মো. আবদুর রহমান:
দুনিয়াতে আল্লাহকে ভয় করা আখেরাতে নিরাপত্তার মাধ্যম। এ ভয় উভয় জগতে সফলতার কারণ হবে। মহান আল্লাহ যেমন ক্ষমাশীল, তেমনি কঠোর শাস্তিদাতা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এরূপ ভয় করা উচিত। আর মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ (সুরা আলে ইমরান ১০২) এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, মহান আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করতে হবে। যে ব্যক্তি আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করে আল্লাহতায়ালা তার সব বিষয় সমাধান করে দেন।
আল্লাহর ভয়ে নিষিদ্ধ বস্তু থেকে দূরে থাকা বা যে কাজ করার কারণে মানুষকে আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়, তা থেকে নিজেকে রক্ষা করা হচ্ছে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি। আর যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় রয়েছে এবং যারা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকেন তাদের বলা হয় মোত্তাকি। মূলত যার অন্তর যত পরিষ্কার এবং যার অন্তরে আল্লাহর ব্যাপারে যত বেশি ভালোবাসা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা আছে, আল্লাহর ব্যাপারে যার যত বেশি জ্ঞান আছে, সে আল্লাহকে তত বেশি ভয় করে। এ জন্য আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারাই তাকে ভয় করে।’ (সুরা ফাতির ২৮) আর স্বীয় রব সম্পর্কে বান্দার জ্ঞান যত বাড়বে, তার প্রতি তত বেশি ভয় তৈরি হবে। ফলে সে এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, যেন সে তাকে দেখছে।
আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনের গুরুত্ব অত্যধিক। কান্না হলো হৃদয়ের অভিব্যক্তির স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ। নবী ও রাসুলের পর সাহাবিরা ছিলেন মানবজাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। আল্লাহতায়ালার প্রতি তাদের ভালোবাসা, ভয় এবং ইসলামের জন্য তাদের অসাধারণ ত্যাগ আমাদের বিস্মিত করে। আল্লাহর ভয়ে তারাও ক্রন্দন করতেন। এক মোত্তাকি ব্যক্তির চোখের জ্যোতি ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল। ডাক্তারের কাছে পরামর্শ চাওয়া হলো। ডাক্তার অধিক কান্নার কারণ জানতে পেরে পরামর্শ দিলেন, কান্না বন্ধ করতে হবে, তাহলেই চোখ ঠিক হয়ে যাবে। উত্তরে তিনি বললেন, এমন চোখ দিয়ে আমার কী লাভ, যে চোখে কান্না নেই? এমনই ছিল তাদের কান্না।
আল্লাহতায়ালার ভয়ে দুই ফোঁটা চোখের পানি ফেলতে পারা গোটা পৃথিবীর প্রশান্তি, পরিতৃপ্তি ও মুগ্ধতার চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। যার মূল্য হচ্ছে কিয়ামতের ভয়াবহ দিনে মহান আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া লাভ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি। চোখের পানির কত মূল্য (সুবহানাল্লাহ)! এই চোখের পানি আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। দুধ দোহন করার পর তা যেমন আর গাভির ওলানে ফিরিয়ে নেওয়া অসম্ভব। আল্লাহর পথে জিহাদের ধুলাবালি এবং জাহান্নামের আগুন কখনো একত্রিত হবে না।’ (জামে তিরমিজি)
রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে সাত শ্রেণির লোককে আল্লাহতায়ালা তার আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। তাদের অন্যতম ওই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে (জিকির করে), ফলে তার দুচোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়।’ (সহ্হি বুখারি)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুই প্রকার চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে এবং যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদারিতে নির্ঘুম রাত অতিবাহিত করে।’ (জামে তিরমিজি)
অশ্রু হৃদয়ের প্রশান্তি। অশ্রুতে আছে মুক্তি। হোক তা মাছির মাথা পরিমাণ। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর (আজাবের) ভয়ে যে মুমিন বান্দার দুই চোখ থেকে অশ্রু বের হয়, যদিও তা মাছির মাথা পরিমাণ হয়, এরপর তার চেহারায় কিছুটা গড়িয়ে পড়ে, মহান আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ) ভয় ও কান্না একটি আরেকটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বস্তত যখন কারও অন্তরে ভয় ঢুকে, তখন আপনা-আপনিই কান্না আসে। অশ্রুই বলে দেয় তার অন্তরে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। আল্লাহর নেক বান্দাদের মধ্যে এটি বিদ্যমান থাকে। পক্ষান্তরে পাপী বান্দার অন্তরে তা পরিলক্ষিত হয় না। আল্লাহর ভয়ে কান্না ও ভীত থাকা প্রকৃত ইমানদারের একটি মহৎ গুণ ও বৈশিষ্ট্য। জাহান্নামের অধিবাসীরা জ¦লন্ত আগুনে পড়ে চোখের পানি বের করে কাঁদতে থাকবে। চোখের পানিও একদিন শেষ হয়ে যাবে। তারপর তারা রক্ত দিয়ে কাঁদতে থাকবে। তখন তাদের ওই কান্না কোনো উপকারে আসবে না। যদি তারা দুনিয়াতে আল্লাহর ভয়ে কান্নাকাটি করত, তাহলে পরকালে সে লাভবান হতো এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেত। আবু মুসা আশয়ারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘অবশ্যই জাহান্নামবাসীরা কাঁদতে থাকবে। তাদের চোখের পানি এত বেশি হবে যে, এর ওপরে জাহাজ চালানো সম্ভব হবে। জাহান্নামবাসীদের চোখের পানি শেষ হওয়ার পর তারা রক্ত দিয়ে কাঁদতে থাকবে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম) তাই দুনিয়ায় সময় থাকতে আমাদের অধিক পরিমাণে কান্না করে চোখের পানি ফেলতে হবে। তবেই আমরা হয়তো এই চোখের পানির ওসিলায় জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারব। দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই না। যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য পরকালের জীবনই অতি কল্যাণময়। তবুও কী তোমাদের বোধদয় হবে না?’ (সুর আনআম ৩২) সুতরাং এই খেল-তামাশার দুনিয়ায় যথাসম্ভব তাকওয়া অবলম্বন করে চলা সব মুসলমানের জন্য কাম্য। অন্যথায় পরকালে আফসোফ ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। তাই আসুন, আমাদের হৃদয়ে মহান আল্লাহর ভীতি অর্জন করি। তার ভয়ে কান্না করি। হয়তো তিনি আমাদের ক্ষমা দেবেন।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.