ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত সীমান্ত উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফে অপহরণ থামছেই না। বরং দিন দিন বেড়েই চলছে। সংঘটিত অপহরণের ঘটনাগুলোতে শুরুর দিকে স্থানীয়দের যোগসাজশে রোহিঙ্গারা মিলিত হলেও এখন তৈরি হয়েছে একাধিক গ্রুপদের আলাদা আলাদা গ্রুপ। যা এখন সীমান্ত জনপদে আতঙ্কের আরেক নাম।
মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা ভুক্তভোগীরা বলছেন, অপহরণে এখন একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে গহীন পাহাড়কে কেন্দ্র করে। পাহাড় এখন তাদের অভয়ারণ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপহরণের কবল থেকে ফেরা টেকনাফের বাহারছড়ার বড় ডেইল এলাকার এক কিশোর জানায়, তাকে অপহরণ করা দলটিতে ১০ থেকে ১৫ জনের মতো ছিল। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রান্না করে তাদের জন্য খাবার পাঠানো হত। অপহরণকারীদের কথা শুনে ভুক্তভোগী কিশোর স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে তারা সবাই রোহিঙ্গা।
ভুক্তভোগী ওই কিশোরের পিতা বলেন, আমি দিনমজুর মানুষ। ১৫ দিন আগে আমার ছেলেকে অপহরণ করা হয়। ছেলেটাকে পাহাড়ে নিয়ে নির্যাতন করে। ঘরভিটা বন্ধক রেখে, পাড়ার মানুষ থেকে চাঁদা তুলে ২ লাখ টাকা মুছনী ক্যাম্প বাজারে গিয়ে হাতে হাতে দিয়ে ছেলেকে ফিরিয়ে এনেছি। এক থানা থেকে আমাকে আরেক থানায় ঘুরানো হয়েছে। পরে র্যাবের কাছে গেলাম। র্যাব বলেছে, ক্যাম্পের ভেতরে যাওয়ার অনুমতি নেই।
একই এলাকার মুদি দোকানদার জসীম। সম্প্রতি অপহরণের শিকার হন তিনিও। জসীম বলেন, দোকান বন্ধ করতে গিয়েছিলাম রাত ১১টার দিকে। প্রায় ১৮ জনের মতো সন্ত্রাসী আমাকে নিয়ে যায়। এরপর ঘরে কথা বলতে দিয়ে নির্যাতন করা হয়। ৯ দিন নির্যাতনের মুখে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ফেরেন বলে জানান জসীম। ফিরে এসে মামলা করেছেন।
রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপগুলোর তথ্য খুঁজতে গিয়ে হাতে আসে অস্ত্র হাতে এক যুবকের ছবি। বিভিন্ন ক্যাম্পের মাঝিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তার নাম মোহাম্মদ শফি। সে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি ব্লকের বাসিন্দা। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একাধিক মাঝি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শফি ছিল সালমান শাহ গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড। এখন আলাদা হয়ে করেছে নিজস্ব গ্রুপ। ২০২২ সালের ৫ মে এপিবিএনের হাতে অস্ত্রসহ আটক হয়ে কারাভোগও করেছে। এখন জামিনে বের হয়ে পাহাড়ে তার নেতৃত্বে চলছে ত্রাসের রাজত্ব।
সম্প্রতি অপহরণের শিকার হয়ে মুক্তিপণের বিনিময়ে ফিরে আসা একাধিক ভুক্তভোগী জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গড়ে উঠা বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে স্থানীয় চক্রগুলোর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। এরপর টার্গেট করে বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে শিশুদের পর্যন্ত অপহরণ করে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে।
টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফরিদুল্লাহ জানান, তার এলাকাটি এখন অপহরণের হটস্পট। এখান থেকেই শতাধিক মানুষ অপহরণের শিকার হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নয় বরং সকলে মুক্তিপণ দিয়ে ফেরত এসেছে।
টেকনাফের দায়িত্বে থাকা র্যাব-১৫ এর স্কোয়াড্রন লিডার তৌহিদুল মবিন খান জানান, তাদের কাছে তথ্য আছে পাহাড়ে কয়েকটি সশস্ত্র ডাকাত গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তাদের আস্তানাগুলো চিহ্নিত করার কাজ চলছে।
ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএনের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ সিরাজ আমিন জানান, ক্যাম্প ঘিরে অপরাধ সংঘটিত করা গ্রুপগুলোর কোনো তালিকা তাদের কাছে নেই। তবে বিভিন্ন ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর তারা অভিযুক্তদের ধরতে কাজ করে থাকেন।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন জানান, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় এ সময়ে টেকনাফের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে অপহরণের ঘটনা ঘটে বেশি। অপহরণের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে মানবপাচার, মাদক ব্যবসার টাকা সংগ্রহ। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় অপহরণ বন্ধে বেগ পেতে হচ্ছে। শীঘ্রই বিশেষ ফোর্স নিয়ে পাহাড়ে অভিযান শুরু হবে। সূত্র :পূর্বকোণ।
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.