সুভাষ সিংহ রায়:
পাকিস্তানের পাঞ্জাবের শিক্ষাবিদ, গবেষক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ড. মালিকা-ই-আবিদা খাত্তাক পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডেইলি টাইমসে ‘বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর গল্প: স্রেফ একটা সেতুর চেয়ে বড় কিছু?’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের স্বাক্ষর বহন করে পদ্মা সেতু। শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের সক্ষমতা আরও একবার জানার সুযোগ পেল বিশ্ব। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যারা বারবার তাদের সক্ষমতা দেখিয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ আন্তর্জাতিক পরিসরে বিনিয়োগ আসার জন্য একটি আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাইকি।বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সরকারের মেয়াদকালেই যমুনা সেতুর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর কাজ সমাপ্ত করা হয়েছিল । গণমাধ্যমে কত রকম সংবাদ দেখছি ।
বিশ্বের আর কোনও সেতু তৈরিতে পদ্মার মতো নদীর এতো তলদেশে গিয়ে পাইল গাঁথতে হয়নি, বসাতে হয়নি এত বড় পিলার। আর পদ্মার মতো স্রোতস্বিনী এমন নদীর ওপর বিশ্বে সেতু হয়েছে মাত্র একটি। পদ্মাসেতু তার অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য বিশ্বের সব চেয়ে ব্যতিক্রমী সেতু হবে। কারণ খরস্রোতার দিক দিয়ে আমাজান নদীর পরই বিশ্বে বাংলাদেশের পদ্মানদীর অবস্থান, যার ওপর দিয়ে সেতু হয়েছে।বিশ্বের আর কোনও সেতু তৈরিতে পদ্মার মতো নদীর এতো তলদেশে গিয়ে পাইল গাঁথতে হয়নি, বসাতে হয়নি এত বড় পিলার। আর পদ্মার মতো স্রোতস্বিনী এমন নদীর ওপর বিশ্বে সেতু হয়েছে মাত্র একটি। পদ্মাসেতু তার অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য বিশ্বের সব চেয়ে ব্যতিক্রমী সেতু হবে। কারণ খরস্রোতার দিক দিয়ে আমাজান নদীর পরই বিশ্বে বাংলাদেশের পদ্মানদীর অবস্থান, যার ওপর দিয়ে সেতু হয়েছে।
মিস্ইনফরশেশন , ডিসইফরমেশনে ছড়াছড়ি। কত রকম বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করতে দেখছি। এখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন বেগম খালেদা জিয়া নাকি পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন । যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু বিএনপি সরকারের কৃতিত্ব । অথচ যমুনা নদীর ওপর সেতু নিমার্ণের সময়কালের ৪৪ মাসের মধ্যে ২৪ মাস শেখ হাসিনার সরকার ছিল আর খালেদা জিয়ার সরকার ছিল ২০ মাসের । তাছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেললাইন ছিল না । শেখ হাসিনার সরকারের প্রথম আমলেই বঙ্গবন্ধু সেতুর সেতুর মূল কাজ হয়েছে । এবং সেই সময়েই শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদের সরকারের সময়ে ১৯৯৮ সালে পদ্মায় সেতু নির্মাণের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়। সমীক্ষা যাচাইয়ের পর ২০০১ সালের ৪ জুলাই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় । তারপর জামাত -বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসে এবং স্বাভাবিক কারনে পদ্মা সেতুর কোনো অগ্রগতি হবে না এটাই ছিল স্বাভাবিক। সেই সরকার ছিল এটা প্রতিহিংসাপরায়ণ সরকার । দেশের স্বার্থ এদের জন্যে বিবেচ্য বিষয় ছিল না ।
