আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য তোড়জোড় চলছে। আগামী সপ্তাহের শুরুতেই এই যুদ্ধবিরতি হতে পারে বলে দাবি করা হচ্ছে।
তবে ইসরায়েলের সাথে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি এখনও বেশ দূরেই বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ইসরায়েলের সাথে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আশাকে ম্লান করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার আগে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
হামাসের রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রধান বাসেম নাইম বুধবার ইস্তাম্বুল থেকে আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘ব্যবধান এখনও বিস্তৃত। আমাদের মধ্যস্থতাকারীদের সাথে অনেক পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’
এর আগে আগামী সোমবারের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি হওয়ার আশা প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার এই মন্তব্যের পর যুদ্ধবিরতির আলোচনায় গতি পেয়েছে বলে মনে হয়েছিল। আর এরপরই হামাসের রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রধান এই মন্তব্য করলেন।
বাসেম নাইম বলেছেন, বাইডেন প্রশাসনের আশাবাদী ভঙ্গি ‘ময়দানের বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত নয়’। তিনি বলেন, ‘আমেরিকানরা যদি সত্যিই আশাবাদী হতে চায়, তাহলে তাদের দ্বিচারিতার খেলা শেষ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) একদিকে আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য বা যুদ্ধবিরতি অর্জনের জন্য এবং অঞ্চলে সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়া এড়ানোর কথা বলে। কিন্তু একইসঙ্গে তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ক্ষমতার ব্যবহার করছে। তারা ইসরায়েলের জন্য ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করেছে, তারা আরও গোলাবারুদ দিয়ে ইসরায়েলকে সুরক্ষিতও করছে।’
নাইম এর আগে মঙ্গলবার রাতে আল জাজিরাকে বলেছিলেন, হামাস এখনও আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পায়নি। তবে যুদ্ধবিরতির জট খুলতে মধ্যস্থতাকারীরা ইসরায়েলি পক্ষের সাথে কাজ করছেন।
যদিও হামাস সম্ভাব্য চুক্তির কিছু বিষয়ে নমনীয় হতে ইচ্ছুক, তবে কেবল যুদ্ধবিরতির জন্য স্বাধীনতকামী এই গোষ্ঠীটি নিজের ‘প্রধান, কৌশলগত লক্ষ্যগুলোর’ ব্যাপারে ছাড় দেবে না বলে নাইম জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, হামাসের এমন কিছু অ-আলোচনাযোগ্য দাবি রয়েছে যেগেুলোতে ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে: শুধুমাত্র মানবিক বিরতি নয় বরং একটি চূড়ান্ত এবং পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি; গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার; এবং গাজার মধ্যে ফিলিস্তিনিদের জন্য অবাধ চলাচলের স্বাধীনতা।
বন্দিদের বিনিময় এবং গাজার পুনর্গঠনের পরিকল্পনার বিষয়ে ‘নমনীয়তার সুযোগ আছে’ বলেও নাইম যোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘হামাস যুদ্ধবিরতি অর্জনের জন্য শুরু থেকেই দুর্দান্ত নমনীয়তা দেখিয়েছে কারণ আমরা জানি, এই হত্যাকাণ্ডে একটি বাড়তি দিন মানে আরও ১০০ থেকে ১৫০ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকের নিহত হওয়া।’
তার ভাষায়, ‘গাজার উত্তরাঞ্চলের মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছে। আমরা জানি এর অর্থ কী। আমাদের পরিবারগুলো এখনও সেখানে আছে।’
নাইম বলেন, ইসরায়েল যেন সম্ভাব্য যেকোনও চুক্তি মেনে চলে তা নিশ্চিত করতে মিসর, কাতার, তুরস্ক, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মতো গ্যারান্টারদেরও এতে যুক্ত করতে চাইছে হামাস।
এদিকে বুধবার হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ বলেছেন, হামাস ইসরায়েলের সাথে আলোচনায় নমনীয়তা দেখালেও প্রয়োজনে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত তারা। বৈরুত থেকে বক্তৃতায় তিনি ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ হিসাবে পরিচিত ইরান-নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক ও সামরিক জোটকে রাজনৈতিক লিভারেজ, অর্থ এবং অস্ত্রের মাধ্যমে গাজার জন্য সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
হানিয়াহ বলেন, আরব ও ইসলামিক দেশগুলোর দায়িত্ব হলো গাজার মানুষকে অনাহারে রাখার যে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে তা ভাঙার উদ্যোগ নেওয়া। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল মানবতার কাছে পরিচিত সবচেয়ে খারাপ নৃশংসতা করছে, যার মধ্যে বেসামরিক লোকদের নির্মূল এবং বাস্তুচ্যুতিও রয়েছে।
হামাস নেতা রমজানের প্রথম দিনে ফিলিস্তিনিদের প্রতি অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে মিছিল নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মুসলিমদের পবিত্র এই স্থানে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশের ওপর ইসরায়েলের অব্যাহত নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে তিনি এই আহ্বান জানান।
হানিয়াহ আরও বলেন, ‘আল-আকসা অবরোধ এবং গাজা অবরোধ এক এবং অভিন্ন।’
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.