মাওলানা আশরাফুল ইসলাম:
ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া মুমিন বান্দার জন্য অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। ফেরেশতারা কখনো আল্লাহর অবাধ্যতা করেন না, গুনাহ করেন না, বরং সারাক্ষণই আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত থাকেন। কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশেই কাজ করেন এবং যাদের জন্য দোয়া করেন, তাদের দোয়া কবুলের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠে।
ইসলাম এমন একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান, যেখানে মানুষের আত্মিক ও সামাজিক উন্নতির পথ সুস্পষ্টভাবে নির্দেশিত। এই পথের পথিকরা যখন সৎকর্মে অগ্রসর হয়, আল্লাহতায়ালা তাদের জন্য ফেরেশতাদের দোয়া ও সহানুভূতি নির্ধারণ করে দেন। নবীজি (সা.)-এর অসংখ্য হাদিসে ফেরেশতাদের এই দোয়া লাভের বিষয়গুলো বর্ণিত হয়েছে। আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা, নানা বিভ্রান্তি আমাদের অন্তরকে ধীরে ধীরে নির্জীব করে দিচ্ছে। ঠিক এই সময়েই আমাদের প্রয়োজন নবীজি (সা.)-এর দেখানো পথের দিকে ফিরে যাওয়া, এমন কিছু কাজের প্রতি মনোযোগ দেওয়া, যার ফলে আল্লাহর রহমত লাভ করা যাবে। ফেরেশতারা কারও জন্য দোয়া করলে তারা বিশেষভাবে আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত হন। হাদিসের আলোকে জানা যায়, এমন নয় যে, কেবল বড় বড় সাধনা বা কঠিন ত্যাগের মাধ্যমেই ফেরেশতাদের দোয়া লাভ করা যায়। বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট নেক কাজের মাধ্যমেই তা সম্ভব। যেমন দরুদ শরিফ পাঠ, রোগীর খোঁজ নেওয়া, অজু অবস্থায় ঘুমানো, প্রথম কাতারে নামাজ পড়া ইত্যাদি। এখানে সেসব গুণাবলি সম্পন্ন মানুষের কথা উল্লখ করা হবে, যাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করে থাকেন। আমাদের প্রতিজ্ঞা করা প্রয়োজন যে, আমরা যেন সেসব মানুষের গুণাবলি নিজেদের জীবনে ধারণ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আত্মিক উৎকর্ষের পথে এগিয়ে যেতে পারি। এমনকি পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত যেন আমরা এমন আমলের সঙ্গেই জড়িত থাকতে পারি, যেগুলোর মাধ্যমে আমাদের প্রতি সবসময় ফেরেশতাদের দোয়া বর্ষিত হতে থাকে।
দরুদ পাঠ : যারা হজরত রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়ে তাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ বিন আমের বিন রাবিয়া তার পিতা হজরত আমের (রা.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি হজরত রাসুল (সা.)-কে মিম্বারে বক্তব্য দিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরুদ পেশ করবে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করবে। তারা ততক্ষণ পর্যন্ত দোয়া করতে থাকবে, যতক্ষণ সে দরুদ পেশ করতে থাকবে। সুতরাং কম হোক বেশি হোক, যার ইচ্ছা সে দরুদ পড়তে পারে।’ (সহিহুল জামে ৫৭৪৪)
অন্যের জন্য দোয়া করা : যারা অন্যের জন্য দোয়া করে ফেরেশতারাও তাদের জন্য দোয়া করেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম তার অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য দোয়া করলে তা কবুল করা হয় এবং তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকে। যখন সে তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণের দোয়া করে তখন নিযুক্ত ফেরেশতা বলে, আমিন। অর্থাৎ হে আল্লাহ! কবুল করুন এবং তোমার জন্য অনুরূপ (তোমার ভাইয়ের জন্য যা চাইলে আল্লাহ তোমাকেও তা দান করুন)।’ (সহিহ মুসলিম ৮৮)
নামাজ শেষে বসে থাকা : নামাজ শেষে অজুসহ যেসব মুসল্লি স্বীয় স্থানে বসে থাকে তাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। হজরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা নামাজের পর নিজ স্থানে বসে থাকে, তাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত তার অজু ভঙ্গ না হয়। (ফেরেশতারা দোয়া করেন) হে আল্লাহ! আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি তাদের ওপর দয়া করুন।’ (মুসনাদে আহমাদ ৬৭২৭)
রোগীর সেবা করা : যারা রোগী দেখতে যায় বা রোগীর সেবাযতœ করে তাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আলী (রা.) বলেন, আমি হজরত রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি সকাল বেলা কোনো রোগীকে দেখতে যায় তার সঙ্গে ৭০ হাজার ফেরেশতা যায় এবং তারা সবাই সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকে। তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান নির্ধারণ করা হয়। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় কোনো রোগীকে দেখতে যায়, তার সঙ্গে ৭০ হাজার ফেরেশতা যায় এবং তারা সবাই সকাল পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকে। আর তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান নির্ধারণ করা হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ ৯২৮)
প্রথম কাতারে নামাজ আদায় করা : যারা মসজিদে প্রথম কাতারে নামাজ আদায় করে তাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। হজরত বারা বিন আজেব (রা.) বলেন, আমি হজরত রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা প্রথম কাতারে নামাজ আদায়কারীর প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।’ (ইবনে মাজাহ ৯৮৭)
ধর্মীয় জ্ঞান শেখানো : যারা মানুষকে ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা দেয় ফেরেশতারা তাদের জন্য দোয়া করেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা রহমতের দোয়া করেন, যারা মানুষকে কল্যাণকর বিষয় (দীনি জ্ঞান) শিক্ষা দেয়। এমনকি গর্তের পিপীলিকা ও সাগরের মাছ তাদের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করে।’ (জামে তিরমিজি ২৬০৯)
অজু করে ঘুমানো : যারা অজু করে রাতে ঘুমায় তাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু করে রাতযাপন করে তার শিয়রে একজন ফেরেশতা রাতযাপন করেন। সে যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হয় (কোনো কোনো বর্ণনা মতে, যতবার ঘুমের ভেতর নড়াচড়া করে) তখন ওই ফেরেশতা বলতে থাকে, হে আল্লাহ! অমুককে মাফ করে দিন। কেন না সে পবিত্র অবস্থায় রাতযাপন করছে।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান ১০৫১)
দান করা : যারা প্রতিদিন কিছু না কিছু দান করে তারা ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রতি সকালে মানুষ যখন ঘুম থেকে ওঠে তখন দুজন ফেরেশতা আসেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ, দানকারীদের ধন আরও বাড়িয়ে দিন। আর দ্বিতীয়জন বলেন, হে আল্লাহ, কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।’ (সহিহ মুসলিম ২২২৬)
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.