যেমন একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিস্কার হয়ে যাবে ।২০০০ সালে শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে কম্পিউটার ক্রয় সংক্রান্ত বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ড সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল । চুক্তি স্বাক্ষরের পর ডাচ সরকার টিউলিপ কম্পিউটারকে কম্পিউটার সরবরাহ ও প্রশিক্ষণের কাজ দেয়। সে অনুযায়ী কাজও শুরু করে প্রতিষ্ঠান। সরকার পরিবর্তন হওয়ায় এটা মন্ত্রিসভায় এসেছিল পুন:অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতার জন্য। সাধারণত: সরকার পরিবর্তন হলেও এ ধরনের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা অটুট থাকে। কিন্তু মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘টিউলিপ কম্পিউটার্স’ নাম শোনা মাত্র বেগম জিয়া ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন ।
তিনি বললেন, এই চুক্তি বাতিল করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষাসচিব বললেন ‘নেদারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের শক্তিশালী সদস্য। বছরে দেশটি বাংলাদেশকে ৩০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়।’ প্রধানমন্ত্রী রেগে গিয়ে বললেন ‘এই চুক্তি বাতিল করতেই হবে।’ একথা বলেই তিনি ক্যাবিনেট মিটিং থেকে উঠে গিয়েছিলেন ।‘টিউলিপ’ শেখ রেহানার মেয়ের নাম। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে কেন কম্পিউটার কিনতে হবে?’ যদিও আদতে বিষয়টি তা নয়। টিউলিপ নেদারল্যান্ডের একটি কম্পিউটার প্রতিষ্ঠান। এর জন্ম ১৯৭৯ সালে। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেখ রেহানা বা তাঁর পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই। এই চুক্তি বাতিল করলে বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ছিল। টিউলিপ লিমিটেড বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ চাইলো। কিন্তু আবার বেঁকে বসলেন বেগম জিয়া, তিনি বললেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে না। টিউলিপ লিমিটেড মামলা করেছিল । আদালত বাংলাদেশ সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল । কোর্টের আদেশও মানেননি বেগম খালেদা জিয়া। এরপর আন্তর্জাতিক আদালত বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডের সহায়তা বন্ধের আদেশ দিল। বন্ধ হয়ে গেলো ডাচ অনুদান ও সহায়তা। তাছাড়াও বাংলাদেশের সকল উন্নয়ন প্রকল্প থেকেও নেদারল্যান্ড সরকারের সাহায্য সহযোগিতা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । হিসেব মতো বাংলাদেশের শিশু ও নারীরা ৫৬৭ কোটি টাকার সাহায্য থেকে বঞ্চিত হলো। অতএব বার বার দেখা গেছে আওয়ামী লীগ বিরোধিতা করতে বিএনপি দেশবিরোধিতায় সামিল হয়ে যায় । ১৯৯৬ -২০০১ মেয়াদে পদ্মাসেতুর ভিত্তি প্রস্তর নির্মাণের পর ২০০১ সালে ১ লা অক্টোবর নির্বাচনে জামাত বিএনপি ক্ষমতায় আসে । পদ্মা সেতু সেতুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বব্যাংক সেতু নির্মাণে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করলে নতুন করে আশা জাগে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় ষড়যন্ত্র ও বিশ^ব্যাংকে দেয়া অভিযোগ। এ সময় বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের নির্মাণকাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালীন কানাডার একটি কোম্পানি এসএনসি-লাভালিন’র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে। এর আলোকে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। ফলে আবারও ঘোর অনিশ্চয়তায় পড়ে সেতুর ভবিষ্যৎ। