ভয়েস প্রতিবেদক, নাইক্ষ্যংছড়ি:
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নাইকংছড়ি সীমান্তের শুন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের দুই বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ গোলাগুলি এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গোলাগুলিতে এক রোহিঙ্গা নিহত দুই জন আহত হয়েছে। তবে হতাহতের সংখ্যা আরো বেশি বলে স্হানীয় সুত্র জানিয়েছে। আজ ভোর থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ গোলাগুলির পর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পটির বিভিন্ন ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। শুন্যরেখার এই ক্যাম্পটিতে পাঁচ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বসবাস করে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে শুন্যরেখার এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পটিতে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপ আরসার ঘাঁটি গড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আজ বুধবার ভোর রাত থেকে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে বলে দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা মোবাইলে জানিয়েছেন। তবে সরকারি বক্তব্য দেয়নি তিনি।
গণমাধ্যম কর্মীদের তিনি জানান ভোর থেকে তুমব্রু সীমান্তের শূণ্যরেখায় থেমে থেমে গোলাগুলির খবর স্থানীয়দের মাধ্যমে জেনেছেন। তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ইউএনও আরও বলেন, ঘটনাটি যেহেতু শূন্যরেখায় সেখানে আন্তর্জাতিক রীতি মতে বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। তারপরও সীমান্তের উদ্ভূদ পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং প্রশাসন এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছে।
দুপুরের দিকে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কুতুপালং আশ্রয়শিবির সংলগ্ন এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় বলে জানান উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী।
তিনি বলেন, এ সময় হাসপাতালের চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত রোহিঙ্গার নাম হামিদ উল্লাহ (২৭)। আর আহত হয়েছেন মহিদ উল্লাহ (২৫)। আহত এক রোহিঙ্গা শিশু এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সকাল থেকে অব্যাহত গোলাগুলির শব্দ শুনা যাচ্ছে। সেখানে কী হচ্ছে বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু কোনারপাড়া সহ আশেপাশের স্থানীয় বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে রয়েছে।
শূন্যরেখার ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা দিল মোহাম্মদ বুধবার জানিয়েছেন রোহিঙ্গাদের দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। ভোর ৬টার পর থেকে শুরু হওয়া এ গোলাগুলি দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অব্যাহত আছে।
তবে এতে কেউ হতাহত হয়েছে কি-না তা নিশ্চিত নন এই কমিউনিটি নেতা।
তবে এ ব্যাপারে সকাল থেকে চেষ্টা করেও বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরীকে মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আর কক্সবাজারের র্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম ও আইন শাখা) এএসপি মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান তমব্রু সীমান্ত বা তার আশপাশে র্যাবের কোনো প্রকার অভিযান নেই। সীমান্তে র্যাব অভিযান করার কথাও না।
রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা দিল মোহাম্মদের জানান ভোরে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপ রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও) সদস্যরা কোনারপাড়া শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এসে সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে। পরে তা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরেও ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে আধিপত্য বিস্তারের জেরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে প্রকৃত কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ক্যাম্পের বেশ কয়েকটি বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে দিল মোহাম্মদ জানান।
গোলাগুলি সংঘর্ষ এবং অগ্নিকান্ডের পর থেকে ক্যাম্পের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন উল্লেখ করে রোহিঙ্গা নেতা আরও বলেন, অনেকে আশ্রয়শিবিরের ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন। অনেকেই আবার পালিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে গতকাল মংগলবার রাতে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ধামনখালী সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের মাদক কারবারিদের সাথে বিজিবির মধ্যে গোলাগুলি হয়।
এ ব্যপারে বিজিবি পুলিশ কিংবা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সরাসরি বক্তব্য দেয়নি।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.