ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
করোনা মহামারীতে বিভিন্ন বিধিনিষেধের মধ্যেও দেশের অর্থনীতি ততটা খারাপ অবস্থায় যায়নি, যতটা ইউক্রেন যুদ্ধের পর হয়েছে। করোনার সময় ব্যবসায়ীদের নানা প্রণোদনা দিয়ে উৎপাদন খাত টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল সরকার। সে সময়ই বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে একের পর এক রেকর্ডও হয়েছে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের পর সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত, কাঁচামালের অস্বাভাবিক দামে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি ও ঋণ পরিশোধের চাপে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও অনিশ্চিত অবস্থা তৈরি হয়েছে। বিপুল আমদানি দায় ও ঋণ পরিশোধের চাপে উদ্বেগজনক পর্যায়ে নেমেছে রিজার্ভ।
ডলারের আধিপত্য রুখতে অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন দেশ বিকল্প মুদ্রায় বাণিজ্যিক লেনদেন করার চেষ্টা করছে। এজন্য আলাদা প্ল্যাটফর্মও গড়ে তোলারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এখনো বিশ্বের বাণিজ্যিক লেনদেনের ৯০ শতাংশই মার্কিন ডলারে সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশও এর বাইরে নেই। দেশের আমদানি বাণিজ্যের বেশিরভাগই ডলারের ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে ডলারের সংকটের প্রভাব অর্থনীতিতে প্রকটভাবে দেখা যায়। ডলারের দামের ওপরই এখন নির্ভর করছে মূল্যস্ফীতি, প্রবাসী আয় ও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ।
বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এলেও বাংলাদেশের মানুষ এই ফাঁদ থেকে বের হতে পারছে না। গত বছর এ সময় যেসব খাদ্যপণ্য ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন সেগুলো কিনতে হচ্ছে গড়ে ১১২ টাকায়। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও সিন্ডিকেটের কারণে দেশে পণ্যমূল্য আকাশ ছুঁয়েছে। নুন, ডাল, আলুসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্য সিন্ডিকেটের কবলে। বাদ যায়নি দেশের উৎপাদিত সবজি, মাছও। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে অনেক পণ্যের দাম এক বছরে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। নিত্যপণ্যের এমন দামে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন এক যুগে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে নিম্ন আয়ের মানুষ ও মধ্যবিত্ত খাবারের তালিকা ছোট করে এনেছে।
সংকট সমাধানে দরকার মুদ্রা বিনিময় ও সুদের হার বাজারভিত্তিক করা। কিন্তু এই মুহূর্তে সরকারের পক্ষে বাজারভিত্তিক ব্যবস্থায় যাওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচনের আগে সরকার তেমন কোনো বড় সিদ্ধান্তেও যেতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন পর্যন্ত রিজার্ভ বাড়াতে হবে সুদহার ডলারের দাম ধরে রাখতে হবে। আর সংকট মোকাবিলায় সরকারকে ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে দুই-এক টাকা করে ডলারের দাম বাড়ানো বা সুদের হার কিছুটা বাড়ানো যেতে পারে। তবে নির্বাচনের পর বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে রাজস্ব আয় ও রিজার্ভ বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হতে হবে। এজন্য এনবিআরে সংস্কার প্রয়োজন। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে বড় ধরনের সংস্কার নিয়ে আসতে হবে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশকে রিজার্ভ ধরে রাখতে হলে ডলার আয় বাড়ানোর বিকল্প নেই। আর বাংলাদেশের ডলার আয়ের প্রধান দুটি খাত হচ্ছে, রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়। এ দুই খাত থেকে পর্যাপ্ত ডলার না আসায় মূলত বাংলাদেশ চাপের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া বিদেশি ঋণ ও এফডিআইয়ের মাধ্যমে ডলার আসে, যা সাময়িক। রিজার্ভ ধরে রাখতে হলে বিদেশ থেকে ধার করে এখন সামাল দেওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে দরকার স্থায়ী সমাধান। এজন্য বাংলাদেশকে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আর এ ক্ষেত্রে একমাত্র বাধা বেঁধে দেওয়া মুদ্রাবিনিময় হার।
বাজারে মূল্যস্ফীতির যে চাপ রয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সঠিক সময়ে সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সরকার নিজেই চাইছে না দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসুক। দেশের মানুষের কষ্টের মধ্যেও তাদের দুর্বল কার্যক্রম দেখে তাই মনে হচ্ছে। সরকার চাইলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারত। এ ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন। কিন্তু প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিয়ে শুধু ঘোষণা দিয়েই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে সরকার।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.