বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
খালেদা জিয়াকে চৌদ্দগ্রামে নাশকতা মামলা থেকে অব্যাহতি ১৮ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে নিচ্ছে ভারত বাংলাদেশ ও ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে একসাথে কাজ করবে ফলাফল জালিয়াতি:চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব নারায়ন চন্দ্র নাথসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা টেকনাফে পাচারকারীর ফেলে যাওয়া বস্তায় পাওয়া গেল সাড়ে ৪ লাখ পিস ইয়াবা পেকুয়ায় হরিণাফাঁড়ী এলাকায় টপসয়েল কাটা বন্ধে অভিযানে হামলাচেষ্টা ফারিনের ‘ঠিকানা’ ১০ মিলিয়নে বিশ্বকাপের দৌড়ে উইন্ডিজকে হারিয়ে টিকে থাকল বাংলাদেশ বাণিজ্যকে আমরা রাজনীতির সাথে মিলাচ্ছি না:খাদ্য উপদেষ্টা বেড়েছে চোরের উপদ্রব, আতঙ্কে দিন কাটে মানুষের

প্রতিবেশীর অধিকার লঙ্ঘনের শাস্তি

মাহবুবুর রহমান:
প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষার গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। প্রতিবেশী বলতে সেসব লোককে বোঝানো হয়, যারা নিজ বসতবাড়ির আশপাশে অবস্থান করেন। ইসলামে প্রতিবেশীর সংজ্ঞা বেশ বিস্তৃত। হাদিসে বলা হয়েছে, নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ৪০ বাড়ি পর্যন্ত প্রসারিত অঞ্চলে যারা বসবাস করেন তারাই প্রতিবেশী।

ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকারকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও গভীরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কোরআন ও হাদিসে প্রতিবেশীর প্রতি সদাচরণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, যা ইসলামের একটি মৌলিক শিক্ষা। প্রতিবেশীর অধিকারের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণী তুলে ধরা হলো।

প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করা : কোরআনে আল্লাহতায়ালা স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করো এবং তার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না। আর পিতা-মাতার সঙ্গে সৎ ব্যবহার করো, আত্মীয়স্বজন, এতিম ও অভাবগ্রস্ত এবং কাছের ও দূরের প্রতিবেশীর সঙ্গে সৎ ব্যবহার করো।’ (সুরা নিসা ৩৬) কোরআনের এই নির্দেশনা মুসলমানদের প্রতিবেশীর সঙ্গে সৌজন্যতা, সহানুভূতি, সাহায্য ও সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

হাদিসে প্রতিবেশীর অধিকার : হাদিসে প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জিবরাইল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে এত বেশি উপদেশ দিয়েছেন যে, আমি মনে করেছিলাম প্রতিবেশীকে ওয়ারিশ বানানো হবে।’ (সহিহ বুখারি) এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, প্রতিবেশীর অধিকারকে ইসলামে কতটা উচ্চ স্থানে রাখা হয়েছে।

প্রতিবেশীর বিপদে সাহায্য করা : ইসলাম আমাদের নির্দেশনা দেয় যে, কোনো প্রতিবেশী বিপদে পড়লে তার পাশে দাঁড়ানো মুসলমানদের দায়িত্ব। একটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি নিজে পেট ভরে খায়, অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে, সে প্রকৃত মুমিন নয়।’ (মুসনাদে আহমদ)

প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেওয়া : ইসলাম স্পষ্টভাবে প্রতিবেশীর কষ্ট বা অপমান করার বিষয়টিকে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সে ব্যক্তি মুমিন হতে পারে না, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়।’ (সহিহ বুখারি)

সহানুভূতি ও সহযোগিতা প্রদান : ইসলাম শেখায় যে, প্রতিবেশীর প্রতি সহানুভূতি ও সহযোগিতামূলক মনোভাব থাকা উচিত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার নিজের জন্য যা পছন্দ করে, তার প্রতিবেশীর জন্যও তা পছন্দ করে।’ (সহিহ মুসলিম)

