আসআদ শাহীন:
রমজান সব মাসের সেরা। এ মাসের অল্প আমলেও অনেক সওয়াব দেওয়া হয়। মুমিন-মুসলমানরা এ মাসে বেশি বেশি আমল করে নেকির পাল্লা ভারী করেন। তাই তারা সারা বছর এ মাসের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। সাহাবায়ে কেরাম আনন্দভরা হৃদয়ে রমজানকে অভ্যর্থনা জানাতেন। তাদের জীবন ও কর্মে এই পবিত্র মাসের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও প্রস্তুতির এক অনন্য চিত্র ফুটে উঠত। বহু বর্ণনায় পাওয়া যায়, কীভাবে তারা রমজানের আগমনের সংবাদ পেয়ে আনন্দিত হতেন, ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন হয়ে যেতেন এবং আত্মশুদ্ধির এক নতুন অধ্যায় শুরু করতেন। তাদের রমজান প্রস্তুতির কিছু দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হলো।
নবীজির শুভ সংবাদ : নবী কারিম (সা.) রমজান আগমনের সুসংবাদ দিতেন সাহাবিদের। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার সাহাবিদের উদ্দেশে বললেন, ‘তোমাদের কাছে রমজান উপস্থিত হয়েছে, যা একটি বরকতময় মাস। তোমাদের ওপর মহান আল্লাহ এই মাসের রোজা ফরজ করেছেন। এই মাসের আগমনে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং আল্লাহর অবাধ্য শয়তানদের গলায় লোহার বেড়ি পরানো হয়। এ মাসে একটি রাত রয়েছে যা এক হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি সেই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল সে প্রকৃত বঞ্চিত রয়ে গেল।’ (সুনানে নাসায়ি ২১০৬)
চাঁদ দেখা ও রমজানের প্রতীক্ষা : সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রমজানের চাঁদ দেখার জন্য গভীর আগ্রহ ও ব্যাকুলতার সঙ্গে অপেক্ষা করতেন। রাতের আঁধারে বেরিয়ে আসতেন, আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদের খোঁজ করতেন। তাদের হৃদয় রমজানের জন্য এতটাই উদগ্রীব থাকত যে, চাঁদ দেখার মাধ্যমেই তারা পবিত্র মাসের আগমনকে উপলব্ধি করতেন। এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্যতম সুন্নত ছিল, যা সাহাবায়ে কেরাম (রা.) গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে অনুসরণ করতেন। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা আরম্ভ করবে এবং চাঁদ দেখে ইফতার করবে। আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে শাবানের গণনা ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে। (সহিহ বুখারি ১৯০৯)
পূর্ববর্তী রোজার কাজা আদায় : রমজানের জন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) পূর্ববর্তী বছরের কোনো রোজা যদি অনিবার্য কারণে ছুটে যেত, তবে তা রমজানের আগেই আদায় করে নিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বিগত রমজানের ছুটে যাওয়া রোজাগুলো শাবান মাসে আদায় করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমার ওপর রমজানের কিছু রোজা কাজা থাকত, কিন্তু আমি তা আদায় করতে পারতাম না, যতক্ষণ না শাবান মাস আসত।’ (সহিহ বুখারি ১৯৫০)
রমজান আগমনের জন্য ছয় মাস দোয়া : সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রমজানের জন্য এমনভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন যে, তারা ছয় মাস আগে থেকেই আল্লাহর দরবারে দোয়া করতেন যেন তিনি তাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দেন। তারপর রমজানের পরবর্তী ছয় মাস তারা আবার দোয়া করতেন যেন আল্লাহ তাদের রোজা ও ইবাদত কবুল করেন।
এভাবে তাদের মধ্যে বছর জুড়ে রমজানের ছোঁয়া লেগে থাকত। (আসরারুল মুহিব্বিন ফি রামাদান ৪২) সাহাবিদের অনেকেই বিশেষ কিছু দোয়া করতেন, সেগুলোর মধ্যে বিশেষ কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
