ড. মিল্টন বিশ্বাস:
চলতি মাসে যুক্তরাজ্য সফরের সময় বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘সমস্যা সমাধানে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান। এ বিষয়ে বাংলাদেশের নীতি হলো, তাদের (রোহিঙ্গাদের) ক্যাম্পের বাইরে স্থায়ী হতে না দেওয়া। আমাদের নিজেদেরই অনেক সমস্যা আছে। আমরা নতুন আরেকটা জনগোষ্ঠীর বোঝা বইতে পারবো না।’ উল্লেখ্য, মিয়ানমারে সামরিক নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। ধারণা করা হচ্ছে চলতি বছর(২০২৫) বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১২ থেকে ১৩ লাখ পর্যন্ত হতে পারে, যাদের অন্তত ৫২ শতাংশ নারী ও শিশু। তাদের সাহায্যের জন্য কেন আরও বেশি কিছু করছেন না- এই প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেদিন আরো বলেছেন, ‘আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমি জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গার সঙ্গে দেখা করেছি। কী করা উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং এদের ফেরার জন্যে সহায়তা চেয়ে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। সেক্ষেত্রে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান। সবাই এখন শুধু খাবার ও অন্যান্য সহায়তা নিয়েই ব্যস্ত, কিন্তু এদের নিজ দেশে কীভাবে ফেরত পাঠানো যাবে, সে বিষয়ে কেউ আলাপ করছে না।’ সেদিন তাঁর স্পষ্ট কথা ছিল-‘নতুন বোঝা বইতে রাজি নই, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে স্থায়ী হতে পারবে না’।
ড. ইউনূসের কথার সূত্র দিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে আছে। সেখানে অধিক সংখ্যক শরণার্থী দীর্ঘমেয়াদি বসতি গাড়লে দেশটির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান ও সম্পদের ওপর চাপ বাড়বে। এই পরিস্থিতি স্থানীয় জনগণের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য তাঁর মতামত অনুযায়ী, একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের একমাত্র কার্যকর উপায়- ‘‘প্রত্যাবাসন’’। এর কারণগুলি হল: মানবিক দিক থেকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নিরাপদ ও সম্মানজনক ভাবে ফিরে যেতে হবে। ফলে দেশের সম্পদ ও সম্পদ ব্যবস্থাপনায় চাপ কমবে, সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। মিয়ানমার সরকারের উচিত রোহিঙ্গাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও নাগরিকাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া।
এজন্য রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিরাপদ ও স্বচ্ছ হতে হবে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ যে অস্থিরতা আছে যার পরিণতিতে রাজনীতি ও মানবাধিকার বিষয়ের সমাধান সংকটে নিমজ্জিত, সেই অবস্থার সমাধান না হলে প্রত্যাবাসন সমস্যা হতে পারে। দরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ও সমন্বিত পদক্ষেপ। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার না দিলে আবার ফেরত বিষয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হবে। এক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলির মতামতও গুরুত্বপূর্ণ- যেমন চীন, ভারত ও অন্যান্য দেশ এ বিষয়ে তাদের স্বার্থের জন্য স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে পারে। সার্বিকভাবে বলা চলে, রোহিঙ্গা সমস্যা খুব জটিল এবং সাবলীল সমাধানের জন্য একাধিক কৌশল দরকার। প্রয়োজন হার্ড ও সফট ডিপ্লোমেসি, অর্থাৎ শক্তিশালী আন্তর্জাতিক চাপ ও মানবিক উদ্যোগের সমন্বয়। মিয়ানমার সরকার ও আঞ্চলিক দেশগুলির মধ্যে শান্তি আলোচনা ও সমঝোতা হলে উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে মানবাধিকার সুরক্ষা সম্ভব।
রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান ঐখানে রয়েছে যেখানে রোহিঙ্গারা নিরাপদে, সম্মানের সাথে স্বদেশে ফিরে যাবে। এটি একটি সময়ের দাবি, যা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, রাজনৈতিক সমঝোতা এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে সম্ভব। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশের জন্যেই এই বিষয়ে সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্যোগ দরকার।
উপরিউক্ত সাক্ষাৎকারের মতই অতীতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে তাদের স্বদেশে নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে প্রত্যাবাসন। সেসময় তিনি বিভিন্ন মহলে জানান, ‘‘রোহিঙ্গাদের জন্য সহানুভূতি থাকা উচিত, কিন্তু সংখ্যার ভারে দেশের উপর বোঝা বাড়াবার স্থান নেই।” তিনি বারবার বলেছেন যে, রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন দ্রুত এবং নিরাপদ ভাবে সম্পন্ন হওয়া উচিত। তিনি বিশ্বাস করেন, এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি আরও বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও সক্রিয় ভূমিকা দরকার, যাতে রোহিঙ্গাদের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