উপহার প্রদান : প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে ইসলাম আমাদেরকে উপহার বিনিময় করার কথা বলেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা পরস্পর উপহার বিনিময় করো। এতে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।’ (মুসনাদে আহমদ)

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান : ইসলাম প্রতিবেশীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল সহাবস্থান করার ওপর গুরুত্ব দেয়। প্রতিবেশীর সঙ্গে অশান্তি বা বিরোধের সৃষ্টি করা ইসলামে অবাঞ্ছিত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুসলমান হলো সেই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (সহিহ বুখারি)

অধিকার ক্ষুণœ করার শাস্তি : ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকার লঙ্ঘন করার জন্য কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তি এমন অবস্থায় আসবে যে, তার নেক আমলের পরিমাণ পাহাড়ের মতো হবে। তবে তার প্রতিবেশীরা এসে বলবে, হে আল্লাহ! এই ব্যক্তি আমাদের কষ্ট দিয়েছে, আমাদের প্রতি অন্যায় করেছে। ফলে তার নেক আমল তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হবে।’ (মুসনাদে আহমদ) এই হাদিসে বোঝানো হয়েছে যে, যদি কেউ তার প্রতিবেশীর অধিকার নষ্ট করে বা তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, তবে সে দুনিয়াতে নেক কাজ করলেও কেয়ামতের দিন সেই কাজের সওয়াব প্রতিবেশীদের দিয়ে দেওয়া হবে।

প্রতিবেশীর অধিকারের বিষয়ে আরও গভীর দৃষ্টিতে আলোচনা করলে বোঝা যায়, এটি শুধু সামাজিক আচরণের একটি অনুষঙ্গ নয়, বরং মুসলমানদের ব্যক্তিগত নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে আরও কিছু প্রসঙ্গ এবং হাদিসের আলোকে প্রতিবেশীর অধিকারের বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণী তুলে ধরা হলো।

প্রতিবেশীর গোপনীয়তা রক্ষা করা : ইসলামে প্রতিবেশীর ব্যক্তিগত জীবনকে সম্মান এবং গোপনীয়তা রক্ষা করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রতিবেশীর গোপনীয়তা সম্পর্কে আগ্রহ দেখানো বা তার প্রতি সন্দেহ করা ইসলামের আদর্শের পরিপন্থি। ইসলামে ব্যক্তির গোপনীয়তাকে রক্ষা করতে বলা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যেন কোনোভাবেই তার সম্মানহানি না হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের গোপনীয়তা রক্ষা করবে, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন তার গোপনীয়তা রক্ষা করবেন।’ (সহিহ মুসলিম) এখানে ‘মুসলমান ভাই’ বলতে মুসলমান প্রতিবেশীকেও বোঝানো হয়েছে।

প্রতিবেশীকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করা : ইসলামে প্রতিবেশীর জানমাল ও সম্মান রক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মুসলমানের দায়িত্ব হলো প্রতিবেশী কোনো ধরনের বিপদে পড়লে তাকে রক্ষা করা। একটি হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা একে অপরের শত্রু নও, বরং ভাই ভাই হয়ে থাকো।’ (সহিহ মুসলিম) এই হাদিসে বোঝানো হয়েছে যে, প্রতিবেশীকে যেকোনো বিপদ থেকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং যেকোনো বিপদ থেকে তাদের নিরাপত্তা প্রদান করতে আমরা বাধ্য।

ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকার মানা এবং তাদের জন্য ভালোবাসা ও দয়া প্রদর্শন করা শুধু সামাজিক কর্তব্য নয় বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। প্রতিটি মুসলমানের উচিত এই নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক সুন্দর ও মজবুত করা, যা একটি সুন্দর ও সুস্থ সমাজ গঠনে সহায়ক। মহান আল্লাহ আমাদের যথাযথভাবে প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষা করার তওফিক দান করুন। আমিন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION