ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
এবার বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) নির্মিত কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস সেন্টার ‘স্যান্ডর’। গত দুই দিন ধরে প্রতিষ্ঠানটির দরজায় ঝুলছে বাংলা এবং ইংরেজিতে লেখা পৃথক দুটি বন্ধের নোটিশ। তবে ঠিক কখন থেকে সেবা বন্ধ করা হবে, এ বিষয়ে কোনও কিছু উল্লেখ করা হয়নি। নোটিশে বলা হয়েছে, ‘সরকারের কাছে প্রতিষ্ঠানটির ডায়ালাইসিস ফি বাবদ ৩১ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বকেয়া টাকার কারণে কাঁচামাল কিনতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।’ এর ফলে যেকোনও সময় ‘বন্ধ করে দেওয়া’ হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
তবে প্রতিষ্ঠানটিতে সেবা নিতে আসা রোগীরা বলছেন, ‘এটা কেবলই প্রতিষ্ঠানটির অজুহাত, সরকারের কাছ থেকে বকেয়া টাকা আদায়ে রোগীদের জিম্মি করার ফন্দি মাত্র। এর আগেও প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া টাকা আদায়ের কথা তুলে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ করে দিয়েছিল। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন ডায়ালাইসিস সেবা গ্রহণকারী রোগীরা। এবারও কাঁচামাল সংকটের কথা বলে আগের পথই অনুসরণ করছে স্যান্ডর।’
স্যান্ডর চট্টগ্রামের চিফ এক্সিকিউটিভ মহিদুল আলম বলেন, ‘এখানে চার ধাপে দৈনিক ৯০ থেকে ১০০ সেশন কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস করানো হয়। সে হিসাবে বছরে প্রায় ৩৬ হাজার সেশন ডায়ালাইসিস করানো হয়। তবে সরকারের সঙ্গে চুক্তি আছে চট্টগ্রামে সাড়ে ৬ হাজার সেশন ডায়ালাইসিস করানো। ৩৬ হাজার সেশনের মধ্যে সরকারের সাড়ে ৬ হাজার বাদ দিলে আরও ২৯ হাজার থেকে ৩০ হাজার সেশন থাকে। এরমধ্যে মাত্র ২ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার সেশনের রোগীরা ভর্তুকি ছাড়াই চিকিৎসা পেয়ে থাকেন। বাকী আরও ২৭ হাজারের মতো সেশন ভর্তুকিতে করতে হয়। ভর্তুকির বাকি টাকা সরকারের দেওয়ার কথা।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভর্তুকি ডায়ালাইসিস চার্জ গত বছর ছিল ৫১০ টাকা। এবার ৫ শতাংশ বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩৫ টাকা। একইভাবে ভর্তুকি ছাড়া গত বছর ছিল ২ হাজার ৭৮৫ টাকা। বর্তমানে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয়েছে ২ হাজার ৯৩৫ টাকা। আমরা চেয়েছিলাম প্রতিটি রোগীর কাছে অর্ধেক ভর্তুকি নিয়ে এবং অর্ধেক ভর্তুকি ছাড়া সেবা দিতে। ১ জানুয়ারি থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর রোগী ও তাদের স্বজনরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আগের মতো ডায়ালাইসিস সেশন পরিচালনার জন্য। আগে তিন বার ভর্তুকি দিয়ে করানোর পর একবার ভর্তুকি ছাড়া করানো হতো, এখনও একইভাবে সেবাদান চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলিয়ে ডায়ালাইসিস বাবদ ৩১ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। টাকার কারণে কাঁচামাল কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে বকেয়া টাকা না পেলে যে কোনও সময় ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এজন্য রোগীদের আগাম সতর্ক করতে দরজায় এ নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টারের সামনে টাঙানো নোটিশে বলা হয়, ‘জরুরি দৃষ্টি আকর্ষণ: গত নভেম্বর ২০২২ থেকে অনেক কাঁচামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আমাদের আংশিক এবং কেউ কেউ পূর্ণাঙ্গ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। আমরা আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন বন্ধ রেখে নগদ মালামাল ক্রয় করে ডায়ালাইসিস সেবা চালু রাখলেও বর্তমানে আমাদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ না থাকায় মালামাল ক্রয় কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না।’
এতে আরও বলা হয়, ‘বিগত বছরগুলোতে আমাদের সার্ভিসের বিপরীতে বকেয়া ৩১ কোটি টাকা। এমতাবস্থায় ডায়ালাইসিস এর প্রয়োজনীয় কাঁচামাল স্বল্পতায় আগামী দু-একদিনের মধ্যে সেবা বিঘ্নিত হতে পারে। যেহেতু ডায়ালাইসিস সেবা অত্যন্ত স্পর্শকাতর জরুরি সেবা সেহেতু সংশ্লিষ্ট সকল রোগীদের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘স্যান্ডরের সেবা বন্ধ হতে পারে এ ধরনের নোটিশের খবর আমি পেয়েছি। স্যান্ডরের সঙ্গে আমরা সরাসরি সম্পৃক্ত নই। সরকারের কাছে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। বিষয়টি মন্ত্রণালয় দেখছে। আশা করছি সমস্যা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘চমেক হাসপাতালে শিগগিরই ১৩টি মেশিনে ডায়ালাইসিস শুরু হবে। স্যান্ডরের কাছে আছে ৩১টি ডায়ালাইসিস মেশিন। আমরা সেবা দেওয়া শুরু করতে পারলে সমস্যা অনেকটাই কমবে।’
এদিকে আহমেদ ছফা নামে এক কিডনি রোগী জানান, ‘একটি ডায়ালাইসিস মেশিন মাত্র ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা খরচ করলে একটি পরিপূর্ণ ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু করা সম্ভব। একেকটি সেশনে ডায়ালাইসিস করতে ১ হাজার টাকা থেকে ১২শ’ টাকার কাঁচামাল প্রয়োজন হয়। তার ওপর জনবল। কোনও রোগী ফ্রিতে ডায়ালাইসিস করান না। সকলেই ভর্তুকির ৫৩৫ টাকা দিচ্ছে। যাদের সামর্থ আছে, তারা ভর্তুকি ছাড়াই করছেন। সরকারের উদাসীনতার কারণে সামান্য কিছু টাকার জন্য স্যান্ডর নামে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে ডায়ালাইসিস সেবা জিম্মি হয়ে পড়েছে।’
এদিকে গত ১ জানুয়ারি থেকে ডায়ালাইসিস ফি বাড়ানোর ঘোষণা দেয় স্যান্ডর। এরপর আন্দোলনে নামে রোগী ও স্বজনরা। ১ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত এ আন্দোলন চলে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে রোগী এবং স্বজনরা চমেক হাসপাতালের সামনের মূল সড়কের উপর অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এতে পুলিশ বাধা দিলে রোগীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। পুলিশ রোগী ও স্বজনদের পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
আন্দোলন থেকে পুলিশ মো. মোস্তাকিম নামে এক কলেজছাত্রকে গ্রেফতার করে। পরে সড়ক অবরোধ করে সরকারি কাজে বাধা দেওয়াসহ নানা অভিযোগে মামলা দায়ের করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। এ মামলায় মোস্তাকিমকে আসামি করা হয়। চারদিন পর মোস্তাকিম আদালত থেকে ছাড়া পান।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.