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংকসহ একাধিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা চুক্তি স্থগিত করে।যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি) ২০১২ সালের ৩০ জুন এক খবরে উল্লেখ করে, ‘বিশ্বব্যাংক বলছে, সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তা, কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি ব্যক্তিদের মধ্যে যোগসাজশে বিভিন্ন সূত্র থেকে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ তাদের হাতে এসেছে। এসব তথ্য-প্রমাণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, (তৎকালীন) অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে দেয় হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের বিবৃতিতে বলা হয়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এবং ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে এসব তথ্য-প্রমাণ দেয়া হয়।’তবে বিশ্বব্যাংকের এসব অভিযোগ প্রথম থেকেই প্রত্যাখ্যান করেছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু তাতে কান দেয়নি বিশ্বব্যাংক। বলা যায়, মূল সেতু প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বানোয়াট অভিযোগ আনে বিশ^ব্যাংক। বিশ^ব্যাংককে অনুসরণ করে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা এবং ইসলামি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে বিশ্বব্যাংক। বিশেষজ্ঞ প্যানেল বাংলাদেশের যুক্তি মানলেও শেষ পরিণতিতে তাদের একটিই দাবি ছিল- ‘দুর্নীতি না হলেও ষড়যন্ত্র হয়েছে’। আইনের দৃষ্টিতে এই দাবি যে একেবারেই হাস্যকর, বিদগ্ধ পাঠক মহল নিশ্চয়ই তা অনুধাবন করতে পারেন। কিন্তু অদম্য সাহস ও দৃঢ়তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে সেতু সম্পন্ন করার ঘোষণা দেন। বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ঘোষণা দেন ‘নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু গড়ার।’ তৃতীয় বিশ্বের মত দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে বিদেশি কোনো সাহায্য ছাড়া ৩০ হাজার কোটি টাকা (১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা ) মূল সেতুতে খরচ খরচ করে সেতু নির্মাণের যে পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন, সত্যিই তা ১৭ কোটি বাঙালির কাছে দুঃসাহসিক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনা উড়িয়ে সেই স্বপ্ন আজ পুরোপুরি বাস্তবায়নের পথে। পদ্মা সেতু আমাদের কাছে নিছক কোনো সেতু নয়, এটা বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রমাণ। জাতি হিসেবে বাঙালির গর্ব ও অহংকারের নিদর্শন এবং সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দৃঢ়প্রত্যয়ের ফসল।ভূপেন হাজারিকা সেতুর পাইল লোড মাত্র ৬০ টন। সেখানে পদ্মা সেতুর পাইল লোড ৮ হাজার ২০০ টন।
