মো. আবদুর রহমান:
কেয়ামত শব্দের অর্থ উঠে দাঁড়ানো। পরিভাষায় কেয়ামত হলো, মহান আল্লাহর সব সৃষ্টির ধ্বংস শেষে বিচার দিবস। ইসলামি আকিদা অনুসারে ফেরেশতা ইসরাফিল (আ.) শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়ার মাধ্যমে কেয়ামত শুরু হবে। সেদিন মহান আল্লাহ এই বিশ্বজগৎ এবং এর সবকিছু ধ্বংস করে দেবেন। একেই বলে কেয়ামত। কেয়ামত দিবসে বিশেষ সাত শ্রেণির মানুষ ছাড়া সবার অবস্থা হবে ভয়াবহ। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে, সেই দিনটি হবে অনেক কঠিন দিন।’ (সুরা মুদ্দাসসির ৮-৯)
হাশরের ময়দানে মানুষ সীমাহীন কষ্টে নিপতিত হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ ঘামতে থাকবে। এমনকি তাদের ঘাম জমিনের সত্তর হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে যাবে। এই ঘাম তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছে তাদের লাগামে পরিণত হবে। (সহিহ বুখারি) হজরত মিকদাদ বিন আসওয়াদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন সূর্যকে সৃষ্টিকুলের অতি নিকটবর্তী করে দেওয়া হবে। এমনকি তা প্রায় এক মাইলের ব্যবধানে থাকবে। তখন মানুষ সূর্যের তাপে আপন আপন আমল অনুপাতে ঘামের মধ্যে নিমজ্জিত হবে। কারও ঘাম হবে টাখনু পর্যন্ত, কারও হাঁটু পর্যন্ত, কারও কোমর পর্যন্ত, আর কারও জন্য এ ঘাম মুখের লাগাম পর্যন্ত হয়ে যাবে। এই কথা বলে হজরত রাসুল (সা.) তার মুখের দিকে হাত দ্বারা ইঙ্গিত করলেন। (সহিহ মুসলিম)
এই হাদিস দুটো দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কেয়ামতের দিন সূর্যকে পুনরায় মানুষের কাছে নিয়ে আসা হবে। সূর্যের তাপে মানুষের গায়ের ঘাম মাটিতে গড়িয়ে পড়বে। মানুষ তার পাপ অনুসারে ঘামের মধ্যে নিমজ্জিত হবে। যারা সবচেয়ে বেশি পাপী তাদের ঘামে তারা হাবুডুবু খাবে। তাদের ঘাম লাগামের মতো মুখে ঢুকে যাবে।
কেয়ামতের দিন হবে মানবজাতির জন্য সর্বাপেক্ষা কঠিন সময়। আর সেদিন হাশরের ময়দান হবে সর্বাপেক্ষা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার স্থান। মহান আল্লাহ কেয়ামত দিবসকে অত্যন্ত কঠিন ও সংকটময় বলে উল্লেখ করেছেন। কবর থেকে বের হওয়ার পর থেকে বিচারকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিরাজমান থাকবে এই মহাদিবস। এই দিনটি হবে অতিদীর্ঘ। দুনিয়ার হিসেবে এই দিনটিকে কোরআনে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কাফের, মুশরেক, মুনাফেক, অবাধ্য, বিভ্রান্ত ও পাপী মানুষের জন্য এ সময়টি হবে অতি কষ্টকর, যন্ত্রণাদায়ক ও হতাশায় পরিপূর্ণ। এ দীর্ঘ সময় তাকে হাশরের মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে তার কৃতকর্মের হিসাব-নিকাশ এবং মহান আল্লাহর চূড়ান্ত ফয়সালার অপেক্ষায়। কেয়ামত বা হাশরের ময়দানে মানুষের পায়ের নিচে থাকবে তাম্র মিশ্রিত মাটি, আর মাথার ওপরে অতি সন্নিকটে থাকবে আবরণহীন উত্তপ্ত সূর্য। এতে তামাটে ভূপৃষ্ঠ প্রচণ্ডভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। ভয়াবহ গরমে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে। মানুষ দিশেহারা হয়ে এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করতে থাকবে। এ সময় বসা, শোয়া বা বিশ্রাম নেওয়ার কোনোই অবকাশ থাকবে না। থাকবে শুধু হাহুতাশ আর ভীত সন্ত্রস্ততা।
তবে হাশরের ময়দানে মহান আল্লাহর অনুগত ও সৎকর্মশীল প্রকৃত মুমিন ব্যক্তিদের অবস্থা ততটা বিপজ্জনক হবে না। মুমিন ও মুত্তাকিদের বিভিন্ন নেক আমল সেদিন তাদের মাথার ওপর ছায়া বিস্তার করে কঠিন তাপদাহ থেকে তাদের রক্ষা করবে। তাদের কাছে হিসাব-নিকাশের সময় খুব কম বলে মনে হবে। তাদের হিসাব খুব সহজেই হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, মুমিনের কাছে কেয়ামতের দিনটি জোহর ও আসর নামাজের মধ্যবর্তী সময়টুকুর মতো মনে হবে। (মুসতাদরাকে হাকিম)
হজরত রাসুল (সা.) আমাদের এমন কিছু মানুষ সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়েছেন, যাদের মহান আল্লাহ কেয়ামতের দিন আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, যেদিন মহান আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন মহান আল্লাহ সাত শ্রেণির মানুষকে সেই ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। তারা হলেন : এক. ন্যায়পরায়ণ শাসক। দুই. যে যুবক মহান আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থেকে বড় হয়েছে। তিন. সেই ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। অর্থাৎ যিনি নিয়মিত জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। চার. এমন দুই ব্যক্তি, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে একে অপরকে ভালোবাসে। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই একত্র ও বিচ্ছিন্ন হয়। পাঁচ. এমন ব্যক্তি যাকে কোনো সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (ব্যভিচারের জন্য) আহ্বান জানায়, তখন সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। ছয়. যে ব্যক্তি এতটা গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত যা দান করে তা তার বাম হাতও জানতে পারে না। সাত. যে ব্যক্তি নির্জনে মহান আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আল্লাহভীতির কারণে তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে। (সহিহ বুখারি)
মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে কেয়ামতের ভয়াবহতা থেকে হেফাজত করুন। আমাদের সবাইকে আল্লাহর দেওয়া কিতাব কোরআনের বিধান এবং হজরত রাসুল (সা.)-এর আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন গড়ার তওফিক দান করুন। আমিন।
ভয়েস/আআ
উপদেষ্টা সম্পাদক : আবু তাহের
প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক : আবদুল আজিজ
সম্পাদক: বিশ্বজিত সেন
অফিস: কক্সবাজার প্রেসক্লাব ভবন (৩য় তলা), শহীদ সরণি (সার্কিট হাউজ রোড), কক্সবাজার।
ফোন: ০১৮১৮-৭৬৬৮৫৫, ০১৫৫৮-৫৭৮৫২৩ ইমেইল : news.coxsbazarvoice@gmail.com
Copyright © 2025 Coxsbazar Voice. All rights reserved.