অর্থাৎ মানবিক সাহায্য ও উন্নয়নমূলক উদ্যোগের পাশাপাশি রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি। স্মর্তব্য যে, সমস্যা স্বাভাবিক ও সুষ্ঠু সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, দীর্ঘমেয়াদি টানাপোড়েন থাকলে, আর্থ-সামাজিক দুর্যোগ সৃষ্টি হবে এবং দেশের বোঝা বাড়বে। তাঁর মতামত ও ঘোষণা হলো-‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক বোঝা কমানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। তবে তিনি বারবার মানবিক দিক থেকে সহানুভূতি দেখানোর পাশাপাশি, নেতৃস্থানীয় দায়িত্বে থাকা সরকারের ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত পদক্ষেপের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন।’ প্রকৃতপক্ষে ড. ইউনূস মনে করেন, রোহিঙ্গাদের পারিপার্শ্বিক সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা আবশ্যক। তাঁর মতে, মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণে, সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান সম্ভব। বলাবাহুল্য, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মূল উদ্দেশ্য হলো মানবিক, শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক ভাবে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা। তাঁর উদ্দেশ্য গুলো সংক্ষেপে নিম্নরূপ:
ক) রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেওয়া: একদিকে তিনি চান, যাতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ ভাবে তাদের নিজ দেশে ফিরতে পারে। তাঁর মূল বিশ্বাস, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য প্রথম ও জরুরি কাজ হলো তাদের স্বাভাবিক জীবন ও অধিকার পুনরুদ্ধার। খ) আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহযোগিতা অর্জন: তিনি চান, বিশ্ব সম্প্রদায় যেন রোহিঙ্গাদের সহায়তা ও প্রত্যাবাসনে সক্রিয় হোক, যাতে সমস্যা দ্রুত ও শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়। বিশেষ করে, জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাগুলির মাধ্যমে অর্থ, সাহায্য ও রাজনৈতিক সমর্থন বাড়ানোর জন্য প্রচেষ্টা চালান। গ) মানবিক সহানুভূতি ও বোঝাপড়া বৃদ্ধি: তাঁর লক্ষ্য হলো, রোহিঙ্গাদের তাদের মানবাধিকার ও মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপনের অধিকার নিশ্চিত করা। একইসঙ্গে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার উভয় দেশের জনসাধারণের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সংহতি তৈরিতে কাজ করা। ঘ) দ্রুত ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য শান্তিপূর্ণ, বিকল্প ও কার্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করা: তিনি চান, যাতে সকল পক্ষের সম্মতিসহ স্থায়ী সমাধানে পৌঁছানো যায়। দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জন তাঁর মূল লক্ষ্য।
আসলে ড. ইউনূসের উদ্দেশ্য হলো— রোহিঙ্গাদের স্বদেশে নিরাপদে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া, মানবিক সাহায্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং আন্তর্জাতিক ভাবে একসঙ্গে কাজ করে এই সংকটের টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা। তিনি চান, এ পরিস্থিতি যেন শান্তিপূর্ণ, মানবিক ও সম্মানের সঙ্গে সমাধান হয়।
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটকে অভিহিত করেছিলেন- ‘‘তাজা টাইম বোমা’’ হিসেবে। এর মানে হলো এটি এমন এক পরিস্থিতি যদি দ্রুত সমাধান না করা হয়, তবে ভবিষ্যতে বড় ধরনের মানবিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। কারণ অমীমাংসিত রোহিঙ্গা সংকট অপ্রতিরোধ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। এই সংকটটি একটি সময়ের অতিরিক্ত চাপের মতো, যার বিস্ফোরণ যে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে। অর্থাৎ যদি এখনই কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হয়, তবে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। যেমন আগেই বলা হয়েছে-মানবিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে। এই দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও জটিল ও ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। এই কথা বলে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এই সমস্যা আঞ্চলিক শান্তির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এখনই যদি কার্যকর সমাধান করা না হয়, তবে এই বোতলকে চাপ দিলে পরিস্থিতি অপ্রত্যাশিত রকমের বিস্ফোরিত হতে পারে, যার ফলে মানবিক বিপর্যয় এমনকি সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়বে।
ড. ইউনূসের মতে, ‘‘এটি বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়, পুরো বিশ্বের সমস্যা।’’ তাঁর বক্তব্য হলো, এই সংকট সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি, কারণ এটা শুধু এক দেশের সমস্যা নয়; এটি বিশ্বজনীন। প্রথমত, দ্রুত সমাধানের জন্য বাংলাদেশকে কাজ করতে হবে, অপেক্ষা করা যাবে না। মালয়েশিয়া, আসিয়ান, জাতিসংঘ–সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে কাজ চালাতে হবে। বলাবাহুল্য, রোহিঙ্গা সংকটের পরিস্থিতি এখন তীব্র। আমাদের অবশ্যই দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে, নয়তো পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে। ড. ইউনূস বিভিন্ন আলোচনা, সমাবেশ ও প্রতিনিধিদলের মাধ্যমে এই সংকটের ব্যাপারে নজরদারি ও কার্যক্রম চালানোর ওপর জোর দিচ্ছেন ক্রমাগত।
আগেই বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের এই সংকট শুধু আঞ্চলিক নয়, এটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলি যেন একত্রে কাজ করে এ সমস্যার সমাধান খুঁজে নেয়-এই প্রত্যাশা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বিশেষ করে মালয়েশিয়ার আসিয়ানের পরবর্তী চেয়ার হওয়াকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি বক্তব্যে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে নতুন ভাবনা ও কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। প্রথমত: তিনি বলেন যে, জাতিসংঘ মহাসচিব যেন দ্রুততম সময়ে এক ব্যাপক ও সর্বস্তরের সম্মেলনের আয়োজন করেন। এই সম্মেলনে বিভিন্ন পক্ষকে একত্রিত করে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হবে। নতুন ও দূরদর্শী সমাধানের জন্য আলোচনায় আসা প্রয়োজন। সমাধান কীভাবে কার্যকরভাবে নেওয়া যায়, তার জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিকল্পনা তৈরি হবে। দ্বিতীয়ত: তিনি উল্লেখ করেন যে, এই পরিকল্পনায় নতুন করে সক্রিয়তা ও উৎসাহ যোগাতে হবে, কারণ বর্তমানে অর্থের অভাব রয়েছে।
সংস্থাগুলোর আরও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তহবিল সংগ্রহের প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে। কারণ রোহিঙ্গাদের জন্য কার্যকর সাহায্য ও সহায়তা অব্যাহত রাখতে তহবিলের অভাব দূর করতে হবে। বিশ্বজনীন সমর্থন ও অর্থায়ন বাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক কার্যক্রম বাড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা ও অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আন্তরিক সহায়তা দিয়ে এই অপরাধের উপযুক্ত বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এতে রোহিঙ্গাদের ন্যায্য ন্যায়বিচার ও স্বীকৃতি মিলবে। এবং তিনি যোগ করেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে চলমান নির্যাতন, গণহত্যা ও মানবাধিকার লংঘনের বিচারের প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। এই বিচারে আন্তর্জাতিক সক্রিয় সহায়তা ও চাপ বাড়ানো উচিত। এই উপায়ে, ন্যায়বিচার ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তির ভিত্তি স্থাপন সম্ভব হবে।
মূল কথা হলো- বিশ্ব দরবারে ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলেছেন, তাদের উচিত একটি দ্রুত ও সম্মিলিত সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়া, যেখানে জাতিসংঘের সম্মেলন, তহবিল সংগ্রহ, বিচারের ব্যবস্থা ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই সংকটের সমাধানে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, সমন্বিত উদ্যোগ ও রাজনৈতিক সহায়তা অপরিহার্য। সাথে, গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের যথাযথ বিচার কার্যক্রম চালানোও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের মতন চিন্তাবিদরা বলছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান ঐখানে রয়েছে যেখানে রোহিঙ্গারা নিরাপদে, সম্মানের সাথে স্বদেশে ফিরে যাবে। এটি একটি সময়ের দাবি, যা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, রাজনৈতিক সমঝোতা এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে সম্ভব। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশের জন্যেই এই বিষয়ে সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্যোগ দরকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে নানা সময় বিভিন্ন মতামত ও ভাবনা প্রকাশ করেছেন। তাঁর মূল পয়েন্টগুলো সাধারণত মানবিক জীবনযাত্রা, আন্তর্জাতিক সমঝোতা এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের ওপর কেন্দ্রীভূত।
বাস্তবতার প্রসঙ্গে, প্রধান উপদেষ্টার কথার সূত্র ধরে বলতে হয়, যাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি তাদের আমরা ঘৃণা করতে পারি না। পবিত্র বাইবেলে বলা হয়েছে, ‘যাকে তুমি ভালোবাস তাকে তুমি ঘৃণা করতে পারো না।’ এই উক্তিটি মানবিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেখানে ভালোবাসার মানে হলো সহনশীলতা, করুণা ও ক্ষমার মনোভাব। রোহিঙ্গাদের নিয়ে কখনো বিরূপ মনোভাব পোষণ করা যাবে না। শান্তির কপোত স্কন্ধে নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসও সেই কথাই তাঁর মতামতে প্রকাশ করেছেন।
লেখক : অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.