মো. আবদুর রহমান:
মিথ্যা সব পাপের মূল। মিথ্যা বলার অভ্যাস ধ্বংস ডেকে আনে। মিথ্যাবাদীকে সমাজের কেউ পছন্দ করে না। সবাই তাকে ঘৃণার চোখে দেখে। মিথ্যা শুধু দুনিয়ার জীবনের ক্ষেত্রেই ঘৃণ্য কাজ নয়। বরং দুনিয়ায় মিথ্যা বলার প্রতিদান পরকালে আরও ঘৃণিতভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। মিথ্যাবাদীর জন্য পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি। তাই মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস থাকলে আমাদের তা দ্রুত পরিহার করতে হবে। মহান আল্লাহর কাছে তা থেকে একনিষ্ঠভাবে তওবা করতে হবে। অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তাহলে আশা করা যায়, মহান আল্লাহ আমাদের এই পাপ ক্ষমা করে দেবেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনের ওপর ইমান আনে না, তারাই মিথ্যা রচনা করে এবং তারাই মিথ্যাবাদী।’ (সুরা নাহল ১০৫) মিথ্যা মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। মিথ্যার বহুবিধ ক্ষতি রয়েছে। মিথ্যার ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণী উল্লেখ করা হলো।
পাপের প্রবণতা বৃদ্ধি : মিথ্য বলার অভ্যাস ব্যক্তিকে পাপে নিমজ্জিত করে। এর ফলে মানুষ ক্রমাগত পাপ করতে থাকে। একটি মিথ্যা বললে সেই মিথ্যাটিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আরও মিথ্যা বলতে হয়। মিথ্যা বলার মানসিকতা ব্যক্তিকে নতুন নতুন পাপে নিমজ্জিত করে। এজন্যই বলা হয়, মিথ্যা সব পাপের জননী বা মূল।
মুনাফিকের নিদর্শন : মিথ্যা কথা বলা মুনাফিকের নিদর্শন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি। সে যখন কথা বলে, তখন মিথ্যা বলে। ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে। তার কাছে কোনো কিছু আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে। (সহিহ বুখারি) মুসলিম শরিফে আরও একটু বেশি বর্ণিত আছে, যদিও সে নামাজ আদায় করে, রোজা পালন করে এবং নিজেকে মুসলমান দাবি করে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুল (সা.)-এর কাছে মিথ্যার চেয়ে অন্য কোনো দোষ বেশি ঘৃণিত ছিল না। (মুসনাদে আহমাদ)
মিথ্যা বলা কবিরা গুনাহ : মিথ্যা কথা বলা কবিরা গুনাহ। একদা হজরত রাসুল (সা.) সাহাবিদের বলেন, আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ সম্পর্কে বলব না? সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! অবশ্যই বলুন। তখন তিনি বললেন, কবিরা গুনাহ হলো, আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা। বর্ণনাকারী বলেন, হজরত রাসুল (সা.) বারবার এ কথা বলতে লাগলেন। (সহিহ বুখারি)
ঘৃণিত কাজ : মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস একটি ঘৃণ্য ও অভিশপ্ত কাজ। যার মধ্যে এর অনুশীলন যত প্রবল তার জন্য ঘৃণা ও অভিশাপের ধারাও তত প্রবল। মহান আল্লাহ মিথ্যাবাদীদের ভালোবাসেন না। মহান আল্লাহর চরম অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ নিয়ে মিথ্যাবাদীরা ধ্বংসের পথে এগুতে থাকে। অপরদিকে কোনো মানুষই মিথ্যাবাদীকে ভালোবাসে না, পছন্দ করে না।
মানসিক শান্তি কেড়ে নেয় : মিথ্যা বলার অভ্যাস মানুষের মানসিক শান্তি কেড়ে নেয়। তাই মিথ্যুক কখনো আন্তরিক প্রশান্তি অনুভব করতে পারে না। বরং সবসময় সে একটা অস্থিরতা ও অশান্তির মধ্যে দিনাতিপাত করে। মিথ্যা ডেকে আনে অশান্তি। হজরত হাসান ইবনে আলি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, সত্যবাদিতার মধ্যে রয়েছে প্রশান্তি এবং মিথ্যাবাদিতার মধ্যে রয়েছে অশান্তি। (তিরমিজি) তাই শান্তিময় জীবনের জন্য মিথ্যা ত্যাগ করা জরুরি।
জীবিকা সংকুচিত করে দেয় : মিথ্যা বলার কারণে জীবিকা সংকীর্ণ হয়ে যায়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ দীর্ঘায়ু হওয়ার কারণ। মিথ্যাচারিতা জীবিকা সংকুচিত করে দেয় এবং দোয়া দ্বারা ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব)
জাহান্নামে প্রবেশের কারণ : মিথ্যাচার পরকালে চিরস্থায়ী দুর্ভাগ্যের কারণ হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন মিথ্যাচারীদের জন্য ধ্বংস ও দুর্ভোগ।’ (সুরা মুতাফফিফিন ১০) পরকালে মিথ্যাবাদীদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে এবং অহংকারবশত অস্বীকার করে তারাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।’ (সুরা আরাফ ৩৬) মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আপনি তাদের চেহারা কালো দেখতে পাবেন, যারা আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ করেছে।’ (সুরা জুমার ৬০)
আমাদের দুনিয়ার এই জীবনই শেষ নয়। বরং এই জীবনের পরও আরেকটি জীবন রয়েছে। সেই জীবনের ব্যাপ্তি অনন্তকাল। দুনিয়া আমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। পরকালে আমাদের দুনিয়ার জীবনের ফলাফল দেওয়া হবে। তাই আমাদের করণীয় হলো যথাসম্ভব ভালো কাজ করে পরকালের পাথেয় অর্জন করা।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.