ওমর (রা.)-এর দোয়া : ‘হে আল্লাহ! আমাদের বেশি দান করো। আমাদের কম দিয়ো না। আমাদের সম্মান ও মর্যাদা দাও। আমাদের লাঞ্ছিত কোরো না। আমাদের দান করো। বঞ্চিত কোরো না। আমাদের০ অগ্রগামী করো। আমাদের ওপর অন্য কাউকে অগ্রগামী কোরো না। আমাদের সুপ্রসন্ন করো এবং আমাদের ওপর সুপ্রসন্ন থাকো।’ (আল মুসতাদরিক আলাস সহিহাইন ১৯৮৫)
উসাইদ (রা.)-এর দোয়া : ‘হে আল্লাহ! আমাদের পরিণাম সব বিষয়ে সুন্দর করো এবং আমাদের দুনিয়ার লাঞ্ছনা ও পরকালের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।’ (আল জামিউস সগির ১৪৫০)
হুসাইন (রা.)-এর দোয়া : ‘হে আল্লাহ! তুমি যাদের সঠিক পথে পরিচালিত করেছ, আমাদেরও তাদের সঙ্গে হেদায়াত দাও। তুমি যাদের নিরাপদে রেখেছ, তাদের সঙ্গে আমাদেরও নিরাপদ রাখো। তুমি যাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছ, তাদের সঙ্গে আমাদের অভিভাবকত্বও গ্রহণ করো। তুমি আমাদের যা দান করেছ, তাতে বরকত দাও। তুমি যা ফয়সালা করেছ, তার অনিষ্ট থেকে আমাদের রক্ষা করো। তুমি ফয়সালা করো, কিন্তু তোমার বিরুদ্ধে কেউ ফয়সালা করতে পারে না। তুমি যার বন্ধু, সে কখনো লাঞ্ছিত হয় না। তুমি বরকতময়, তুমি মহান।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান ৭২২)
শাবান মাসে নফল রোজার অভ্যাস : সাহাবায়ে কেরামের রমজান প্রস্তুতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। শাবান ছিল রমজানের এক অনন্য প্রস্তুতিপর্ব, যেখানে রোজা, কোরআন তেলাওয়াত এবং অন্যান্য নেক আমলের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হতো। এই অভ্যাস তাদের রমজানের ইবাদতের জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত হতে সহায়তা করত। নবী কারিম (সা.) শাবান মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন। বলা হয়, এর কারণ হলো, এই মাসে মানুষ সাধারণত রোজার ব্যাপারে অবহেলা করে। নবী কারিম (সা.) স্বয়ং এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘এটি এমন একটি মাস, যা রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী হওয়ায় অনেক মানুষ এর ব্যাপারে গাফেল থাকে। অথচ এটি এমন এক মাস, যখন মানুষের আমলসমূহ আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। আমি চাই যে, আমার আমল যখন আল্লাহর দরবারে পেশ করা হবে, তখন আমি রোজাদার থাকি।’ (সুনানে নাসায়ি ২৩৫৭)
যেভাবে রমজানকে স্বাগত জানাব : মুসলমানদের জন্য রমজান মাসের আগমন এক মহা নেয়ামত, যা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ দান। আল্লাহ তার সেই বান্দাকে কখনো ফিরিয়ে দেন না, যে অন্তর দিয়ে তার দিকে ফিরে আসে এবং তার সান্নিধ্য লাভের আকাক্সক্ষা করে। এটি স্পষ্ট হয় সেই ঘটনার আলোকে, যা হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, একবার বালী গোত্রের দুই ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাদের একজন যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হন, অন্যজন এক বছর পর ইন্তেকাল করেন। হজরত তালহা বিন উবাইদুল্লাহ (রা.) বলেন, আমি একবার স্বপ্নে জান্নাত দেখতে পেলাম এবং লক্ষ করলাম, যে ব্যক্তি পরে ইন্তেকাল করেছেন, তিনি শহীদের আগেই জান্নাতে প্রবেশ করেছেন! আমি এতে বিস্মিত হলাম। সকালে উঠে এ বিষয়টি নবী করিম (সা.)-এর কাছে উপস্থাপন করলাম। নবী করিম (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, সে কি পরের বছর রমজান মাস পেয়েছিল না? সে কি ছয় হাজারেরও বেশি রাকাত নামাজ আদায় করেনি, কিংবা আরও কিছু? (মুসনাদে আহমদ ৮৩৯৯
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.