ডয়চে ভেলে
ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাত দেশের ভেতরে পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করেছে। এর ফলে আপাতদৃষ্টিতে ইমরান খানের প্রতিদ্বন্দ্বীরাই শক্তিশালী হয়েছে এবং তার মুক্তির লড়াই আরো কঠিন হয়ে উঠেছে। একসময়ের তারকা ক্রীড়াবিদ ও জনপ্রিয় রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ ইমরান খান এখনো কারাগারে রয়েছেন। ইমরানের সমর্থকরা তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন।
জানুয়ারিতে ইমরান খানকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি ও তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) তৎকালীন সরকারের সঙ্গে চলা আলোচনা বাতিল করে দেয়। ২০২২ সালের এপ্রিলে পার্লামেন্টে আস্থা ভোটের মাধ্যমে ইমরানকে পদ থেকে অপসারণ করা হয় এবং পরবর্তীতে ২০২৩ সালের আগস্টে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগসহ অসংখ্য মামলা চলছে।
পিটিআইয়ের দাবি, ইমরানের বিরুদ্ধে সব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ইমরান নিজে সেনা কর্মকর্তা ও ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’কে এ জন্য দায়ী করেছেন।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তিনি এক অভূতপূর্ব প্রচারণা শুরু করেন। প্রকাশ্যে পাকিস্তানের শক্তিশালী জেনারেলদের সমালোচনা করেছেন।
সামরিক বাহিনী অবশ্য বরাবরই রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের কথা অস্বীকার করে এসেছে।
প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন ইমরান?
৭২ বছর বয়সী ইমরান খান এখনো জেল থেকে বেরিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসার আশা ছাড়েননি। কারাবন্দি ইমরান খানের পাকিস্তানজুড়ে লাখ লাখ সমর্থক রয়েছে এবং এখনো তাদের উৎসাহিত করতে কারাগার থেকেই ব্যক্তিগত ক্যারিশমা কাজে লাগাতে পারেন তিনি।
কিন্তু কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাত পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির অনেকেই মনে করেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার বিপরীতে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
গ্যালাপ পাকিস্তানের এক জরিপে দেখা গেছে, ৯৩ শতাংশ উত্তরদাতা এই সংঘর্ষের পরে সেনাবাহিনীর প্রতি আরো অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছেন।
সংক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ফলে শেহবাজ শরিফের সরকার পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান ও ইমরানের কথিত প্রতিদ্বন্দ্বী জেনারেল আসিম মুনিরকে পদোন্নতি দিয়েছে। আসিম মুনিরকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত ও শত্রুকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করার কৌশলগত প্রতিভা ও সাহসী নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ’ ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করা হয়েছে।
পিটিআই আশার আলো দেখছে
এদিকে সেনাবাহিনীর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ইমরানের মুক্তির আশা ক্রমশ দূরবর্তী হয়ে উঠছে বলে মনে হচ্ছে। প্রবীণ বিশ্লেষক নাজাম শেঠি ডিডব্লিউকে বলেন, ‘খানের স্বল্পমেয়াদি ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সামরিক নেতৃত্ব তার সঙ্গে এমন কোনো চুক্তি করতে উৎসাহিত বা বাধ্য নয়, যার ফলে তার ক্ষমতায় ফিরে আসার পথ প্রশস্ত হবে।’
বরং পিটিআই সূত্র জানাচ্ছে, ইমরান আদালতে খালাস পেয়ে অথবা সামরিক নেতাদের সঙ্গে সম্ভাব্য আলোচনার মাধ্যমে এখনো কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
পিটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শেখ ওয়াকাস আকরাম ডিডব্লিউকে বলেন, ‘নিঃসন্দেহে ইমরান খানের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এবং পাকিস্তান ও এর ২৪ কোটি মানুষের ভবিষ্যতের সঙ্গে এটি জড়িত, যারা বারবার পাকিস্তানকে বহুমুখী সংকট থেকে বের করে আনার জন্য তার নেতৃত্বের ওপর তাদের অটল আস্থা ও আস্থা প্রকাশ করেছেন।’
সরকার, সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনার কথা অস্বীকার ইমরানের: গত সপ্তাহে ইমরান খানের এক্স অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে জানানো হয়েছে, কোনো আলোচনার জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। আলোচনায় থাকা এসংক্রান্ত নানা তথ্যকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসমা শিরাজির মতে, ইমরানের ভবিষ্যৎ মূলত তার নিজের আচরণের ওপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, ‘ইমরান এখন কয়েক মাস আগের মতো তার মুক্তির আলোচনা করার মতো শক্ত অবস্থানে নেই এবং বেশ কয়েকটি বিচারাধীন মামলার কারণে তার জেল থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনাও খুবই কম।’
ইমরানের মুক্তির জন্য মধ্যস্থতা ও আলোচনা
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে একটি বিশাল রাজনৈতিক প্রভাব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর থেকে তারা একাধিকবার দেশের ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
কিন্তু ইমরানের দল পিটিআইয়ের তথ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী আকরাম মনে করেন, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী সংবিধানের অধীনে নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
আকরামের মতে, ‘ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পর সেনাবাহিনীর জনপ্রিয়তাকে চেয়ারম্যান ইমরান খানের অবৈধ কারাবাস থেকে মুক্তির সঙ্গে মিলিয়ে দেখার সঙ্গে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির কোনো সম্পর্ক নেই।’
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তালাল চৌধুরীও একই ধরনের কথাই বলেছেন। ডিডব্লিউকে তিনি বলেছেন, ‘সামরিক নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দিয়েছে, আলোচনা রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ও সংসদীয় ফোরামের মাধ্যমেই হবে।’
ভয়েস/জেইউ।
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.