মুফতি এনায়েতুল্লাহ:
মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত মহিমান্বিত ও কল্যাণময় রাত লাইলাতুল কদর। প্রতি বছর পবিত্র রমজানের ২৬ তারিখ রাতে শবেকদর পালন করা হয়। ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ রাত কাটান। ২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাত কদর হতে পারে। তবে ২৬ রমজানের রাতেই লাইলাতুল কদর আসে বলে আলেমদের অভিমত। শবেকদরের এই রাতে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয় এবং এই রাতকে কেন্দ্র করে পবিত্র কোরআনে ‘আলকদর’ নামে একটি সুরাও নাজিল করা হয়।
লাইলাতুল কদরে আল্লাহতায়ালা মানবজাতির ভাগ্য নির্ধারণ করেন। মানবজাতির মানসম্মান বৃদ্ধি এবং ভাগ্য পুনর্নির্ধারণের জন্য মহান আল্লাহ অধীর আগ্রহে চতুর্থ আসমানে নেমে আহ্বান জানান কে আছো মহিমান্বিত আলোকবর্তিকায় এ রাতে ভাগ্য পরিবর্তন ও পুনর্নির্ধারণ করতে চাও? গোনাহ থেকে মুক্তি চাও?
সৃষ্টিকর্তা ও দয়াময় আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে বিশ্বের মুসলমানদের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও নিজেদের গোনাহ মাফ, আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং সওয়াব হাসিলের আশায় নফল ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আসকারের মধ্য দিয়ে রাতটি অতিবাহিত করবেন। বৃষ্টিহীনতার কারণে মানুষের কষ্ট লাঘব থেকে শুরু করে কায়মনোবাক্যে দোয়া করবেন, যাবতীয় বিপদ, মুক্তি, সম্পদের সুরক্ষা এবং হঠাৎ আসা বিপদ থেকে বাঁচার।
পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুসারে, আল্লাহতায়ালা এ রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই এক রাতের ইবাদত হাজার মাস ইবাদতের চেয়েও অধিক উত্তম। প্রতি বছর রমজানে এই মহিমান্বিত রাত মানবজাতির জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে। এ বিশ্বাসে রমজানের শেষ দশ দিনে ইতিকাফ, তাহাজ্জুদ নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, দান-সদকা, দোয়া-দরুদ ও জিকির-আসকার ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিয়ে তার সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট থাকেন।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) লাইলাতুল কদরে যে দোয়াটি নিজে আমল করেছেন এবং সাহাবিদের উদ্বুদ্ধ করেছেন, তা হলো ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন; তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাসেন, আমাকে ক্ষমা করুন।’
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা এত বেশি যে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এ রাত পাওয়ার জন্য রমজানের শেষ দশ দিন আজীবন ইতিকাফ করেছেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘শবেকদরে হজরত জিবরাইল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট এক দল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত অথবা জিকিরে মশগুল থাকে, তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।’
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যদি তোমরা কবরকে আলোকময় পেতে চাও, তাহলে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থেকে ইবাদত করো।’ মিশকাত
সুনানে আবু দাউদ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেল কিন্তু ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাতে পারল না, তার মতো হতভাগা দুনিয়ায় আর কেউ নেই। কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া না হয়, সেজন্য রাসুল (সা.) শেষ দশ দিনের পুরো সময়টায় ইতিকাফরত থাকতেন। সহিহ মুসলিম
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, শবেকদরকে নির্দিষ্ট না করার কারণ হচ্ছে যাতে বান্দা শুধু একটি রাত জাগরণ ও কিয়াম (নামাজ) করেই যেন ক্ষান্ত না হয় এবং সেই রাতের ফজিলতের ওপর নির্ভর করে অন্য রাতের ইবাদত ত্যাগ করে না বসে। তাই বান্দার উচিত রমজানের শেষ দশ দিনের কোনো রাতকেই কম গুরুত্ব না দেওয়া এবং পুরোটাই ইবাদতের মাধ্যমে শবেকদর অন্বেষণ করা।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.