রিকন বড়ুয়া:
বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক হিসাবে কোন সামরিক কর্মকর্তাকে চাই না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। আজ সকালে রোরির সামনে একটি প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে একথা জানান কর্মকর্তারা।
প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানান, বোরিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে পদায়নের প্রস্তাব করে সম্প্রতি একটি প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়েছে। যা এই ধরণের গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ এবং গবেষণার গ্রহনযোগ্যতার পরিপন্থী। বিধায় এই প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এই পদায়নের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ সমাবেশ।
প্রতিবাদ সমাবেশে রোরির প্রিন্সিপাল সাইন্টিফিক অফিসার মো: হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ নৌবাহিনী আমাদের একটি গর্বের প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের মানুষের সেবায় নৌবাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর নৌযোদ্ধাদের অপারেশন জ্যাকপটের ইতিহাস আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু, এই রকম একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মুক্ত বিজ্ঞান চর্চায় ওশানোগ্রাফি বিষয়ের মত একটি জটিল ও নিবিড় গবেষণা প্রতিষ্ঠান সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত হলে, গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসাবে এই ইনস্টিটিউটের প্রাতিষ্ঠানিক গ্রহন যোগ্যতা হারাবে।’
সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: জাকারিয়া বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, এই ধরণের গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ একাডেমিশিয়ান অথবা বিজ্ঞানীর দ্বারা পরিচালিত হয়। বিশ্বে মহাকাশ গবেষণার পর সমুদ্র গবেষণাকেই জটিল ও নিবিড় গবেষণা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে নতুন এই প্রতিষ্ঠানটির মুক্তভাবে গবেষণার অধিকতর সুযোগ রয়েছে।’
প্রতিষ্ঠানের আরেক সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মুহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানী, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, চীন, রাশিয়া এমনকি ভারতের দিকে থাকালে দেখা যায় এই ধরণের গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ একাডেমিশিয়ান বা বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত হয়, সামরিক বাহিনীর দ্বারা নয়। সামরিক বাহিনীর আওতায় পরিচালিত গবেষণা চাপিয়ে দেওয়া গবেষণা (ভড়ৎপবফ ৎবংবধৎপয) হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং এসকল গবেষণার ফলাফল আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহনযোগ্য হয়না।’
উল্লেখ্য, শুরু থেকে দেশের একমাত্র বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণা ফলাফলসমূহ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত হচ্ছে এবং অল্প সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে দেশের উপকূলীয় সমুদ্র এলাকার মূল্যবান খনিজ চিহ্নিত করেছে; সীউইড থেকে অনেক ধরণের বাণিজ্যিক উপাদান আহরণ করেছে; মাইক্রোপ্লাস্টিক গবেষণা ও অয়েলস্পীল গবেষণার মাধ্যমে সমুদ্রের পরিবেশ নিয়ে কাজ করে প্রশংসিত হয়েছে: সামুদ্রিক প্রাণী থেকে ঔষধ, প্রসাধনী, পলিথিন ও নিত্য প্রয়োজনীয় উপাদান উৎপাদন করা হয়েছে; এবং উপকূলীয় ভাঙ্গন রক্ষা ও সমুদ্রের ইকোসিস্টেম উন্নয়ন বিষয়ে গবেষণা করছে। বঙ্গোপসাগর বিশ্বের কার্বন সাইকেলের ১০-২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কার্বন নিঃস্বরণের ক্ষতি কমিয়ে কার্বন সিংক করতে বিশাল ভূমিকা রাখে। এ বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা করা হচ্ছে। যা ভবিষ্যতে কার্বন ট্রেড নিগোশিয়েশনে বিপুলভাবে সহায়তা করবে। এছাড়াও, স্যাটেলাইটভিত্তিক ফিশিং জোন চিহ্নিতকরণ ও অফসোর অঞ্চলে বায়ুু বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাব্যতা নির্ণয়ে গবেষণা করছে। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকরা ওশানোগ্রাফি বিষয়ে এই প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরিতে ব্যবহার করছে। বর্তমানে জাপানের শিক্ষার্থীরা আমাদের ল্যাবের সহায়তা নিয়ে যৌথভাবে গবেষণা কাজ করছে।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.