আলী ওসমান শেফায়েত:
বিয়ে ইসলামের অন্যতম প্রধান সামাজিক বিধান এবং নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। ইসলামে বিয়েকে সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারের দেখা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিয়ে দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।’ সুরা নূর : ৩২
আল্লাহতায়ালা অন্য আয়াতে বলেন, ‘আর তার নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদের্শনাবলি রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।’ সুরা রুম : ২১
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বিয়ে করা আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নত অনুসরণ করল না, সে আমার দলভুক্ত নয়। তোমরা বিয়ে করো, কেননা (হাশরে) আমি তোমাদের নিয়ে অন্যান্য উম্মতের ওপর গর্ব করব।’ ইবনে মাজাহ : ১৮৪৬
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘দুজনের পারস্পরিক ভালোবাসার জন্য বিয়ের মতো আর কিছু নেই।’ ইবনে মাজাহ : ১৮৪৭
‘হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে। কেননা বিয়ে দৃষ্টি ও লজ্জাস্থান হেফাজতের জন্য সবচেয়ে বেশি সহায়ক। আর যে সামর্থ্য রাখে না সে যেন রোজাপালন করে, কেননা রোজা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী।’ সহিহ মুসলিম : ৩৪৬৪
‘তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহর দায়িত্ব। আল্লাহর পথের মুজাহিদ, যে ধার গ্রহীতা তা পরিশোধের চেষ্টা করে এবং যে ব্যক্তি সততা বজায় রাখার জন্য (চরিত্র হেফাজতের জন্য) বিয়ে করে।’ জামে তিরমিজি : ১৬৫৫
ইসলামের নির্দেশনা : পাত্র-পাত্রী নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যে মানুষটির সঙ্গে সারাজীবন অতিবাহিত করতে হবে, তার চারিত্রিক ও নৈতিক বৈশিষ্ট্য জীবনসঙ্গীর ওপর অনেক প্রভাব বিস্তার করে। এ জন্য ইসলামপ্রদত্ত নির্দেশনাগুলো মনে রাখা দরকার। জীবনসঙ্গী নির্বাচনের বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে,
এক. ‘যার দ্বীনদারী ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট, এমন কেউ বিয়ের প্রস্তাব দিলে তার সঙ্গে তোমরা বিয়ে সম্পন্ন করো। তা না করলে পৃথিবীতে ফেতনা দেখা দেবে ও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে।’ জামে তিরমিজি : ১০৮৪
দুই. ‘নারীকে বিয়ে করা হয় চারটি জিনিস দেখে। তার সম্পদ দেখে, বংশমর্যাদা দেখে, রূপ দেখে এবং দ্বীনদারী দেখে। হে মুমিন! তুমি দ্বীনদার নারী বিয়ে করে ধন্য হয়ে যাও।’ সহিহ বোখারি : ৫০৯০
তিন. পুরো দুনিয়াটাই সম্পদ। এর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম সম্পদ হলো- পরহেজগার স্ত্রী।’ -সহিহ মুসলিম : ৩৭১৬
চার. ‘তোমরা নারীদের (কেবল) রূপ দেখে বিয়ে করো না। হতে পারে রূপই তাদের বরবাদ করে দেবে। তাদের অর্থ-সম্পদ দেখেও বিয়ে করো না, হতে পারে অর্থ-সম্পদ তাকে ঔদ্ধত্য করে তুলবে। বরং দ্বীন দেখেই তাদের বিয়ে করো। একজন নাক-কান-কাটা অসুন্দর দাসীও (রূপসী ধনবতী স্বাধীন নারী অপেক্ষা) শ্রেয়, যদি সে দ্বীনদার হয়।’ ইবনে মাজাহ : ১৮৫৯
বর্ণিত হাদিসগুলোর শিক্ষা হলো, পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে দ্বীনদারি ও সচ্চরিত্রকে সর্বাগ্রে রাখা। সৌন্দর্য, অর্থ-সম্পদ ও বংশীয় সমতাও বিচার্য বটে, কিন্তু সবই দ্বীনদারির পরবর্তী স্তরে। দ্বীনদারি ও চরিত্র সন্তোষজনক হলে বাকিগুলোতে ছাড় দেওয়া যায়, কিন্তু বাকিগুলো যতই আকর্ষণীয় হোক, তার খাতিরে দ্বীনদারিতে ছাড় দেওয়ার অবকাশ নেই। আর যদি দ্বীনদারির সঙ্গে অন্যগুলোও মিলে যায়, সে অতি সুন্দর মিলন বটে, কিন্তু তা খুব সহজলভ্যও নয়। তাই সেরকম আশার ক্ষেত্রে মাত্রাজ্ঞানের পরিচয় দেওয়া জরুরি। একজন দ্বীনদার জীবনসঙ্গী আল্লাহর নৈকট্যে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, অন্যথায় দ্বীনের ওপর অবিচল থাকা অনেক কঠিন হয়ে যায়। তাই ইসলামে পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে দ্বীনদারিকে প্রাধান্য দেওয়ার নির্দেশনা পাওয়া যায়।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2024 Coxsbazar Voice. All rights reserved.