ভারতের ওই সেতুর একেকটি পিলার ১২০ টনের। আর পদ্মা সেতুর একটি পিলার ৫০ হাজার টনের। সে হিসেবে ভারতের সেতুটির চেয়ে পদ্মাসেতু হতে চলেছে ১৩৩ গুণ বেশি শক্তিশালী।বিশ্বের আর কোনও সেতু তৈরিতে পদ্মার মতো নদীর এতো তলদেশে গিয়ে পাইল গাঁথতে হয়নি, বসাতে হয়নি এত বড় পিলার। আর পদ্মার মতো স্রোতস্বিনী এমন নদীর ওপর বিশ্বে সেতু হয়েছে মাত্র একটি। পদ্মাসেতু তার অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য বিশ্বের সব চেয়ে ব্যতিক্রমী সেতু হবে। কারণ খরস্রোতার দিক দিয়ে আমাজান নদীর পরই বিশ্বে বাংলাদেশের পদ্মানদীর অবস্থান, যার ওপর দিয়ে সেতু করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর মতো দ্বিতল (গাড়ি ও ট্রেন) সেতু পৃথিবীতে হাতেগোনা কয়েকটি আছে। আর দুই লেনের ভূপেন হাজারিকা সেতুর উদাহরণ পৃথিবীতে কয়েকশ' পাওয়া যাবে।পদ্মানদীর শুধু মাওয়া পয়েন্টে মাত্র ২০ সেকেন্ডে যে পানি প্রবাহিত হয় তা রাজধানী ঢাকার সারাদিনের যত পানি লাগে তার সমান। হিসাব মতে, পদ্মা নদীতে প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহ রয়েছে। পানি প্রবাহের দিক বিবেচনায় বিশ্বে আমাজান নদীর পরেই এই প্রমত্তা পদ্মা।পদ্মানদীতে পাথরের স্তর মিলেছে ১০ কিলোমিটার গভীরে। বিশ্বের অন্যান্য নদী ও নদীর ওপর সেসব সেতু আছে সেগুলোর কোনোটিরই পাথরের স্তর এতো নিচে নয়। এ কারণে ৪০০ মিটার গভীরে পাইল নিয়ে যেতে হয়েছে। যা পৃথিবীর সেতু নির্মাণে বিরল ঘটনা। একেকটি পাইলের ওজন ৮ হাজার ২০০ টন। আর পাইল এতো গভীরে যাচ্ছে যে- ভেতরে এটি ৪০তলা ভবনের সমান হবে।
পদ্মাসেতুর পাইল নদীর তলদেশে নিতে যে হ্যামার লাগবে, সেটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোলিক হ্যামার। পৃথিবীর কোথাও আর কোনো সেতুতে এমন শক্তিশালী হ্যামার ব্যবহৃত হয়নি। এই হ্যামারটি জার্মানি থেকে বিশেষ অর্ডারে তৈরি করে আনা।
(২)ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের রাজনীতি-অর্থনীতিতে কয়েক দশক ধরে চলে আসছে। চিহ্নিত একটি মহলের উদ্দেশ্যই হলো- ক্রমাগতভাবে দেশের স্বার্থ ও জনকল্যাণ বিরোধী বিভিন্ন ইস্যুতে ষড়যন্ত্র করা। বিশ্বব্যাংক যেন ঋণ না দেয়, এ কারণে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে বিশ্বব্যাংককে চাপ দেয়ার গল্প তো সবারই জানা।
কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র কি এখনও শেষ হয়েছে? নিশ্চয়ই না। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি ও তাদের দোসর এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র যেন ততই বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। তারা বিদেশী অর্থায়নে সেতু নির্মাণের বিরোধিতা করেছেন, করেছেন দেশীয় অর্থায়নেরও। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, প্রতিটি বিষয়কে আলাদা আলাদা রূপ দিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছেন এই পক্ষগুলো।
