবছি কিভাবে রক্ষা হবে মহেশখালীর আইনশৃঙ্খলা।তিনি আরো জানান, মহেশখালী পৌরসভা কেন্দ্রিক রিফাত ফুতাইয়ার কিশোর গ্যাং ও রয়েছে। এরকম হয়ে থাকলে ন্যায় বিচারের প্রাপ্তিতে নেগেটিভ ম্যাসেজ যাবে সমাজে।
মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রনব কুমার চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি রিফাত প্রকাশ ফুতাইয়াকে সাংবাদিক হিসেবে চিনেন। তার নামে বিস্ফোরকদ্রব্য, ডাকাতি-হত্যা প্রচেষ্টা এবং আইসিটি মামলা আছে জানেনা। সরকার বিরুধী বিস্ফোরকদ্রব্য মামলার জেল ফেরত আসামী, আরো দুই মামলার জামিন না নেওয়া আসামীর সাথে এমন গভীর সম্পর্ক ও দাওয়াত দিয়ে সর্ম্পকে প্রকাশ করা কতটা আইন সংগত তার জবাবে তিনি বলেন, আমি তো আপনাকে রিপোর্ট না করতে বলতে পারবনা, আপনি যা রিপোর্ট পেয়েছেন তা লিখেন।
অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রনব কুমার চৌধুরীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার একটু পরেই অভিযুক্ত রিফাত প্রকাশ ফুতাইয়া প্রতিবেদককে ফোন দিয়ে ঘটনার বিষয় সত্যতা স্বীকার করে বলেন সে ছাড়া তার মতো আরো দুইজন আইসিটি মামলার আসামী হাসান ও রুবেল ওই দাওয়াতে ছিলেন। সে এবিষয়ে অনুতপ্ত বলে একদিকে ক্ষমা চান। অপর দিকে হুমকি স্বরূপ “রিপোর্ট করা না করা এখন আপনার বিষয়” বলে লাইন কেটে দেন।
[caption id="attachment_52066" align="alignnone" width="255"] সরকারের মেগাপ্রকল্প মেট্টোরেল উদ্বোধনের পর রিফাতের স্ট্যাটাস।[/caption]
কক্সবাজার জেলা পুলিশের এসপি মো. মাহফুজুল ইসলাম পিপিএম (বার) জানান, একজন ওসি বা তদন্তকর্মকর্তা মামলা এবং তথ্যের স্বার্থে জামিনপ্রাপ্ত যেকারো সাথে কথা বলতে পারেন। জামিনপ্রাপ্ত নন এমন আসামির সাথে যদি স্টেশনের বাইরে দাওয়াত করে আপ্যায়ন করে খাওয়ায় এটা উনার দায়িত্ব।এখানে আমার এখতিয়ার বা বলার কিছু নেই।
জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও জেলার বারের একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, জামিন প্রাপ্ত নন এমন আসামীর সাথে ওসি বা তদন্ত কর্মকর্তার সাথে এমন দহরম মহরম সর্ম্পক আইনত করা যায়না। তদন্তের স্বার্থে কথা বলা এটা এই দাওয়াতের ছবি থেকে বুঝা যাচ্ছেনা। এমন কাজ আইনের সঠিক পথ হারাবে।
উল্লেখ্য, রিফাত উদ্দিন প্রকাশ ফুতাইয়া মহেশখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ঘোনাপাড়ার মৃত শামসোদ্দোহার পুত্র। ছাত্রদরের নেতা হিসেবে পরিচয় আছে তার। তার নামে মহেশখালী থানায় ২টি এবং চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল কোর্টে আইসিটি মামলা সহ মোট ৩টি মামলা রয়েছে। স্থানীয় অধিবাসী গিয়াস উদ্দিন জানান এলাকায় রয়েছে একটি কিশোং গ্যাং সে ওই গ্যাংয়ের লিডার। ওইসব অপরাধ ঢাকতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অপকৌশলে মহেশখালী থানার ওসির সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলে যার ফলে মহেশখালী থানার ওসি মায়ের মেজবানে দাওয়াত পায়।
যে কারণে আইসিটি মামলা হয়:
স্থানীয় একটি সূত্র জানান, রিফাত, হাসান, রুবেল সহ সংঘবদ্ধ চক্রটি কোভিটকালে রমজানের সময় চরপাড়ার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহেশখালী কলেজের একজন প্রভাষকের কাছে তাদের অনৈতিক আবদার রক্ষা না হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, অনলাইনে অসামাজিক, মানহানিকর, কুরুচিকর মিথ্যা তথ্য লিখে অনেক হয়রানি করে। যার কারণে ওই প্রভাষক আবু সওয়ার ৫ মে ২১ ইং তারিখ সাইবার ট্রাইব্যুনাল, চট্টগ্রামে মামলাটি দায়ের করেন। যার তদন্তে রয়েছেন তদন্ত ওসি মহেশখালী। কিন্তু পরে দেখা যায় ওই ঘটনাটি বিষয়ে মহেশখালী থানা ও কোর্টে ওই শিক্ষক জড়িত নয় মর্মে প্রমানিত হয়। অতি সুকৌশলে ওইচক্রটি থানার সাথে সম্পর্ক আছে ওট প্রকাশ করে অব্যাহত হুমকির মধ্যে রেখেছেন বলে জানাযায়।
দাওয়াতে ছিলেন এমন একজনের কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে বলেন, গত ২৭ ডিসেম্বর দাওয়াতটি ছিল মুলত ওসি প্রনব কুমার চৌধুরীর মায়ের মৃত্যুর পর সামাজিক অনুষ্ঠান মেজবান। ওই দাওয়াতে মহেশখালী থেকে বাছাই করা গুটিকয়েকজন সাংবাদিকদের দাওয়াত দেন ওসি। দাওয়া পেয়ে তারা মহেশখালী থেকে গাড়িযোগে মিরসরাই যান। পথে পথে সেলফি দিয়ে জানান দিয়ে।
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.