ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
‘মনে হচ্ছে এখন থেকে কেবল শখ করে আলু খেতে হবে। কথায় আছে নাÑ শখের তোলা আশি টাকা। তোলা না হোক, আলুর কেজি তো এখন ৮০ টাকাই!’ বেশ আক্ষেপের সুরেই প্রতিবেদককে কথাগুলো বলছিলেন আলুর দাম শোনার পর ক্ষুব্ধ একজন ক্রেতা। প্রতিদিনের অতি প্রয়োজনীয় সবজি আলুর দাম বাড়তে বাড়তে এখন কেজিতে ৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হতে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে গত ১৫ দিনের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দামও ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে যেতে দেখা গেছে। দুই সপ্তাহ আগে কমে যাওয়া পেঁপের দামও এখন কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে।
গতকাল দুপুরে তেজগাঁও রেলওয়ে কাঁচাবাজারে দাঁড়িয়ে কথা হয় ক্রেতা আব্দুস সালামের সঙ্গে। বাজারের পরিস্থিতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কী আর বলব, সবকিছুই চলছে উল্টাপাল্টা। গত সপ্তাহে ৭০ টাকা কেজিতে যে আলু কিনেছি আজকে এই বাজারে তা ৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বেশ কয়েকটি সবজির দাম কমলেও সবচেয়ে বেশি দরকারি আলুর দাম হু হু করে বাড়ছে।
বাজারের বিক্রেতা সামিউল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলু কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া আদা ১৬০ টাকা, ফরিদপুরের পেঁয়াজ ১৪০ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ১২০ টাকা, দেশি রসুন ২৪০ ও আমদানি করা রসুন ২৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
আরেক সবজি বিক্রেতা মো. রুস্তম আলী বলেন, পেঁপে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব সময় উচ্ছের দাম বেশি থাকলেও এ সপ্তাহে তার চেয়ে করলার দাম কেজিতে ২০ টাকা বেশি। প্রতি কেজি উচ্ছে ১০০ ও করলা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, গোল বেগুন ১০০ টাকা, মুলা ৮০, কাঁচামরিচ ১৬০, টমেটো ১৪০, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া ও কচুরমুখি ৬০ টাকা, পটোল ৬০, শিম ১০০, কাঁচা টমেটো ১২০, বরবটি ৮০, ঝিঙা ৬০ টাকা কেজিতে। প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে বাজারগুলোতে ফার্মের মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁওয়ের রেলওয়ে বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০-১৯০, সোনালি ৩০০ টাকা। ডিমের হালি ৪৮-৫০ টাকা।
হঠাৎই উধাও খোলা সয়াবিন ও পাম তেল
রাজধানীর বাজারগুলোতে হঠাৎ করেই ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে গেছে। বিশেষ করে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকার মতো বেড়েছে। এমনকি বোতলজাতের চেয়ে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেশি। তা ছাড়া বাজারগুলোতে খোলা তেল বলতে গেলে পাওয়াই যাচ্ছে না। আবার বোতলজাত তেলের অর্ডার কেটেও ডিলাররা তেল সরবরাহ না করে টাকা ফেরত দিচ্ছে বলে একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন।
তেজগাঁওয়ের কলমিলতা বাজারের মুদি দোকানি শরিফুল হক জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে বাজার থেকে তেল উধাও। গত ৭ নভেম্বর তিনি ১০ কার্টন তেলের জন্য টাকা দিয়েছিলেন কিন্তু গত মঙ্গলবার ডিলার সেই টাকা ফেরত দিয়ে জানিয়েছেন তেল দিতে পারবেন না। তিনি বলেন, ৫ লিটারের বোতলজাত তেলে বর্তমানে ২০ টাকা বেড়ে ৮৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক লিটারের পুরোনো বোতলজাত তেল ১৬৭ টাকা লিটার ও নতুন তেল ১৭০ টাকা। সরিষা তেলের লিটার ৩২০ টাকা। এক কার্টনে ১ লিটারের ১৮টি ও ৫ লিটারের ৪ পিস বোতলজাত তেল থাকে।