২০১২ সালের ৮ জুলাইয়ের সেই দৃশ্যটার কথা মনে পড়ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, “আমরা যুদ্ধ করে দেশ জয় করেছি। বাংলার মানুষ কারো কাছে মাথা নত করতে জানে না। আমি আশাবাদী। আমি আত্মবিশ্বাসী”। এ সময় সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য সমর্থন জানানোর পাশাপাশি বলেন, তারাও তাদের বেতনের টাকা এই সেতুর জন্য দেবেন। এ সময় সংসদের ভিআইপি গ্যালারিতে বসা প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তার স্ত্রী ক্রিস্টিনা ওভারমায়ার এবং শেখ রেহানার ছেলের স্ত্রী পেপপি সিদ্দিকও যেন আপ্লুত হয়ে পড়েন।শুধু সংসদ সদস্যরাই নয়, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের পর সে সময় প্রবাসী বাঙালিরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন, “আপা আপনি শুরু করেন, টাকা যা লাগে আমরা দেব।’’ স্কুল শিক্ষার্থীরা চেয়েছিল, “টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের খরচ হিসাবে দিতে’’।
এসব ভেবেই হয়তো শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘‘পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে দেশবাসীর যে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি, তা আমার চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবে। আমি কৃতজ্ঞ।” ইতিহাসে এরকম ঘটনা পৃথিবীতে আরেকবার ঘটেছিল । ১৯৫২ সালে বিপ্লবের পর মিশরবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নীলনদের উজানে আসওয়ান নামক স্থানে হাই ড্যাম বা বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প বিপ্লবী সরকারের অন্যতম এজেন্ডা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিপ্লবকে সংহত করে ১৯৫৫ সালের মধ্যে আরব জাতীয়তাবাদের জাগরণী প্রবক্তা ও পুরোধা হয়ে আবির্ভূত হন জামাল আবদেল নাসের। অধিষ্ঠিত হন মিশরের প্রেসিডেন্ট হিসেবে। নাসের বাঁধ নির্মাণের জন্য সব সমীক্ষা ও প্রস্তুতি সম্পন্ন করে অর্থের জন্য বিশ্বব্যাংক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রস্তাব পাঠান। সমগ্র আরব বিশ্বে নাসেরের বিপুল জনপ্রিয়তার কথা চিন্তা করে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে কমিউনিস্ট বিস্তার রোধকল্পে এবং আরব-ইসরায়েল সংকট নিরসনে কাজে লাগাবার আশায় নাসেরের প্রস্তাবে রাজী হয়। বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ৮০ কোটি ডলারের মধ্যে ২০ কোটি বিশ্বব্যাংক এবং ৫.৮ কোটি যুক্তরাষ্ট্র দেবে বলে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রæতি দিল নির্মাণকাজের অগ্রগতিতে আরও অর্থায়ন করা হবে। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত নাসের শুরু থেকে কমিউনিস্ট ব্লক বা সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পুঁজিবাদী বিশ্ব বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমদূরত্ব নীতি গ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্র ভেবেছিল দ্রুত ঋণ দিতে রাজি হলে নাসের নিরপেক্ষ অবস্থান ত্যাগ করে ১৯৫৫ সালে স্বাক্ষরিত বাগদাদ সামরিক জোটে যোগ দেবেন এবং সোভিয়েতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন। কিন্তু নাসের তাঁর সমদূরত্বের নীতিতে অটল রইলেন। ইত্যবসরে নাসের খুবই সহজ শর্তে মিশরের উৎপন্ন তুলার বিনিময়ে সোভিয়েতের সহায়তায় চেকোশ্লোভিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনার ছোট একটি চুক্তি স্বাক্ষর করলেন। এ সংবাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভয়ানকভাবে ক্ষুব্ধ হয় এবং আসওয়ান বাঁধের ঋণচুক্তি বাতিল ঘোষণা করে। পরে বিশ্বব্যাংকও যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করে। ১৯৫৬ সালের ২৬ জুলাই প্রেসিডেন্ট নাসের হাজির হলেন আলেকজান্দ্রিয়া শহরে জলস্রোতের মতো হাজির হওয়া আশান্বিত লাখো মানুষের জনসভায়। উৎসুক জনতার উদ্দেশে আবেগতাড়িত ও যুক্তিপূর্ণ ভাষণের শেষ দিকে বললেন-
