আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের অতর্কিত অভিযান ও একের পর এক শহর দখলের মুখে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে পালিয়েছেন দেশটির দুই যুগেরও বেশি সময়ের প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ।
রোববার সকালে বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে বাশার আল-আসাদ দামেস্ক ছাড়লেও কোথায় গেছেন, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
তবে সিরিয়া থেকে বাশার আল আসাদ পালানোর সাথে সাথে দেশটিতে পতন হয়েছে আসাদ পরিবারের ঐতিহাসিক ৫৪ বছরের শাসনামল। টানা পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সিরিয়া শাসন করছে পরিবারটি।
১৯৭০ এর দশকে সিরিয়ার ক্ষমতার কেন্দ্রতে আসে আসাদ পরিবার। ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন হাফিজ আল-আসাদ। ২০০০ সালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ওই বছরই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তাঁর ছেলে বাশার আল-আসাদ। এরপর থেকে টানা দুই যুগ (২৪ বছর) ধরে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট পদে আছেন তিনি।
আসাদ পরিবারের উত্থান
হাফিজ আল-আসাদকে ‘আধুনিক সিরিয়া’র রূপকার বলা হয়। ১৯৭০ সালের একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তিনি, যা সিরিয়ায় একটি নতুন যুগের সূচনা করে। ১৯৭০ সালে নিজ রাজনৈতিক গুরু ও সিরীয় নেতা সালাহ আল-জাদিদকে সরাতে অভ্যুত্থান ঘটান হাফিজ। পরের বছরই সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন তিনি।
১৯৩০ সালের ৬ অক্টোবর সিরিয়ায় একটি আলাউইট পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন হাফিজ আল আসাদ।
আরব সোশ্যালিস্ট বাথ পার্টির নেতা ছিলেন হাফিজ। ১৯৪৬ সালে দলটির রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। সিরিয়ায় বাথ পার্টিকে শক্তিশালী করতে হাফিজের ভূমিকা ছিল। ১৯৬৬ সালে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানে বাথ পার্টি ক্ষমতায় আসে। সে সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান হাফিজ।
দামেস্ক ছেড়ে পালালেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদদামেস্ক ছেড়ে পালালেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বরাবর ‘খেলুড়ে’ নেতা ছিলেন হাফিজ আল-আসাদ। এছাড়া রাজনৈতিকভাবে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন তিনি। সামরিক বাহিনী এবং বাথ পার্টির মধ্যে একটি অনুগত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন তিনি। সিরিয়ার জাতিগত, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে শাসনের কৌশল নির্ধারন করেছিলেন হাফিজ আল আসাদ।
১৯৭৩ সালে মিসর-ইসরায়েল যুদ্ধে হাফিজ ইসরায়েলের বিরোধিতা করলেও প্রায় দুই দশক পর ১৯৯১ সালে তিনিই আবার ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। ইসরায়েলের দখলে থাকা গোলান মালভূমি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় ভূমিকা রাখেন।
তবে ইরাকের নেতা সাদ্দাম হোসেনকে ‘দীর্ঘদিনের শত্রু’ মনে করতেন হাফিজ। ১৯৯০-৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে সিরিয়া বাগদাদের বিপক্ষে ছিল। তিনি এ যুদ্ধে পশ্চিমা জোটকে সমর্থন দিয়েছিলেন।
টানা ২৯ বছর ক্ষমতায় থেকে ২০০০ সালের ১০ জুন দামেস্কে মারা যান হাফিজ। তার মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসেন তাঁর ছেলে বাশার আল-আসাদ। এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের শাসনের সূচনা হয়।
বাশার আল আসাদের উত্থান
২০০০ সালের জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট হন বাশার আল-আসাদ। একই সময়ে তিনি বাথ পার্টির নেতা ও সামরিক বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব নেন।
১৯৬৫ সালে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে বাশারের জন্ম। দামেস্কে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। দামেস্ক ইউনিভার্সিটি থেকে চক্ষুবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করেন। ইচ্ছে ছিলো চোখের চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু ১৯৯৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় বড় ভাইয়ের মৃত্যুর কারণে বাবার উত্তরসূরি হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন বাশার আল-আসাদ।
মাত্র ১২ দিনে আসাদের ২৪ বছরের শাসনামলের অবসানমাত্র ১২ দিনে আসাদের ২৪ বছরের শাসনামলের অবসান
এরপর থেকেই সিরিয়ার রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যায়। ২০০০ সালে বাবার মৃত্যুর পর মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি দেশের শাসনভার নিজের কাঁধে তুলে নেন। ২০০৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাশার পুনর্নির্বাচিত হন।
আসাদের শাসনামল
শাসনামলের শুরুর দিকে বাশার সংস্কারের ভূমিকা রাখেন। প্রশাসনিক-রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক উদারীকরণের পথে হাঁটেন। এ ক্ষেত্রে বাবার আমলের বেশ কিছু কঠোর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেন তিনি।
তবে পরিস্থিতি ক্রমেই বদলে যায়। সংস্কারকের ভূমিকা থেকে আসাদ কর্তৃত্ববাদী শাসক হয়ে উঠতে শুরু করেন। বিরোধী মত দমনে তাঁর কুখ্যাতি ছড়াতে থাকে। সিরিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয় অনেক সরকারবিরোধী শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবীকে। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা গণতন্ত্র সিরিয়ার জন্য নয়।’
বাশার ক্ষমতা নেওয়ার আগে থেকেই সিরিয়ার তরুণদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, দুর্নীতি, রাজনৈতিক ও বাক্স্বাধীনতার অভাববোধ থেকে তুমুল হতাশা ছিল, যা উসকে দেয় আরব বসন্ত।
আসাদ সরকার পতনের মাস্টারমাইন্ড, কে এই জোলানি?আসাদ সরকার পতনের মাস্টারমাইন্ড, কে এই জোলানি?
২০১১ সালের মার্চে সিরিয়ার দক্ষিণের শহর দেরাতে প্রথম সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ দমাতে সরকারি বাহিনীকে মাঠে নামান বাশার। ব্যাপক দমন–পীড়নের মুখে বিক্ষোভকারীরা বাশারের পদত্যাগের দাবি তোলেন। এতে বেড়ে যায় দমন–পীড়ন। সেই সঙ্গে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো সিরিয়ায়।
টানা ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে ধন-মান-ঐতিহাসিক পুরাকীর্তিতে সমৃদ্ধ দেশ বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইতিহাসের ভয়াবহতম মানবিক সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছে দেশটিকে। দীর্ঘ এই গৃহযুদ্ধে সিরিয়ায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। উদ্বাস্তু হয়েছে দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ। ইতিহাসের সবচেয়ে করুণ মানবিক সংকট শুরু হয় সিরিয়ায়।
সূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি ও ইন্টারনেট।/ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.