মুফতি এনায়েতুল্লাহ:
পবিত্র হজের পাঁচ দিনের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই হজযাত্রীরা মিনায় যাওয়া শুরু করেছেন। সৌদি মুয়াল্লিমের (যারা মিনা-আরাফাতে তাঁবু ও হজযাত্রীদের জেদ্দা থেকে মক্কা এবং মদিনায় যাতায়াতের গাড়ির ব্যবস্থা করে থাকেন) ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের গতকাল রাত থেকে হজযাত্রীদের তাঁবুর শহর মিনায় নেওয়া শুরু হয়েছে।
আগে থেকে মক্কায় অবস্থানরত হজযাত্রীরা বাদ এশা নিজ নিজ আবাসন থেকে ইহরাম বেঁধে মিনায় রওনা হন। আর বিধানভেদে অন্য হজযাত্রীরা মিকাত থেকে ইহরাম শেষে সোজা মিনায় যাবেন। মক্কার সবগুলো রাস্তা এখন মিনামুখী মানুষের ভিড়। মিনার আকাশে গুঞ্জরিত হচ্ছে তালবিয়ার পবিত্র সুর ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল-হামদা ওয়াননি-মাতা লাকা ওয়াল-মুলক, লা শারিকা লাক।’
রাতে মিনায় পৌঁছে হজযাত্রীরা ফজর থেকে শুরু করে এশা অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন নিজ নিজ তাঁবুতে। তবে মসজিদে খায়েফ ও কুয়েতি মসজিদের কাছাকাছি তাঁবু থাকলে মসজিদে গিয়েও নামাজ আদায় করার সুযোগ রয়েছে।
মিনা মক্কা ও মুজদালিফার মাঝখানে অবস্থিত। জিলহজ মাসের ৮ তারিখ জোহরের নামাজের আগে হজ আদায়কারীদের মিনায় উপস্থিত হতে হয়। এই দিনটিকে ‘ইয়াওমুত তারভিয়া’ বলা হয়। ৮ জিলহজের দিনে যেকোনো সময় মিনায় উপস্থিত হওয়া যায়। তবে, সুন্নত হলো জোহরের নামাজ মিনায় উপস্থিত হয়ে আদায় করা। এখানে পূর্ণ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। এই নামাজ জোহর থেকে শুরু করা মোস্তাহাব।
আগামীকাল ৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন। ওইদিন সকালে আরাফাতের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা থাকলেও আজ (৮ জিলহজ) এশার নামাজের পর থেকেই সৌদি মুয়াল্লিমের ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের আরাফাতের ময়দানের তাঁবুতে পৌঁছে দেওয়া হবে। সেখানে ফজর এবং জোহর-আসর আদায় করবেন।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের প্রধান বিধান। আরাফাতের দিন মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেওয়া হবে। তবে বাংলাদেশের হজযাত্রীদের তাঁবু বেশ-খানিকটা দূরে থাকায় তাদের পক্ষে মসজিদে নামিরায় যাওয়া সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে নিজ নিজ তাঁবুতেই তারা নামাজ আদায় করে নেবেন।
এ দিনটিই হচ্ছে হজ। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আলহাজ্জু আরাফাহ। অর্থাৎ আরাফাতে অবস্থানই হচ্ছে হজ। যে ব্যক্তি আরাফাতের ময়দানের বাইরে অবস্থান করে চলে এলো তার হজ হলো না। এজন্য এদিন হজপালন করতে এসে অসুস্থ হয়ে যাওয়াদের অল্প সময়ের জন্য হলেও আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত করা হবে।
আরাফাতের ময়দানে জোহর ও আসর নামাজ শেষ করে হাজিরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত এখানেই অবস্থান করবেন। আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকালে জীবনের সব ছোট-বড়, জানা-অজানা গোনাহ মাফের জন্য কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করবেন। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে তারা বিভিন্ন অপরাধের স্বীকারোক্তি এবং অপরাধ স্মরণ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। তারা নিজের জন্য, বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি, পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় মোনাজাত করবেন।
সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে মাগরিবের নামাজ আদায় না করে হাজি সাহেবদের যাত্রা শুরু হবে মুজদালিফার উদ্দেশে। সেখানে যাওয়া মাত্র মাগরিব ও এশা এক আজানে, দুই ইকামাতে আদায় করবেন। এরপর মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে মাথা খোলা অবস্থায় রাতযাপন করতে হবে। ১০ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর আবার মিনায় ফিরে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার আগে বড় জামারাতে সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ, কোরবানি সম্পন্ন করার পর মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম পরিত্যাগ করবেন হাজি সাহেবরা। সুযোগ বুঝে মক্কায় গিয়ে ফরজ তাওয়াফ করতে হবে তিন দিনের মধ্যে। ১১ ও ১২ জিলহজও হাজি সাহেবদের সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর তিনটি জামারাতে সাতটি করে ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে। যারা সংক্ষেপ করতে চান ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করবেন। না হলে ১৩ জিলহজ সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর আবারও তিনটি জামারাতে সাতটি করে ২১টি কঙ্কর মেরে মিনা ত্যাগ করতে হবে।
পরিশেষে মক্কায় ফিরে বিদায়ের দিন বিদায়ী তাওয়াফের পূর্ব পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে প্রতি ওয়াক্তের নামাজ ও যত বেশি সম্ভব তাওয়াফে সময় কাটাবেন হাজিরা। আল্লাহতায়ালা সবাইকে সহিহ তরিকায় হজপালন করে গোনাহমুক্ত হওয়ার তৌফিক দান করুন।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.