‘আমেরিকা, ব্রিটেন ও বিশ্বব্যাংক আসওয়ান বাঁধের জন্য প্রতিশ্রুত আর্থিক সাহায্য প্রত্যাহার করে আমাদের পদানত করতে চায়। তারা মিশরের আর্থিক মেরুদণ্ডকে দুর্বল রেখে অনাগতকাল মিশরকে তাদের কব্জায় রাখতে চায়। কিন্তু আমরা যে সংকল্প করেছি তা কারও ভয়ে বিচ্যুত হতে চাই না। কারও কাছে সাহায্যের জন্য ধর্না দেব না। সৃষ্টিকর্তা আমাদের যে সম্পদ দিয়েছেন তা দিয়েই আমরা কাজে নামতে চাই। সে পথে আমাদের হাজারো বাধা আসবে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো আমাদের ওপর সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। সেজন্য আমাদের ভীত হলে চলবে না। অতিক্রম করতে হবে সব বাধা-বিপত্তি। ইন্শাআল্লাহ আমরা জয়যুক্ত হব।’ (আনিস সিদ্দিকী : মৃক্তি সংগ্রামে নাসের।) কিন্তু মিসরের জামাল আবদেল নাছের এর পক্ষে প্রবল মিত্র ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন কিন্তু শেখ হাসিনা সেরকমভাবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রবল মিত্র শক্তি পাননি । তাঁকে একাই লড়্ইা করতে হয়েছে ।
(৩)
পদ্মাসেতু নির্মাণের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ‘‘বাঙালি জাতি এক হলে অসাধ্য সাধন করতে পারে”। ষড়যন্ত্র হয়েছে, বাধা এসেছে; তাতে কী! সেই অসাধ্যকে আরেকবার সাধন করে দেখিয়ে দিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি শিরোনামেই উল্লেখ করেছি , পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র এখনও চলছে । আবার নতুন করে বলা শুরু হয়েছে এই মেগা প্রকল্পে মেগা দূর্নীতি হয়েছে । ইদানিং পদ্মা সেতুর সাথে ভারতের ভুপেন হাজারিকা সেতুর তুলনা করা হচ্ছে । পদ্মা সেতুর মতো দ্বিতল (গাড়ি ও ট্রেন) সেতু পৃথিবীতে হাতেগোনা কয়েকটি আছে। আর দুই লেনের ভূপেন হাজারিকা সেতুর উদাহরণ পৃথিবীতে কয়েকশ' পাওয়া যাবে। পদ্মানদীর শুধু মাওয়া পয়েন্টে মাত্র ২০ সেকেন্ডে যে পানি প্রবাহিত হয় তা রাজধানী ঢাকার সারাদিনের যত পানি লাগে তার সমান। হিসাব মতে, পদ্মা নদীতে প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহ রয়েছে। পানি প্রবাহের দিক বিবেচনায় বিশ্বে আমাজান নদীর পরেই এই প্রমত্তা পদ্মা।সেখানে ১১০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে । ভূপেন হাজারিকা সেতুর পাইল লোড মাত্র ৬০ টন। সেখানে পদ্মা সেতুর পাইল লোড ৮ হাজার ২০০ টন। ভারতের ওই সেতুর একেকটি পিলার ১২০ টনের। আর পদ্মা সেতুর একটি পিলার ৫০ হাজার টনের। সে হিসেবে ভারতের সেতুটির চেয়ে পদ্মাসেতু হতে চলেছে ১৩৩ গুণ বেশি শক্তিশালী।ভূপেন হাজারিকা সেতুর পাইল লোড মাত্র ৬০ টন। সেখানে পদ্মা সেতুর পাইল লোড ৮ হাজার ২০০ টন। ভারতের ওই সেতুর একেকটি পিলার ১২০ টনের। আর পদ্মা সেতুর একটি পিলার ৫০ হাজার টনের। সে হিসেবে ভারতের সেতুটির চেয়ে পদ্মাসেতু হতে চলেছে ১৩৩ গুণ বেশি শক্তিশালী।
বিশ্বের আর কোনও সেতু তৈরিতে পদ্মার মতো নদীর এতো তলদেশে গিয়ে পাইল গাঁথতে হয়নি, বসাতে হয়নি এত বড় পিলার। আর পদ্মার মতো স্রোতস্বিনী এমন নদীর ওপর বিশ্বে সেতু হয়েছে মাত্র একটি। পদ্মাসেতু তার অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য বিশ্বের সব চেয়ে ব্যতিক্রমী সেতু হবে। কারণ খরস্রোতার দিক দিয়ে আমাজান নদীর পরই বিশ্বে বাংলাদেশের পদ্মানদীর অবস্থান, যার ওপর দিয়ে সেতু হয়েছে।
