ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশকে পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ের টম অ্যান্ড্রুস। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইনে এখনো রোহিঙ্গাদের জীবন ও চলাচলের স্বাধীনতা ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ বিষয়ে টম অ্যান্ড্রুসের বক্তব্য নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার জেনেভা থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সেখানে টম অ্যান্ড্রুস বলেছেন, বাংলাদেশ ‘বিভ্রান্তিমূলক’ এবং ‘বলপ্রয়োগের’ মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে বাধ্য করছে।
টম অ্যান্ড্রুস বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে স্থায়ীভাবে ও স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়ক নয়। সিনিয়র জেনারেল মিন হং হ্লায়েং রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি এখন নিষ্ঠুর এক সামরিক শাসনযন্ত্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যাঁরা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও অন্যান্য মৌলিক অধিকারকে প্রত্যাখ্যান করে চলেছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কর্মকর্তারা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তারিখ উল্লেখ না করলেও প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ১৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পাঠানোর কথা উল্লেখ করেছেন। চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরও ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর কথা। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, প্রথম দফায় লোকজনকে পাঠানোর বিষয়টি শিগগির ঘটতে পারে। যারা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে, তাদের সরকার গ্রেপ্তারের হুমকি, কাগজপত্র জব্দ ও নানা ধরনের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
টম অ্যান্ড্রুস বলেন, শরণার্থীরা ফিরে যেতে রাজি হলে তাদের বিপুল অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতির খবর প্রকাশ পেয়েছে। এমনও অভিযোগ এসেছে যে প্রতিদিন প্রত্যেক রোহিঙ্গার খাবারের বরাদ্দ যখন কমছে, তখন অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যাবাসনে রাজি হওয়া রোহিঙ্গাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রতিশ্রুত অর্থ কোথা থেকে আসবে সেটা স্পষ্ট নয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গাদের নিজেদের গ্রামে ফিরতে দেওয়া হবে না। ২০১৭ সালের গণহত্যা পরিচালনার সময় যে হামলা চালানো হয়েছিল, তখনো অনেক গ্রাম গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মংডুর অভ্যর্থনা ও অন্তর্বর্তীকালীন শিবিরে রাখা হবে। এরপর তাদের নতুন করে তৈরি ১৫টি গ্রামে নেওয়া হবে। রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরে যাওয়ার পর অবাধে চলাফেরা করতে দেওয়া হবে না।
গত মার্চে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ মিয়ানমারের সামরিক জান্তার দুটি প্রতিনিধিদলকে কক্সবাজারের শিবির পরিদর্শনের ব্যবস্থা করেছিল। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী কয়েকজন রোহিঙ্গাকে জোর করে পরিচয় যাচাইয়ের জন্য মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসতে বাধ্য করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ মিলে রোহিঙ্গাদের রাখাইন সফরের আয়োজন করেছিল। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, প্রত্যাবাসনের আয়োজন নিয়ে সাধারণভাবে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে রোহিঙ্গারা। কিন্তু বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছে, রাখাইনে ঘুরে এসে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে।
জাতিসংঘের মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ের টম অ্যান্ড্রুস বলেন, এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা ফিরে গেলে আন্তর্জাতিক আইনে বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন হবে। কারণ রাখাইনে ফিরে গেলে রোহিঙ্গারা ব্যাপকতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি ভবিষ্যতে নৃশংস অপরাধের শিকারে পরিণত হতে পারে।
টম অ্যান্ড্রুস বলেন, ‘তাই বাংলাদেশকে আমি অনতিবিলম্বে এই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পাইলট প্রকল্প স্থগিত করার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কথায় ও কাজে রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তাদানের ব্যর্থতার চক্র থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ এটি রোহিঙ্গাদের জীবিকার পথে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, তাদের ক্ষুধা ও অপুষ্টি অব্যাহত রাখছে এবং রোহিঙ্গা শিশুদের পড়াশোনার সুযোগকে সীমিত করে তুলছে।
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.