কারওয়ান বাজারের ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা রেজওয়ান হোসেন বলেন, তেলের অর্ডার নিয়ে ডিলাররা তাদেরকেও টাকা ফেরত দিয়েছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, হয়তো তেলের দাম বাড়াবে। এজন্যই ব্যবসায়ীরা তেলের সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন। সাধারণত দাম বাড়ানোর আগে বাজারে এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। এবারও তা-ই করা হচ্ছে।
আরেক ব্যবসায়ী জসিম হাওলাদার বলেন, প্রতি ড্রামে ১৮৫ কেজি বা ২০৪ লিটার সয়াবিন বা পাম তেল থাকে। বর্তমানে এক ড্রাম সয়াবিন তেলের দাম ৩৪ হাজার টাকা। এক ড্রাম পাম তেলের দাম ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে কারওয়ান বাজারে খোলা সয়াবিনের কেজি ১৮৫ টাকা ও লিটার ১৭৮ টাকা। বাজারটিতে পাইকারি পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে ১৫ টাকা বেড়েছে। কিন্তু বাজারে প্রায় সব দোকানেই খোলা সয়াবিনের সংকট থাকায় আপাতত বিক্রি বন্ধ। কয়েকটি দোকানে ২ কেজির বোতলে খোলা সয়াবিন তেল ভরে রাখা হয়েছে, সেগুলোই বিক্রি হতে দেখা গেছে। দুই কেজির নিচে কোনো তেল বিক্রি করা হচ্ছে না।
বাজারে তেলের সংকটের ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন কারওয়ান বাজারের সোনালী ট্রেডার্সের ডিলার মো. নাঈমুল ইসলাম। তিনি বলেন, হয়তো লাভ কম সেজন্য ছোট দোকানিরা তেল রাখছে না। তবে আমরা তীর ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল বিক্রি করছি, বুধবারও আমাদেরকে ডিলাররা তেল সরবরাহ করেছে।
টিসিবির পণ্য বিক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ
গতকাল দুপুরে বিজয় সরণির কলমিলতা বাজারের পাশে দেখা যায় টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য কিনতে ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড়। সেখানে রাব্বি এন্টারপ্রাইজের ডিলার হাসিবুর রহমান রাব্বি একটি ট্রাকে পণ্য বিক্রি করছেন। সেখানে দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও পাঁচ কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৭০ টাকায়। টিসিবির ট্রাকে এত মানুষের উপস্থিতি কেন জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান, গত মঙ্গল ও বুধবার কোনো গাড়ি আসেনি। এতে করে অনেকেই চাল, তেল কিনতে পারেনি। এতে লাইনের আকার দীর্ঘ হয়েছে।
এদিকে টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, গত বুধবার কলমিলতা বাজারে মেসার্স রানা এন্টারপ্রাইজ নামের এক ডিলার সেখানে পণ্য বিক্রি করা কথা। কিন্তু স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, ওই রানা এন্টারপ্রাইজের টিসিবির পণ্য দেওয়ার গাড়ি আসেনি। টিসিবির পণ্য বিক্রি হয় কলমিলতা বাজারের কিছুটা দক্ষিণে ফুটওভার ব্রিজের নিচে। সেখানে নিয়মিত কলা ও অন্যান্য শুকনো পণ্য বিক্রি করেন মাজেদা খাতুন। তিনি জানান, বুধবার সেখানে টিসিবির কোনো গাড়ি আসেনি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে রানা এন্টারপ্রাইজের মোবাইল ফোনে কল দিলে জানানো হয়, তারা বুধবার দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কলমিলতা বাজারের পাশে পণ্য বিক্রি করেছে। তবে রানার কথার বিরোধিতা করেন টিসিবির পণ্য কিনতে আসা ইকবাল হোসেন বলেন, বুধবার গাড়ি আসেনি। আমরা কয়েকজন একাধিকবার এসে ঘুরে গেছি।
বুধবার কলমিলতা বাজারে টিসিবির পণ্য বিক্রির গাড়ি না আসার বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ট্রাকগুলো নির্ধারণ করা জায়গায় গিয়ে আমাদের ভিডিও কল দেয়। তখন বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হই। বুধবার কলমিলতা বাজারের গাড়িটির ভিডিও কল পেয়েছিলেন কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি খোঁজ নিয়ে জানান, স্থানীয় দোকানদার কলমিলতা বাজারের কাছে গাড়ি দাঁড়াতে দেয়নি। পরে গাড়িটি ফার্মগেটের কাছে গিয়ে পণ্য বিক্রি করেছে বলে জানতে পেরেছেন।
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.