পদ্মা সেতুর মতো দ্বিতল (গাড়ি ও ট্রেন) সেতু পৃথিবীতে হাতেগোনা কয়েকটি আছে। আর দুই লেনের ভূপেন হাজারিকা সেতুর উদাহরণ পৃথিবীতে কয়েকশ' পাওয়া যাবে।
পদ্মানদীতে পাথরের স্তর মিলেছে ১০ কিলোমিটার গভীরে। বিশ্বের অন্যান্য নদী ও নদীর ওপর সেসব সেতু আছে সেগুলোর কোনোটিরই পাথরের স্তর এতো নিচে নয়। এ কারণে ৪০০ মিটার গভীরে পাইল নিয়ে যেতে হয়েছে। যা পৃথিবীর সেতু নির্মাণে বিরল ঘটনা। একেকটি পাইলের ওজন ৮ হাজার ২০০ টন। আর পাইল এতো গভীরে যাচ্ছে যে- ভেতরে এটি ৪০তলা ভবনের সমান হবে।পদ্মাসেতুর পাইল নদীর তলদেশে নিতে যে হ্যামার ব্যবহার করা হয়েছে , সেটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোলিক হ্যামার। পৃথিবীর কোথাও আর কোনো সেতুতে এমন শক্তিশালী হ্যামার ব্যবহৃত হয়নি। এই হ্যামারটি জার্মানি থেকে বিশেষ অর্ডারে তৈরি করে আনা।পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে যে সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো নিয়ে জাদুঘর নির্মাণ করা হবে সেটাতে এই উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন যন্ত্রপাতির প্রদর্শন করা যেতে পারে। বলা হচ্ছে ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু এখন ৩০ হাজার কোটি । কেউ কেউ আরেকটু বাড়িয়ে বলছে ৪০ হাজার কোটি টাকা । তাহলে দেখা যাক পদ্মা সেতু কত টাকা ব্যয় হয়েছে । মূলত: মূল পদ্মাসেতুতে ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা । পদ্মাসেতু প্রকল্প থেকে সরকারের কোষাগারে টাকা এসেছে ১ হাজার ৭৩১ কোটি ১৭ লাখ টাকা । আসলে বাংলাদেশ বিরোধী মহল সংশয় সৃষ্টি করার জন্যে ভুল ,বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করছে । সাধারণের অবগতির জন্যে পুরা খরচের হিসেবে উপস্থাপন করলাম ।
পদ্মা সেতুর আনুমানিক প্রকল্প খরচ (চূড়ান্ত নকশা অনুযায়ী)বাংলাদেশী মুদ্রায় - ৩০ হাজর ১৯৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকাঅথবা মার্কিন মুদ্রায় - ৩ দশমিক ৮৬৮ বিলিয়ন ডলার
প্রকল্প খরচ (দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি)কাজের অবয়ব ডিপিপি (ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল)বাংলাদেশি মুদ্রায়
১. মূল সেতু ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা
২. সংযোগ সড়কসহ ১২ কি.মি. টোল প্লাজা এবং এসএ-২ ১ হাজার ৯০৭ কোটি ৬৭ লাখ ৭০ হাজার
৩. রিভার ট্রেনিং ওয়ার্কস (আরটিডবিøউ) ৯ হাজার ৪০০ কোটি
৪. পুনর্বাসন ১ হাজার ৫১৫ কোটি
৫. ভূমি অধিগ্রহণ (২৬৯৩.২১ হেক্টর) ২ হাজার ৬৯৮ কোটি ৭৩ লাখ
৬. পরিবেশ ১২৯ কোটি ৩ লাখ
৭. পরামর্শ ৬৭৮ কোটি ৩৭ লাখ
৮. অন্যান্য (বেতন, পরিবহন, সিডি ভ্যাট এবং ট্যাক্স, পিওই, শারীরিক এবং মূল্যসাপেক্ষতা, সুদ ইত্যাদি) ১ হাজার ৭৩১ কোটি ১৭ লাখ টাকা
সর্বমোট খরচ : ৩০ হাজর ১৯৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা
(ক) প্রাথমিক পরিকল্পনায় সেতুটি ছিল এক তলা। পরবর্তীতে সেতুর নকশা পরিবর্তন করে রেল লাইন সংযুক্ত করে সেতুটিকে দুই তলা করা হয়।
(খ) .প্রাথমিক পরিকল্পনায় সেতুর দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছিল ৫.৫৮ কিলোমিটার যা পরে বেড়ে দাঁড়ায় ৬.১৫ কিলোমিটার। অর্থাৎ পানির উপরিভাগের সেতুর দৈর্ঘ্য ০.৫৭ কিলোমিটার বেড়ে যায়। কিন্তু পানির বাইরেও ভায়াডাক্টসহ সেতুর কিছু অংশ আছে, এটি সংযোগ সড়ক নয়, সেতুরই অংশ। পানির বাইরে ভায়াডাক্টসহ সেতুর দৈর্ঘ্য ৩.৬৯ কিলোমিটার। পানির অংশ এবং পানির বাইরের অংশসহ পুরো সেতু দৈর্ঘ্য ৯.৮৪ কিলোমিটার। পানির ওপরের অংশে মূল সেতুতে ০.৫৭ কিলোমিটার বেড়ে যাওয়াই, পানির বাইরের অংশসহ পুরো সেতুর দৈর্ঘ্য আসলে ১ কিলোমিটারের বেশি বেড়ে যায়।
(গ). প্রাথমিক পরিকল্পনায় সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩টি স্প্যান একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় রাখার ব্যবস্থা ছিল, জাহাজ চলাচলের জন্য। পরবর্তিতে সংশোধিত বাজেটে ৪১টি স্প্যানেরই উচ্চতা বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
(ঘ) .প্রাথমিক পরিকল্পনায় ভূমি অধিগ্রহণের আনুমানিক পরিকল্পনা ছিল ২ হাজার ৭৭৭ একর জমি, যা পরে বাস্তবে গিয়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৬৫৫ একর। অর্থাৎ আড়াই থেকে ৩ গুণ বেড়ে যায় এবং জনস্বার্থে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ক্ষতিপূরণের পরিমাণও ৩ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়।বাংলাদেশের ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের খরচের সঙ্গে চীন বা ভারতের তুলনা একমাত্র কোনও অজ্ঞই করবে। চীনে ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের কোনও খরচ নেই।
(ঙ). প্রাথমিক পরিকল্পনায় ফেরিঘাট স্থানান্তরে ব্যয় ধরা ছিল না, যা পরে সংশোধিত বাজেটে ধরা হয়।
(চ) দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দেরি হয়ে যায় এবং এর ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ৬৮.৬৫ থেকে ধাপে ধাপে ৮৪.৮০ হয়ে যায়। করোনাকালেও ২ বছর সেতু নির্মাণের অগ্রগতি কিছুটা ব্যাহত হয়। ডলারের বিনিময় মূল্য ২৪ শতাংশ বেড়ে যায়। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারের বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর মূল্যও বৃদ্ধি পায়।
(ছ) বুয়েটের অধ্যাপক ড. সাইফুল আমিন বলেছেন, পদ্মার তলায় মাটির বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্টের জন্য কিছু কিছু জায়গায় পাইল ড্রাইভ করতে গিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী হ্যামার দিয়ে ড্রাইভ করেও ১২০ মিটারের থেকে বেশি ড্রাইভ করা সম্ভব হয়নি। সেক্ষেত্রে প্রকৌশলীদের নকশায় পরিবর্তন করে পাইলের সংখ্যা বাড়াতে হয়েছে।
(জ) ২০০৭ সালের প্রাথমিক পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ফাইবার অপটিক্যাল কেবল সংযুক্ত করা ছিল না যা পরবর্তিতে সংযুক্ত করা হয়েছে।বিশ্ব ব্যাংকের অধীনেই তো (২০১১ সালে) পদ্মা সেতুর বাজেট প্রথম সংশোধিত হয় এবং প্রকল্প খরচ ৩০০ কোটি ডলার তথা ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়। এই ৩০০ কোটি ডলারই পরবর্তিতে ডলারের বিপরীতে ৮৪.৮০ টাকা বিনিময় হারে হিসেব করলে ২৫ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা হয়ে যায়।বিশ্ব ব্যাংককে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার পর থেকে মোট বাজেটে খরচ বেড়েছে ৪ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.